বরাকে আতঙ্ক ছড়ানো জঙ্গি সংগঠন ব্রু লিবারেশন আর্মির সাধারণ সম্পাদককে গ্রেফতার করল করিমগঞ্জ পুলিশ। আজ একটি মামলায় শিলচরের আদালতে হাজিরা দেওয়ার কথা ছিল জঙ্গি নেতা অর্ণজয় রিয়াং ওরফে লালথা জুয়ালার। তার আগেই বলই রিয়াং নামে এক শাগরেদ-সহ অর্ণজয়কে ধরে ফেলেন পুলিশকর্মীরা। অভিযানের নেতৃত্ব দেন করিমগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নবীন সিংহ। তাঁর সঙ্গে ছিল রাতাবাড়ি থানার পুলিশ।
ওই জঙ্গি সংগঠনটি করিমগঞ্জ-হাইলাকান্দিতে ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল। পুলিশ সূত্রে খবর, অর্ণজয়ের বাড়ি হাইলাকান্দি জেলায় হলেও, বর্তমানে উত্তর ত্রিপুরার আশাপাড়াতে থাকত সে। করিমগঞ্জ পুলিশ আশাপাড়াতেও অভিযান চালিয়েছিল। কিন্তু তাকে ধরতে পারেনি। পুলিশ জানায়, ওই জঙ্গি সংগঠনের নেতৃত্ব আগে ছিল পঞ্চুরাম রিয়াংয়ের হাতে। ২০০৮ সালে পঞ্চুরাম পুলিশের কাছে আত্মসমর্পণ করেন। তারপর যোগ দেন কংগ্রেসে। তার জেরে জঙ্গি সংগঠনটি দু’ভাগে বিভক্ত হয়ে যায়। ২০১২ সালে করিমগঞ্জ এবং হাইলাকান্দি জেলার প্রত্যন্ত এলাকায় জঙ্গি সংগঠনটি ফের মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। সে সময় তার নামকরণ হয় ইউডিএলএ (উদলা)। রাজেশ চর্কির নেতৃত্বে ইউডিএলএ (আর) এবং ধন্যরাম রিয়াংয়ের নেতৃত্বে ইউডিএলএ (ও) সংগঠন তোলাবাজি, অপহরণ চালাতে থাকে। করিমগঞ্জ, হাইলাকান্দি থেকে কাউকে অপহরণ করেই জঙ্গিরা পাহাড়ি রাস্তা দিয়ে মিজোরাম বা ত্রিপুরায় চলে যেত। ২০১৪ সালে উদলা (আর) প্রধান রাজেশ চর্কি এবং সাধারণ সম্পাদক অর্ণজয় রিয়াংকে কাছাড় জেলার ধলাই এলাকায় গ্রেফতার করা হয়। তাদের কাছ থেকে চারটি এ কে সিরিজের আগ্নেয়াস্ত্র, তিনটি পিস্তল উদ্ধার করেছিল পুলিশ। দু’জনই কাছাড়ের সংশোধনাগারে বন্দি ছিল। জেল থেকে বেরনোর পর সংগঠনটির নাম পরিবর্তন করে রাখা হয় ব্রু লিবারেশন আর্মি।
সম্প্রতি করিমগঞ্জ পুলিশ গোপন সূত্রে খবর পেয়েছিল, সংগঠনটির সাধারণ সম্পাদক অর্ণজয় রিয়াং আদালতে হাজিরা দেবে। সেই অনুসারে গত কাল করিমগঞ্জ পুলিশের অতিরিক্ত অধীক্ষক নবীন সিংহ পুলিশ-বাহিনী নিয়ে সাদা পোষাকে আদালতের বাইরে ওৎ পেতেছিলেন। তাঁদের জালে ধরা পড়ে অর্ণজয় ও বলইরাম রিয়াং। বলইরামও সংগঠনটির অন্যতম নেতা। শিলচরে গ্রেফতার করার পর সঙ্গে সঙ্গেই তাদের করিমগঞ্জে নিয়ে আসা হয়। পুলিশের দাবি, করিমগঞ্জে একের পর এক অপহরণ-কাণ্ডের অধিকাংশের নেপথ্যেই ছিল অর্ণজয়। পুলিশ তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করছে। জেলার পুলিশ সুপার প্রদীপরঞ্জন কর জানিয়েছেন, ওই দু’জন গ্রেফতার হওয়ায় করিমগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকায় জঙ্গি তাণ্ডব অনেকটা কমতে পারে।