ঘরে ফিরতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না ঘরছাড়া ব্রু শরণার্থীরা!
উত্তর ত্রিপুরার চারটি শরণার্থী শিবির— কাসকাউ, খাকচাংপাড়া, হামলাপাড়া, আসাপাড়ার পর নইসিংপাড়াতেও একই পরিস্থিতি। ব্রু-দের ঘরে ফেরাতে ফের পুনর্বাসন প্রক্রিয়া শুরু করেছে মিজোরাম সরকার। কিন্তু, পোরাতি নামে এক মহিলা ছাড়া ৫টি ‘ভেরিফিকেশন’ শিবিরে এক জন শরণার্থীও ঘরে ফেরার আবেদন নিয়ে হাজির হননি।
মিজো বনাম ব্রু বা রিয়াংদের মধ্যে গোষ্ঠী সংঘর্ষের জেরে ১৯৯৭ সালে প্রায় ৩৪ হাজার ব্রু শরণার্থী মিজোরাম ছেড়ে ত্রিপুরায় পালান। ২০১০ সাল থেকে ছ’দফায় শরণার্থীদের ঘরে ফেরানোর কাজ চলে। এখনও পর্যন্ত মাত্র তিন হাজার শরণার্থী মিজোরাম ফিরেছেন। কিন্তু, সিংহভাগ ব্রু, সরকারের সব ধরনের আশ্বাসের পরেও ঘরে ফিরতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না। অভিযোগ, শরণার্থী শিবিরগুলি থেকে ব্রু জঙ্গি সংগঠনে যুবকদের নিয়োগ বাড়ছে। ছড়াচ্ছে অপরাধ।
প্রতি বার নির্বাচনে ব্রু শরণার্থীদের জন্য পোস্টাল ব্যালটের ব্যবস্থা করা হয়। কিন্তু, স্বেচ্ছায় ঘরছাড়া ব্রুদের আর সেই সুযোগ দিতে চায় না মিজোরামের রাজনৈতিক দল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলি। রাজ্য সরকারও এ নিয়ে বারবার আপত্তি জানিয়েছে। অবশেষে এ বছর কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক, মিজোরাম সরকার ও ত্রিপুরা সরকারের মধ্যে ব্রু শরণার্থী প্রত্যার্পণ চুক্তি হয়। সুপ্রিম কোর্টও সেই চুক্তি মেনে নিয়েছে। তাতে বলা হয়েছে, সপ্তম দফায় শরণার্থীদের ঘরে ফেরানোর চেষ্টা করা হবে। এটাই হবে শেষ বার। এ বারও যাঁরা মিজোরামে ফিরবেন না, তাঁদের নাম মিজোরামের ভোটার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হবে। শরণার্থী শিবিরগুলির মধ্যে সব চেয়ে বড় শিবির নইসিংহপাড়া। সেখানে ২ হাজার ৪৬৯টি ব্রু পরিবারের বাস। নইসিংহপাড়া শরণার্থী শিবির থেকে শরণার্থীদের মিজোরাম ফেরানোর জন্য বসেছে ভেরিফিকেশন ক্যাম্প। মিজোরামে ফিরতে চাওয়া ব্যক্তি বা পরিবারগুলি সত্যিই মিজোরামের আদি বাসিন্দা কি না, তা নির্দিষ্ট করার জন্যই ওই শিবিরগুলি বসানো হয়েছে। মামিত, কোলাশিব, লুংলে জেলার সরকারি কর্তারা দিনের পর দিন সেখানে শিবির করে রয়েছেন। কিন্তু, ঘরে ফেরার লোক কোথায়! মিজোরাম সরকার পুনর্বাসন প্যাকেজ হিসেবে পরিবার পিছু ৮৫ হাজার টাকা ও ছ’মাসের জন্য খাদ্য ভাতা দেবে বলেছিল। কিন্তু, শরণার্থীরা নতুন দাবি তুলছেন। শরণার্থীদের নেতারা এখন দাবি করছেন, পরিবার পিছু দেড় লক্ষ টাকা দিতে হবে। দু’বছরের জন্য বিনামূল্যে খাবারের বন্দোবস্ত করতে হবে। প্রতি পরিবারকে দিতে হবে চাষের জমি। গ্রামে মোতায়েন করতে হবে আধা সেনা। ঘরে ফেরার জন্য আর কেউ হাজির না হলে বিষয়টি কেন্দ্রকে জানাবে মিজোরাম সরকার। মিজোরামের অতিরিক্ত মুখ্য সচিব লালবিয়াকজামা জানান, বিষয়টি তদারক করছে সুপ্রিম কোর্ট। পরের সিদ্ধান্ত সু্প্রিম কোর্ট ও কেন্দ্রের উপরই ছেড়ে দেওয়া হবে। সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ মেনে, দু’টি পর্যায়ে শরণার্থী চিহ্নিতকরণের কাজ চলছে। প্রথমে ভোটার তালিকায় নাম থাকা শরণার্থীদের বের করা হচ্ছে। তারপর, তালিকায় না থাকা শরণার্থীদের আদি সাকিন নির্দিষ্ট করা হচ্ছে। যাঁরা ফিরবেন না, তাঁদের ত্রিপুরার বাসিন্দা বলে চিহ্নিত করা হবে।