লামডিং-শিলচর ব্রডগেজ লাইন তৈরি হলেও, কাছাড় কাগজ-কলের ভিতরে গেজ পরিবর্তনের খরচ কে দেবে— তা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে।
ওই লাইনে শুধু কাগজ-কলের সামগ্রী বহন করা হবে বলে টাকা দিতে নারাজ রেল কর্তৃপক্ষ। কাগজ-কলের দাবি, ব্যবসায়িক স্বার্থে রেলেরই ওই লাইন তৈরি করে দেওয়া উচিত। এ নিয়ে নয়াদিল্লিতে কেন্দ্রীয় দুই মন্ত্রীর আলোচনা চলছে।
রাষ্ট্রায়ত্ত ‘হিন্দুস্তান পেপার কর্পোরেশন’ বরাক উপত্যকায় উৎপাদন শুরু করেছিল ১৯৮৮ সালে। ওই সময় কাগজ-কলের গুদাম পর্যন্ত মিটারগেজ রেল লাইন তৈরি করা হয়। কাঁচামাল, উৎপাদিত সামগ্রী পরিবহণের জন্য কাগজ-কলের মধ্যে ট্রেন ঢুকত। তবে মিটারগেজ লাইন বেশি ব্যবহার করা হতো না। কারণ লামডিং স্টেশনে কাঁচামাল বা উৎপাদিত পণ্য ওঠানামার ঝামেলা এড়াতে কর্তৃপক্ষ ৮০ শতাংশ সামগ্রী সড়কপথেই পাঠাতেন। সংস্থা সূত্রে খবর, তখন রেল বছরে গড়ে প্রায় ৭ কোটি ১৯ লক্ষ টাকা করে পণ্যমাসুল পেয়েছে। গত মাসে এই অঞ্চল ব্রডগেজ লাইনে জুড়েছে। শুরু হয় মালগাড়ির যাতায়াত। কিন্তু কাগজ-কলের মিটারগেজ লাইনে তা ঢুকতে পারেনি।
সরকারি সূত্রে জানা গিয়েছে, রেলের গেজ পরিবর্তনে আপত্তি নেই। তবে কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, টাকা দিতে হবে কাগজ-কলকেই। পরিকল্পনা ও খরচের হিসেব ঠিক করতে কাগজ-কল কর্তৃপক্ষ ২৪ লক্ষ টাকা দিয়েছিল। লাইন পরির্বতনের জন্য রেল ১৩ কোটি ৪৮ লক্ষ টাকা চায়। কাগজ-কলের কর্তৃপক্ষ রেলের এই দাবিকে অযৌক্তিক বলেছে। এ নিয়ে কেন্দ্রীয় ভারী শিল্পমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চায় কাছাড় কাগজ-কল কর্তৃপক্ষ।
প্রশাসনিক সূত্রে খবর, বিষয়টি নিয়ে রেলমন্ত্রীর সঙ্গে কথা বলেছেন ভারী শিল্পমন্ত্রী। তিনি রেলমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, ওই কাগজ-কল চত্বরে সাড়ে ৪ কিলোমিটার লাইন বদলাতে হবে। সেটি করলে রেলেরই রাজস্ব বাড়বে।
‘কাছাড় পেপার প্রোজেক্ট ওয়ার্কার্স ইউনিয়ন’-এর তরফেও রেলমন্ত্রীকে স্মারকলিপি পাঠানো হয়েছে। সংগঠনের হিসেবে, কাগজ-কল থেকে রেল মন্ত্রক বছরে ৫৬ কোটি ৪৫ লক্ষ টাকা পণ্যমাসুল পেতে পারে। প্রতি বছর গুজরাত থেকে ওই কাগজ-কলে ১৮ হাজার মেট্রিক টন লবণ আসে। রাজস্থান থেকে আসে ২৮ হাজার মেট্রিক টন এসএস পাউডার ও ২৫ হাজার মেট্রিক টন চুন। ৫০ হাজার মেট্রিক টন কয়লা আসে পশ্চিমবঙ্গ থেকে। এগুলি পরিবহণের জন্য রেল ৩২ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা পাবে। সঙ্গে রয়েছে উৎপাদিত কাগজ বাজারে পাঠানোর মাসুল। ৯০ হাজার মেট্রিক টন কাগজ পরিবহণে রেল পাবে ২৪ কোটি ৩০ লক্ষ টাকা। অর্থাৎ এক বছরের মধ্যেই রেল গেজ পরিবর্তনের খরচের চার গুণ টাকা ফেরত পাবে।
ওই শ্রমিক সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মানবেন্দ্র চক্রবর্তী রেলের একটি বিজ্ঞপ্তির বিষয় উল্লেখ করে রেলমন্ত্রীকে জানিয়েছেন, গেজ পরিবর্তনের মোট খরচের ১৪ শতাংশ যদি দু’বছরের মধ্যে আদায় করা যেতে পারে, তা হলে কোনও প্রতিষ্ঠান চত্বরে রেল নিজের খরচেই গেজ পরিবর্তন করে। কাছাড় কাগজ-কলের ক্ষেত্রে মাসুলের পরিমাণ মোট খরচের ৮০০ শতাংশেরও বেশি।
উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের জনসংযোগ আধিকারিক নৃপেন্দ্র ভট্টাচার্য বলেন, ‘‘রেলের নিয়মে স্পষ্ট বলা রয়েছে, যে অংশ দিয়ে শুধুমাত্র একটি সংস্থার জিনিসপত্র পরিবহণ করা হবে, সেই অংশে লাইন পরিবর্তনের খরচ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে দিতে হবে। বিষয়টি নিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবে।’’