দৃষ্টিহীনদের সুবিধার জন্য এ বার নোটে ব্রেল

নোট হাতে ছুঁয়ে সেটা কত টাকা, সব সময় বুঝতে পারেন না দৃষ্টিহীনরা। দোকান, বাসট্রাম, ব্যাঙ্ক সর্বত্র পরমুখাপেক্ষী হতে হয় তাঁদের। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় বাজেটে সরকার নোটে ব্রেল হরফে টাকার পরিমাণ লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় দৃষ্টিহীন মানুষেরা উচ্ছ্বসিত। তবে একই সমস্যা পয়সার ক্ষেত্রেও হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। পয়সার আকার এখন বদলে যাওয়ায় কোনটা এক টাকার কয়েন, কোনটা দু’টাকার বা আধুলি, তা বেশির ভাগ সময় ছুঁয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন না।

Advertisement

পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায়

কলকাতা শেষ আপডেট: ১১ জুলাই ২০১৪ ০৩:৩৭
Share:

নোট হাতে ছুঁয়ে সেটা কত টাকা, সব সময় বুঝতে পারেন না দৃষ্টিহীনরা। দোকান, বাসট্রাম, ব্যাঙ্ক সর্বত্র পরমুখাপেক্ষী হতে হয় তাঁদের। বৃহস্পতিবার কেন্দ্রীয় বাজেটে সরকার নোটে ব্রেল হরফে টাকার পরিমাণ লিখে দেওয়ার সিদ্ধান্ত ঘোষণা করায় দৃষ্টিহীন মানুষেরা উচ্ছ্বসিত।

Advertisement

তবে একই সমস্যা পয়সার ক্ষেত্রেও হয় বলে জানিয়েছেন তাঁরা। পয়সার আকার এখন বদলে যাওয়ায় কোনটা এক টাকার কয়েন, কোনটা দু’টাকার বা আধুলি, তা বেশির ভাগ সময় ছুঁয়ে তাঁরা বুঝতে পারেন না। পয়সাতেও ব্রেল হরফে পরিমাণ লিখে দিলে একটা বড় সমস্যার সমাধান হত বলে মনে করছেন তাঁরা।

‘ব্লাইন্ড পার্সনস অ্যাসোসিয়েশন অব ওয়েস্ট বেঙ্গল’-এর অন্যতম সদস্য সুকান্তি মজুমদার বলেন, “বাজারে গিয়ে অনেক সময় কত টাকার নোট দিচ্ছি বুঝতে পারি না। তখন দোকানির উপরে নির্ভর করতে হয়। ব্যাঙ্কে কাজের সময় বলা হয়, কাউকে সঙ্গে নিয়ে আসতে হবে। সরকার এই অসুবিধা নিয়ে ভেবেছে বলে ধন্যবাদ। কিন্তু পয়সার ক্ষেত্রে এই নিয়ম করা দরকার।”

Advertisement

বাজেটে নতুন ১৫টি ব্রেল প্রেস তৈরি এবং পুরনো ১০টি ব্রেল প্রেসের আধুনিকীকরণের কথাও বলা হয়েছে। রাজ্যের দৃষ্টিহীন মানুষদের আশা, নতুন ব্রেল প্রেসের তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ থাকবে। কারণ নরেন্দ্রপুর ব্লাইন্ড বয়েজ অ্যাকাডেমিতে কেন্দ্রের সাহায্যপ্রাপ্ত রিজিওনাল ব্রেল প্রেসটি পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতের একমাত্র প্রেস যেখানে দৃষ্টিহীনদের পাঠ্যবই ছাপা হয়। বাকি একটি-দু’টি বেসরকারি ব্রেল প্রেস আছে। সেখানে অল্প সংখ্যক গল্পের বই ছাপা হয়। নরেন্দ্রপুরের দৃষ্টিহীনদের অ্যাকাডেমির অধ্যক্ষ বিশ্বজিৎ ঘোষ জানান, ছাত্রছাত্রী বাড়ছে, সিলেবাস দ্রুত পাল্টাচ্ছে, কিন্তু প্রেস বাড়ছে না বলে সময়মতো পড়ুয়াদের হাতে বই পৌঁছনো যাচ্ছে না। ফলে নতুন ব্রেল প্রেস খুব দরকার। তিনি বলেন, “এই ব্রেল প্রেস চলছে ৪০ বছরের পুরনো পরিকাঠামো নিয়ে। ফলে সরকার আধুনিকীকরণের যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা অত্যন্ত জরুরি।”

প্রতিবন্ধীদের জন্য বাজেটে বিভিন্ন প্রকল্প ঘোষণা করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী অরুণ জেটলি বলেন, প্রতিবন্ধীরা যেন সমাজে সম্মানের সঙ্গে বাঁচতে পারেন, তেমন পরিবেশ তৈরিই সরকারের লক্ষ্য। প্রতিবন্ধীদের বিভিন্ন সহায়ক যন্ত্র ও মেডিক্যাল সামগ্রী কেনার প্রকল্পে বরাদ্দ বাড়ানোর কথাও এ দিন ঘোষণা করা হয়। যা শুনে রাজ্যের প্রতিবন্ধী কমিশনার মিতা বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “এতে মান্ধাতা আমলের মেডিক্যাল সামগ্রী বা যন্ত্রের ভরসায় প্রতিবন্ধীদের বাঁচতে হবে না। আধুনিক সহায়ক যন্ত্র কিনতে সরকার টাকার পরিমাণ বাড়ালে ওঁদের জীবনের মান বাড়বে।”

বাজেটে প্রতিবন্ধীদের জন্য একটি স্পোর্টস সেন্টার ও মানসিক রোগীদের পুনর্বাসন কেন্দ্র তৈরির কথাও বলা হয়েছে। দেশে কোথাও প্রতিবন্ধীদের যাতায়াতের জন্য সুবিধাজনক পরিকাঠামো নেই। ভবিষ্যতে যাতে সেটা করা যায় তার জন্য বাজেটে একাধিক ‘ইনস্টিটিউট ফর ইউনিভার্সাল ইনক্লুসিভ ডিজাইন’ গঠনের কথা ঘোষণা করেছেন কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement