জমি জটে আটকে কেন্দ্র-রাজ্যের স্বপ্নের প্রকল্প ‘ট্রান্স অরুণাচল হাইওয়ে’।
প্রশাসনের বক্তব্য, ওই সীমান্ত সড়ক শুধু অরুণাচলবাসীর উন্নয়নের জন্যই নয়, প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রেও সমান গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেণ রিজিজু, বিআরও ও সেনাবাহিনীর মতে— ২০১৮ সালের মধ্যে ওই সড়কের কাজ শেষ হওয়া অনিশ্চিত। কারণ অধিকাংশ এলাকায় উপজাতিদের আপত্তি ও পরিবেশ মন্ত্রকের ছাড়পত্রের অভাবে রাস্তা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় জমি এখনও পর্যন্ত হাতে আসেনি।
পশ্চিমে তাওয়াং থেকে শুরু করে, ইটানগর থেকে পাসিঘাট, জিরো, রোয়িং, আলোং, বিজয়নগর হয়ে রাজ্যের ১১টি জেলা সদর ছুঁয়ে পূর্ব সীমান্তে কানুবাড়ি পৌঁছবে এই সড়ক। অন্য পাঁচটি জেলা জুড়বে লিঙ্ক রোডে। প্রায় ১ হাজার ৮০০ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই সড়ক প্রকল্প শুধু অত্যন্ত ব্যয়বহুলই নয়, এর নির্মাণকাজ কষ্টসাপেক্ষ। দুর্গম খাড়া পাহাড়, মানুষের অগম্য জঙ্গল, নদীখাত দিয়ে রাস্তা তৈরি করতে হবে। সংযুক্ত হবে ৫২ নম্বর, ১৫৩, ৫২বি ও ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়ক। ৫২ ও ৩৭ নম্বর জাতীয় সড়কের মধ্যে সংযোগহীন ৬০ কিলোমিটার রাস্তাও ওই প্রকল্পে যুক্ত করা হবে।
কিরেণ রিজিজু জানান, প্রকল্পের খরচ প্রায় ৪০ হাজার কোটি টাকায় পৌঁছতে পারে। একটি প্রকল্পে এত টাকা দেওয়া সমস্যার। তাই ধাপে ধাপে টাকা বরাদ্দ করে কাজ চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীকে অনুরোধ করেছেন। প্রাথমিক ভাবে ১০ হাজার কোটির কাজ চলছে।
কিন্তু সেনাবাহিনী ও বর্ডার রোড অর্গানাইজেশনের দাবি, সীমান্ত সড়ক তৈরির ভার বিআরওর হাতে দিলেও জমি অধিগ্রহণ-সহ প্রতি পদক্ষেপে তারা সমস্যার মুখে পড়ছে। বিআরও বা কেন্দ্রীয় প্রতিনিধিদের বসিয়ে রাখছেন রাজ্য সরকারের মন্ত্রী-বিধায়করা। ঠিকার জন্য নেতা-বিধায়কদের চাপ রয়েছে। প্রতিটি গ্রামে সেখানকার উপজাতিদের বিভিন্ন দাবি মেটাতে হচ্ছে। অদক্ষ, স্থানীয় শ্রমিক নিয়োগ করতে হচ্ছে। স্থানীয় সংগঠনগুলিকে চাঁদাও দিতে হচ্ছে। অধিকাংশ এলাকায় অরণ্য। সেখানে বিভিন্ন পশুপাখির আবাস। রাস্তা তৈরি করতে গেলে লক্ষ লক্ষ গাছও কাটা পড়বে। তাই পরিবেশ দফতরের ছাড়পত্র মিলছে না।
রিজিজু জানান, সড়ক প্রকল্পের গুরুত্ব বুঝে পূর্ত, প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র দফতরের সঙ্গে পরিবেশ দফতরের বৈঠক হবে। বুঝতে হবে, পরিবেশ যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমন ওই সব এলাকার বিকাশের জন্য রাস্তাও দরকার। তা প্রয়োজন দেশের নিরাপত্তা ও সামরিক পরিস্থিতির জন্যও। তাই প্রয়োজনে পরিস্থিতি অনুযায়ী নমনীয় হতে হবে।
এ দিকে জমির ব্যবস্থা করার জন্য কেন্দ্রের তরফে রাজ্যের উপরে চাপ বাড়ানো হলেও মুখ্যমন্ত্রী পেমা খাণ্ডু জানান, জমি অধিগ্রহণের জন্য যে ক্ষতিপূরণের হার বেঁধে দেওয়া হয়েছে, গ্রামবাসীরা তা মানছেন না। ইটানগর থেকে জিরো, রাগা ও দাপোরিজোর সড়ক সংযোগ থমকে রয়েছে জমির অভাবে। পেমা বলেন, “কেন্দ্র বার বার জমি চেয়েও না পেয়ে এ বার সড়ক প্রকল্পে বরাদ্দ বাতিলের হুমকি দিয়ে কড়া চিঠি পাঠিয়েছে। রাজ্য সরকার বিষয়টি বিবেচনা করে দ্রুত জমি ছাড়ার জন্য আপাতনি ছাত্র সংগঠনকে অনুরোধ করেছে। তারা পোতিন-পাঙ্গিং সড়ক তৈরি হতেই দিচ্ছে না। সংবেদনশীলতার কথা মাথায় রেখে বলপ্রয়োগ করে সড়ক তৈরির রাস্তায় হাঁটা সম্ভব নয়। ওদের বুঝতে হবে অবাস্তব দাবি আঁকড়ে পড়ে থাকলে সাধারণ মানুষেরই ক্ষতি। সড়ক তৈরি হলে তবেই গ্রামগুলি উন্নত হবে।”
রিজিজুর কথায়, “আমি সব সময় অরুণাচলের উন্নয়নের জন্য সব দফতরকে চাপ দিই। কিন্তু আমাকেও নিয়মের মধ্যে থেকে কাজ করতে হয়। সব প্রকল্পের জন্য সময় বরাদ্দ থাকে। তার মধ্যে কাজ না হলে টাকা ফেরত চলে যাবেই। আশা করি মানুষ বাস্তব পরিস্থিতি বুঝবেন।”
শিলংয়ে চেরি ব্লসম উৎসব। ‘চেরি ব্লসম’ উৎসবে মেতেছে মেঘালয়ের রাজধানী শিলং। শহরের পোলো মাঠে উৎসবের সূচনা করেন মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা, বন ও পরিবেশমন্ত্রী ক্লিমেন্ট মারাক। প্রশাসনিক সূত্রে খবর, মূলত দেশের ভিতরে ও বিদেশে পর্যটনকে উৎসাহ দিতেই এই উৎসব। পরিবেশ সংরক্ষণের ক্ষেত্রে ছোট রাজ্যগুলির মধ্যে সেরার শিরোপা পেয়েছে মেঘালয়। সেই কথা উল্লেখ করে সংরক্ষণের কাজে যুক্ত সরকারি-বেসরকারি সংগঠনকে ধন্যবাদ জানান মুখ্যমন্ত্রী মুকুল সাংমা। উৎসবে খাবার, হস্তশিল্পের পসরা নিয়ে এসেছেন রাজ্যের বিভিন্ন উপজাতির মানুষ। চলছে নাচ-গান।