Bomb Scare

গুয়াহাটির ‘শক্তিশালী বোমা’ আসলে ছিল স্প্রে মেশিন, মুখ পুড়ল পুলিশের

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ। গুয়াহাটি স্টেশনে মেল সার্ভিস প্ল্যাটফর্মে থাকা ঠেলাগাড়িতে একটি ব্যাগ থেকে ঘড়ি চলার শব্দ শুনে রক্ষী বাহিনীর এক জওয়ান রেলপুলিশে খবর দেন। খবর যায় বোমা বিশেষজ্ঞদের কাছেও। স্টেশনের ওই অংশ খালি করে দেওয়া হয়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

গুয়াহাটি শেষ আপডেট: ১৯ অগস্ট ২০১৭ ১৪:৪৩
Share:

এই ঠেলাগাড়ি থেকে উদ্ধার 'বোমা' (চিহ্নিত)। নিজস্ব চিত্র।

ছিল বোমা, হয়ে গেল স্প্রে-মেশিন! এমনই ‘হযবরল’ কাণ্ড ঘটিয়ে, গুয়াহাটি স্টেশনের ‘বোমা’কাণ্ডে মুখ পুড়ল অসম পুলিশের। বোমা ভেবে শুক্রবার উড়িয়ে দেওয়া জিনিসটি যে আদতে সামান্য কৃষি যন্ত্র- তা ধরতেই পারেনি পুলিশ। উল্টে দিনভর তারা কৃতিত্ব নিল, কী ভাবে শক্তিশালী বোমা থেকে বাঁচানো গিয়েছে ট্রেন!

Advertisement

আরও পড়ুন- লাদাখের চিন সীমান্তে ‘কিছু একটা’ ঘটেছিল, মানল দিল্লি

ঘটনার সূত্রপাত শুক্রবার সকাল ১০টা নাগাদ। গুয়াহাটি স্টেশনে মেল সার্ভিস প্ল্যাটফর্মে থাকা ঠেলাগাড়িতে একটি ব্যাগ থেকে ঘড়ি চলার শব্দ শুনে রক্ষী বাহিনীর এক জওয়ান রেলপুলিশে খবর দেন। খবর যায় বোমা বিশেষজ্ঞদের কাছেও। স্টেশনের ওই অংশ খালি করে দেওয়া হয়। আসে রোবট গাড়ি। দিনভর টিভি চ্যানেলে চলে ‘বোমা’ উদ্ধারের লাইভ সম্প্রচার। বিস্তর পরীক্ষার পরে কমিশনার, এডিজিপি-র মতো পুলিশ কর্তারা জানান, ব্যাগে প্রায় ১০ কিলো বিস্ফোরক ঠাসা আইইডি আছে। বলা হয়, সম্ভবত ‘আলফা স্বাধীন’ শিলচরগামী ট্রেনে ওই বোমা রেখে নাশকতার পরিকল্পনা করেছিল। বিস্তর আড়ম্বরে ‘আইইডি’টি রানির জঙ্গলে নিয়ে গিয়ে দূর নিয়ন্ত্রিত ডিটোনেটরের সাহায্যে ফাটিয়ে গর্বের হাসি হাসে পুলিশ।

Advertisement

আরও পড়ুন- ড় নাশকতার ছক, গুয়াহাটি স্টেশনে ১০ কেজির বোমা

কিন্তু রাতেই জানা যায়, বোমা ভেবে যা ফাটানো হয়েছে- তা আদতে চাষে ব্যবহার করার আধুনিক স্প্রেয়িং যন্ত্র মাত্র। ডাক বিভাগ থেকে পুলিশকে জানানো হয়, ওই পার্সেলটি মহারাষ্ট্রের আহমেদনগরের ‘ভেদা এন্টারপ্রাইজ’ শিলচর হয়ে আইজলের ‘ভি এল স্টোর’-এ পাঠানো হচ্ছিল। ৯ থেকে ১৭ অগস্ট পার্সেলটি ডাক বিভাগের রাজ্য সদর দফতর মেঘদূত ভবনেই পড়ে ছিল।

পরে পুলিশ ভুল স্বীকার করে নিলেও প্রশ্ন উঠছে, এত আধুনিক পরিকাঠামো ব্যবহার করার পরে, এত পরীক্ষাতেও কেন চাষের যন্ত্রকে বোমা বলে ভুল করলেন রাজ্যের বোমা বিশেষজ্ঞরা? সংবাদমাধ্যমের সামনে ‘বোমা ফাটিয়ে’ কৃতিত্ব নেওয়া পুলিশের পরিকাঠামো আদপে কতটা সক্ষম?

এরই মধ্যে অসম পুলিশকে আরও বিড়ম্বনায় ফেলে মহারাষ্ট্রের যে সংস্থা ওই স্প্রে মেশিনটি পাঠিয়েছিল, তারা পুলিশের কাছে ক্ষতিপূরণ চেয়েছে। ভেদা এন্টারপ্রাইজ নামে ওই সংস্থার মালিক বিজয় বর্মা জানান, ওই যন্ত্রের দাম ছিল ৩০০০ টাকা। তা কিনতে বিজয়বাবুর খরচ হয়েছে ১৮০০ টাকা। আট কিলো ওজনের যন্ত্রটি জল পাম্প করে ছেটানোর কাজে লাগে। গোটা দেশে এমন অন্তত ৫০০ যন্ত্র বিক্রি করেছেন তিনি। তাঁর মতে, কোনও ভাবে পার্সেলের ভিতরে থাকা অবস্থায় চাপ লেগে যন্ত্র চালু হয়ে গিয়ে এই বিপত্তি। এর আগে একবার দিল্লিতেও এমন ঘটনা ঘটেছিল। কিন্তু দিল্লি পুলিশ তাঁর যন্ত্রে বোমা বেঁধে উড়িয়ে দেয়নি। তাঁর দাবি, জিনিসটির দাম কম হওয়া বড় কথা নয়, তিন হাজার না হয়ে যন্ত্রের দাম তিন লক্ষও হতে পারত। তাই অসম পুলিশের উচিত অন্তত আংশিক ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা। কারণ তাঁকে ফের একটি যন্ত্র মিজোরামের ওই ক্রেতাকে পাঠাতে হবে।
অসম পুলিশের কর্তারা বম্ব ডিসপোজেবেল স্কোয়াডের নিন্দা করে বলেন, জিনিসটি ঠিক কি- তা পরীক্ষা করে নিশ্চিত না হয়েই তা বোমা বলে ঘোষণা করে ও বিস্ফোরণ ঘটিয়ে উড়িয়ে দিয়ে মোটেই পেশাদারিত্বের পরিচয় দেয়নি তারা।
এ দিন গুয়াহাটির পুলিশ কমিশনার হীরেন নাথ বিজয়বাবুকে ফোন করে ক্ষতিপূরণের বিষয়টি বিবেচনা করার আশ্বাস দিয়েছেন।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement