হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আহত চিকিৎসকেরা।
নিখোঁজ শিশুর দেহ উদ্ধার এবং তার দেহ থেকে কিডনি কেটে নেওয়া হয়েছে, এই গুজবের জেরে ধুন্ধুমার ত্রিপুরার সিধাই এলাকায়। মঙ্গলবার রাতে ১১ বছরের শিশুর মৃতদেহ উদ্ধার হওয়ায় এলাকা উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছানোর পর এলাকাবাসী ও পুলিশের মধ্যে খণ্ডযুদ্ধ বাধে| ওই ঘটনায় সিধাই থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক-সহ আরও আহত কয়েকজন পুলিশকর্মী হাসপাতালে চিকিৎসাধীন| এই ঘটনায় এখনও পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি বলে জানিয়েছেন পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল কে ভি সৃজেশ|
পশ্চিম ত্রিপুরা জেলার তারানগর গ্রামের ১১ বছরের পূর্ণ বিশ্বাসকে পাওয়া যাচ্ছিল না| সন্ধ্যার পরে এলাকাবাসী একটি জঙ্গল থেকে তার ক্ষতবিক্ষত দেহ উদ্ধার করে| তার আগেই গুজব ছড়ায় তাকে ছেলেধরা নিয়ে গিয়েছে। তার দেহ থেকে কিডনি কেটে নেওয়া হয়েছে। তার দেহ উদ্ধার হওয়ার পর এলাকাবাসী বিশ্বাস করে ফেলে যে সত্যি সত্যি তার কিডনি তুলে নিয়ে গিয়েছে কেউ| কারণ ওই বালকের কোমরের কাছে একটি অংশ কাটা| তার ঘাড়ের কাছেও আঘাতের চিহ্ন রয়েছে| তার পরই এলাকার মানুষ উত্তেজিত হয়ে পড়েন|
সিধাই থানার আধিকারিক সঞ্জিত সেনের বক্তব্য অনুযায়ী, খবর পেয়ে যখন ঘটনাস্থলে পুলিশ পৌঁছয় তখন এলাকাবাসী তাদের উপর চড়াও হয়। এমনকি, জঙ্গলে গিয়েও আশ্রয় নিতে হয় তাঁদের। পরে অতিরিক্ত পুলিশ বাহিনী গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে। সঞ্জিত সেন-সহ আরও কয়েক জন পুলিশকর্মী আহত হয়েছেন এবং তাঁরা আগরতলা মেডিক্যাল কলেজ ও জি বি পন্থ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন|
আরও পড়ুন: স্কুটি নিয়ে বেপরোয়া রেস, এজেসি বোস রোডে মৃত ২ যুবা
খবর পেয়ে এলাকার বিধায়ক এবং আইন ও শিক্ষা দফতরের মন্ত্রী রতনলাল নাথ গিয়েছিলেন| তিনি হাসপাতালে আহত পুলিশ কর্মীদের দেখতে যান| এর আগে রতনলাল নাথ বলে ছিলেন এটি একটি কিডনি পাচারকারীদের কাজ| ওই চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে যথাযোগ্য শাস্তি দেবে সরকার|
বুধবার সকালে দেহটি ময়নাতদন্ত করার পর পূর্ণের বাবাকে ডাক্তাররা দেখান যে তার দেহের সমস্ত অঙ্গ প্রত্যঙ্গ ঠিক রয়েছে। এ দিন বিধানসভায় মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেব বলেছেন কিডনি চুরি হয়নি পূর্ণের দেহ থেকে।
ত্রিপুরা পুলিশের ইন্সপেক্টর জেনারেল কে ভি সৃজেশ জানিয়েছেন হত্যাকাণ্ডে এখনও কাউকে গ্রেফতার বা আটক করা হয়নি| পুলিশের উপর হামলার জন্যে একজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।| তিনি বলেন একটি বিশেষজ্ঞ কমিটি গঠন করা হয়েছে এই হত্যাকাণ্ডে জড়িতদের গ্রেফতার করার জন্য।
কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক ও মুখপাত্র তাপস দে প্রশ্ন তোলেন, সরকারের একজন দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী কী ভাবে ময়নাতদন্তের রিপোর্ট না দেখেই বলে দিলেন যে বাচ্চাটির কিডনি চুরি করে নিয়ে গিয়েছে? আবার ময়নাতদন্তের পর মুখ্যমন্ত্রী বিধানসভায় বলেন যে কিডনি চুরি হয়নি| ঘটনার গতিপ্রকৃতিতেই স্পষ্ট, মন্ত্রীই গুজব ছড়িয়ে দিচ্ছেন।