প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। ফাইল চিত্র।
নরেন্দ্র মোদী সরকারের বিলগ্নিকরণ ও বেসরকারিকরণ নীতির বিরুদ্ধে এ বার পথে নামতে চলেছেন সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বেসরকারিকরণ ও ঠিকা কর্মীদের পাকা চাকরির দাবিতে ১৭ নভেম্বর দিল্লির যন্তরমন্তরে একটি প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেছে বিএমএস।
গত অর্থবর্ষে রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থার বিলগ্নিকরণ থেকে ১.৭৫ লক্ষ কোটি টাকা আয়ের লক্ষ্য নিয়েছিল সরকার। যদিও তা ছোঁয়া যায়নি। তার পরেও চলতি আর্থিক বছরে সরকারি ব্যাঙ্ক ও রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত থেকে যে সরে আসবে না সরকার, তা গত মাসেই স্পষ্ট করে দেন অর্থমন্ত্রী নির্মলা সীতারামন। বিরোধীরা বিভিন্ন সময়ে সরকারি সম্পত্তি বিক্রি করে রাজকোষ ভরানোর অভিযোগ তুলে সরব হলেও, নিজেদের নীতি থেকে সরে আসার পরিকল্পনা নেই বলে জানিয়েছে কেন্দ্র।
বেকারত্ব বৃদ্ধি, ছাঁটাই, অস্থায়ী নিয়োগ প্রশ্নে দেশের শ্রমিক সমাজে অসন্তোষ তৈরি হওয়ায় বিরোধীদের ধাঁচেই সরকারের নীতি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সরব হল বিএমএস। সংঠনের জাতীয় সচিব গিরীশচন্দ্র আর্য বলেন, “রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থাগুলি দেশের উন্নয়ন ও বেকারত্ব সমস্যার সমাধানের উদ্দেশ্যে গড়ে তোলা হয়েছিল। কিন্তু সেগুলি এখন বিলগ্নিকরণের মাধ্যমে বেসরকারি হাতে তুলে দেওয়া হচ্ছে। পরিবর্তে সরকারের উচিত ওই সংস্থাগুলিতে আর্থিক বিনিয়োগের মাধ্যমে নতুন প্রযুক্তি এনে সেগুলিকে বাঁচিয়ে তোলা।” কেন্দ্রের বর্তমান আর্থিক নীতি হার্ভার্ড শিক্ষিত কিছু অর্থনীতিবিদের কথায় চলছে যা আগামী দিনে দেশের আর্থিক সার্বভৌমত্ব, চাকরির সম্ভাবনা ও দেশের বৃদ্ধির উপরে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়ে রেখেছেন আর্য।
গত কয়েক বছরে বেকারত্ব চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। যার আঁচ এসে পড়েছে বিজেপি ও সঙ্ঘের গায়েও। বিএমএস সূত্রে বলা হয়েছে, রেল, প্রতিরক্ষা, বন্দরের মতো চাকরি সৃষ্টিকারী ক্ষেত্রগুলিতে বাছবিচার না করে বেসরকারিকরণ পরিস্থিতি আরও জটিল করে তুলেছে। কমছে পাকা চাকরির সুযোগ। বাড়ছে চুক্তিনির্ভর অস্থায়ী চাকরি। ১৭ জানুয়ারি সরকারের বেসরকারিকরণ নীতির বিরোধিতা ও পাকা চাকরির দাবিতে যন্তরমন্তরে ওই সভা করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএমএস। যদিও বিরোধী দলগুলির মতে, অধিকাংশ বিরোধী দলই সরকারের হাতে থাকা সম্পদ বেচে দেওয়ার বিরুদ্ধে দীর্ঘ দিনই সরব। কিন্তু তাতে কর্ণপাত করার প্রয়োজন বোধ করেনি মোদী সরকার।
এখন মোদী সরকারের বেসরকারিকরণ নীতির ফলে শাসক শিবিরের শ্রমিক সংগঠনের কর্মীদের চাকরিতে হাত পড়েছে। বাড়ছে ছাঁটাই। ফলে বিএমএসের প্রাসঙ্গিকতা নিয়ে দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। বেকারত্ব, অস্থায়ী নিয়োগ, ছাঁটায়ের ফলে বড় সংখ্যক সদস্য মুখ ফিরিয়েছে বিএমএস থেকে। প্রশ্নের মুখে সঙ্ঘের ভূমিকাও। এই পরিস্থিতিতে এখন সরকারের নীতির বিরুদ্ধে লড়াই ঘোষণা করে কর্মীদের মনোবল ধরে কৌশল নিয়েছে বিএমএস বলেই মনে করছেন রাজনীতির অনেকে।