National

‘রক্তের দালালি’ নিয়ে দিল্লিতে তরজা তুঙ্গে

ষষ্ঠীতে দিনভর ‘রক্তের দালালি’ নিয়ে রক্ত গরম করলেন রাজধানীর নেতারা। কুস্তি শুধু উত্তরপ্রদেশকে নজরে রেখে নয়, সেনা অভিযান নিয়ে লোকসভার ঘুঁটিও সাজাচ্ছে সব পক্ষ।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৭ অক্টোবর ২০১৬ ১৯:৫৮
Share:

ষষ্ঠীতে দিনভর ‘রক্তের দালালি’ নিয়ে রক্ত গরম করলেন রাজধানীর নেতারা। কুস্তি শুধু উত্তরপ্রদেশকে নজরে রেখে নয়, সেনা অভিযান নিয়ে লোকসভার ঘুঁটিও সাজাচ্ছে সব পক্ষ।

Advertisement

তাই কাল যেই না রাহুল গাঁধীর মুখ থেকে ‘জওয়ানদের রক্তের দালালি’ শব্দ বেরিয়েছে, সেটি বাউন্ডারির বাইরে যাওয়ার আগেই লুফে নিতে ঝাঁপালেন অমিত শাহ। কারণ, একটাই। এর আগে সনিয়া গাঁধীর ‘মউত কা সওদাগর’ মন্তব্যের পর নরেন্দ্র মোদী গুজরাতে দুই-তৃতীয়াংশ ভোট নিয়ে জিতে এসেছিলেন। লোকসভার আগে সনিয়া গাঁধীরই ‘জহর কি খেতি’ মন্তব্যের পর বিপুল সংখ্যা নিয়ে দিল্লির কুর্সিতে বসেছেন মোদী। আর এ বারে রাহুলের ‘রক্তের দালালি’ হুঙ্কারকে লোকসভা পর্যন্ত জিইয়ে রেখে ফের ক্ষমতায় ফিরে আসার সুযোগ দেখছে মোদী-শাহ জুটি। রাহুলের পক্ষে সাফাই দিয়ে কপিল সিব্বল আজ যতই বোঝানোর চেষ্টা করুন, ‘‘শব্দ নয়, রাহুলের ভাবনা বুঝুন।’’ নাছোড়বান্দা বিজেপি আরও বেশি আঁকড়ে রাখতে চাইছে ‘রক্তের দালালি’ মন্তব্য।

আর একে অপরের ‘সার্জিক্যাল স্ট্রাইক’ করতে গিয়ে বিজেপি ও কংগ্রেস উভয় পক্ষই নামিয়ে আনল রাজনীতির মান। আর এই রাজনীতির তরজায় আসলে হারিয়ে গেল সেনার কৃতিত্বটাই।

Advertisement

অমিত শাহ সাংবাদিক সম্মেলনে রাহুলকে ঠুকে বললেন, ‘‘দালালি শব্দটি রাহুল গাঁধীর প্রিয় হতে পারে। কাছ থেকে বফর্স থেকে কয়লা, টুজির দালালি দেখেছেন। কিন্তু এই বড় বড় বিষয়ে মাথা না ঘামিয়ে তিনি বরং আলুর কারখানায় মনোযোগ দিন। রাহুলের গোড়ায় গলদ।’’ ক’দিন আগে উত্তরপ্রদেশের সফরে রাহুল ‘আলুর কারখানা’র কথা বলে খোরাক হয়েছিলেন। অমিত শাহ সনিয়া গাঁধীকেও কটাক্ষ করে বললেন, ‘‘নরেন্দ্র মোদীর স্বাস্থ্য তো ভালই আছে, তিনি দশমীতে লখনউ যেতেই পারেন।’’ আর তার পাল্টা জবাব দিতে কংগ্রেসের কপিল সিব্বল বললেন, ‘‘জেল খাটা, হত্যাকারী, নির্বাসনে যাওয়া ব্যক্তির থেকে দেশপ্রেম শিখতে হবে? জইশ-ই-মহম্মদ তো বিজেপির তৈরি!’’ তার জবাব দিতে আরও একটি সাংবাদিক সম্মেলনে বিজেপির রবিশঙ্কর প্রসাদ ফোঁস করে বললেন, ‘‘অমিত শাহের বিরুদ্ধে একটিও মামলা নেই। চার্জ গঠনই হয়নি। কংগ্রেস কী ভুলে গেল, ধোকাদারি মামলায় সনিয়া-রাহুল এখন জামিনে?’’

‘দালালি’ শব্দ বুমেরাং হচ্ছে দেখেই আজ অসুস্থ জয়ললিতাকে দেখতে যাওয়ার আগে রাহুল টুইট করে স্পষ্ট করেন, তিনি সেনার পাশে আছেন। কিন্তু সেনার কৃতিত্ব নিয়ে রাজনীতি, পোস্টার, প্রচারের পক্ষে নন। বিজেপির তাতে কী এসে গেল? কাল প্রতিরক্ষামন্ত্রী বিজেপির মঞ্চে গিয়ে যে ভাবে সেনা অভিযানের উৎসব পালন করেছেন, তখনই স্পষ্ট হয়েছে অমিত শাহের দল এটি নিয়ে রাজনীতি করবেই। আজ সেটাই বুক ঠুকে অমিত শাহ জানিয়ে দিলেন, ‘‘সেনার সাফল্য ও প্রধানমন্ত্রীর দৃঢ় রাজনৈতিক ইচ্ছাশক্তি নিচু তলা পর্যন্ত প্রচার করা হবেই। সেনা অভিযান নিয়ে সকলের গর্ব হচ্ছে। কংগ্রেসের হচ্ছে না কেন?’’ অমিত শাহ বুঝিয়ে দেন, ৭১-এর যুদ্ধের পর কংগ্রেস নেতারা কৃতিত্ব নিতে পারলে, এখন নরেন্দ্র মোদীর নিতে আপত্তি কোথায়?

বার্তা স্পষ্ট। বিজেপি সেনা অভিযানের পাশাপাশি নরেন্দ্র মোদীর কৃতিত্বকেও ঢাকঢোল পিটিয়ে প্রচার করবে। সিব্বল আজ বোঝানোর চেষ্টা করেন, ২০১৩ সালে নির্বাচন কমিশন কোনও সেনার ছবি, নাম নিয়ে রাজনৈতিক প্রচার বন্ধের নির্দেশ দিয়েছিল। তাতেও শিক্ষা হয়নি বিজেপির। আর বিজেপির রবিশঙ্করের বক্তব্য, লোকসভায় ৪৪টি আসনে নেমে এসেও কংগ্রেসের শিক্ষা হয়নি। এ বারে ২৪-এ নেমে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছেন রাহুল গাঁধী।

আরও পড়ুন- সমস্ত সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছেন রাহুল: প্রত্যাঘাতে বিজেপি

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement