হরিয়ানায় আশা নেই বললেই চলে। তবে শিবসেনার সঙ্গে জোট ভেঙে যাওয়া সত্ত্বেও মহারাষ্ট্রে সরকার গড়ার স্বপ্নে বুঁদ বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব। জোট না করে একক ভাবে সরকার গড়া যাবে কি না তা নিয়ে কিছুটা ধোঁয়াশা থাকলেও মহারাষ্ট্রের সম্ভাব্য মুখ্যমন্ত্রী কে হবেন, তা নিয়েই জোরদার চর্চা চলছে দলে। প্রয়াত প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী গোপীনাথ মুন্ডের অনুগামীরা চাইছেন তাঁর মেয়ে পঙ্কজাকে। পঙ্কজাও নিজেও রাখঢাক না করে বলছেন, বাবার উত্তরসূরি হিসেবে তিনিই মুখ্যমন্ত্রী পদের দাবিদার। যদিও দলীয় সূত্রে ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, মহারাষ্ট্রের জন্য অন্য পরিকল্পনা রয়েছে বিজেপি নেতৃত্ব তথা নরেন্দ্র মোদীর। তাঁদের পছন্দ রাজ্যের বিজেপি সভাপতি দেবেন্দ্র ফড়নবিশ। বিজেপি সূত্রে এমন আভাসও মিলছে যে, সঙ্ঘ-ঘনিষ্ঠ ওই ব্রাহ্মণ নেতার নামে প্রাথমিক ভাবে সম্মতিও জানান নরেন্দ্র মোদী ও অমিত শাহ।
বুধবার ওই দুই রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। আজই ছিল প্রচারের শেষ দিন। বিজেপি মনে করছে, হরিয়ানায় তাদের পক্ষে সরকার গড়া কার্যত অসম্ভব। সেখানে সরকার গড়ার দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে ওমপ্রকাশ চৌটালার ইন্ডিয়ান ন্যাশনাল লোকদল। দিল্লির লাগোয়া এই রাজ্যে আজ পর্যন্ত সরকার গড়তে পারেনি বিজেপি। এ বারেও শিকে ছিঁড়বে এমন আশা করছে না দল। ২৫ শতাংশ আসন জুটলেই দল সন্তুষ্ট হবে বলে মনে করছেন বিজেপি নেতারা।
হরিয়ানায় হাল ছাড়লেও বিজেপির আশা মরাঠা-ভূমি। তবে দলের সমীক্ষা বলছে, শিবসেনার সঙ্গে জোট না হলেও শেষ পর্যন্ত সরকার গড়ার মতো আসন থাকবে বিজেপির ঝুলিতে। বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব এখন মুখ্যমন্ত্রী প্রশ্নে দলীয় কোন্দল এড়াতে তৎপর। নিতিন গডকড়ী বা প্রকাশ জাভড়েকরের মতো বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতারা প্রথমে মুখ্যমন্ত্রিত্বের দৌড়ে থাকলেও বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব স্পষ্ট করে দিয়েছেন, দিল্লি থেকে অন্তত কাউকে রাজ্যের মাথায় চাপিয়ে দেওয়া হবে না। গোপীনাথের কন্যা পঙ্কজা নিজের কথা ভেবে রাখলেও মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে প্রাথমিক ভাবে রাজ্যের দলীয় সভাপতি দেবেন্দ্র ফড়নবিশের নামেই সবুজ সঙ্কেত দিয়েছেন মোদী-অমিত জুটি। বছর পঁয়তাল্লিশের দেবেন্দ্রের উপরেই ভরসা রাখছেন দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব।
কে এই দেবেন্দ্র ফড়নবিশ? সঙ্ঘ পরিবারের সদর দফতর নাগপুরের বাসিন্দা দেবেন্দ্র। তিন বারের স্থানীয় বিধায়ক। দেবেন্দ্রর বাবা গঙ্গাধররাও এক সময় সঙ্ঘের সক্রিয় নেতা ছিলেন। তাঁর প্রভাবেই ছোট বয়সে সঙ্ঘ পরিবারে যোগ দেন দেবেন্দ্র। কলেজ জীবনে ছিলেন অখিলভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদের সক্রিয় সদস্য। একুশ বছর বয়সে নাগপুর পুরভার কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। রাজনীতির সেই শুরু। নাগপুরের মেয়রও হয়েছেন দু’বার।
বিজেপি সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে দেবেন্দ্রকে বেছে রাখার পিছনে সক্রিয় ভূমিকা রয়েছে অরুণ জেটলির। বিজেপির এক নেতার কথায়, “অসুস্থতার জন্য জেটলি দুই রাজ্যে ভোট প্রচারে যেতে পারেননি। কিন্তু এখনও দলে কৌশল রচনার নেপথ্য কারিগর হিসেবে জেটলির ভূমিকা অনস্বীকার্য।” দিন কয়েক আগে রাত এগারোটায় দিল্লির এক হাসপাতালে জেটলির সঙ্গে দেখা করতে যান। উদ্দেশ্য মহারাষ্ট্র নিয়ে আলোচনা। ওই বৈঠকেই মুখ্যমন্ত্রী হিসেবে দেবেন্দ্রর নাম উঠে আসে। এর পর গত সপ্তাহে মোদী নাগপুরে গেলে সেখানে তিনি বৈঠক করেন দেবেন্দ্রর সঙ্গে। বিজেপি সূত্রের খবর, তখনই দেবেন্দ্রকে দলের পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন মোদী।
বিজেপি সূত্র বলছে, রাজনৈতিক কারণেই মোদী এমন কাউকে মুখ্যমন্ত্রী পদে চান, যিনি তাঁর উপর সম্পূর্ণ নির্ভরশীল হবেন। রাজ্য রাজনীতিতে প্রয়াত গোপীনাথ মুন্ডের অনুগামীদের প্রভাবের কারণে রাজনীতিতে নবীন পঙ্কজা তাঁর প্রথম পছন্দ নন মুখ্যমন্ত্রীর পদে। আবার গডকড়ীর মতো পোড় খাওয়া নেতা মুখ্যমন্ত্রী হলেও মোদীর সেই রণকৌশল বাস্তবায়িত হওয়া সম্ভব নয়। তাঁর ভাবমূর্তিও পরিচ্ছন্ন নয়। স্বজনপোষণের অভিযোগে দলের সভাপতির পদ ছাড়তে হয় তাঁকে। স্থানীয় নেতা একনাথ খাড়সে বা বিনোদ তাওড়ের মতো বর্ষীয়ান নেতারা প্রথমে দৌড়ে থাকলেও মোদী-অমিত শাহরা চান না তাঁদেরও। দলের বক্তব্য, ওবিসি নেতা খাড়সে দীর্ঘদিন অসুস্থ। পাঁচ বারের বিধান পরিষদ সদস্য তাওড়ে বিধানসভা নির্বাচনের লড়াইয়ে নেমেছেন এই প্রথম বার। সে তুলনায় দেবেন্দ্র তিন বারের বিধায়ক। ভাবমূর্তি সৎ। রয়েছে সঙ্ঘ পরিবারের সমর্থনও। উপরন্তু তিনি ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি।
মরাঠা রাজনীতিতে দীর্ঘদিন ধরেই কর্তৃত্ব করে এসেছেন ওবিসি এবং মরাঠা নেতারা। দেবেন্দ্র মুখ্যমন্ত্রী হলে ভবিষ্যতে রাজ্যে ব্রাহ্মণ সম্প্রদায়ের সমর্থন পাওয়া সহজ হবে বলেই মনে করছেন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। মরাঠা রাজনীতিতে নতুন অক্ষ তৈরি করা যাবে বলেই মত কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের। তবে তার জন্য চাই একক ক্ষমতায় সরকার গড়ার মতো সংখ্যা। যাতে পঙ্কজা বা অন্য কারও দর কষাকষির জমিই না তৈরি হয়। বিজেপি শিবসেনার সঙ্গে ২৫ বছরের জোট ভেঙেছে তো ওই কারণেই।