তেমনই পাঁচ বছর আগে বিহারে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে থাকলেও এনডিএ প্রার্থী কোবিন্দকে সমর্থন জানায় জেডিইউ। তাই গোড়াতেই নীতীশের সমর্থন নিয়ে এগোনোর পরিকল্পনা করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
ফাইল চিত্র।
রাষ্ট্রপতি পদে রামনাথ কোবিন্দের পরবর্তী মুখ খোঁজার কাজ শুরু করে দিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। সূত্রের মতে, ওবিসি সমাজের কোনও নেত্রীকে এ বার রাষ্ট্রপতি হিসাবে বেছে নিতে চাইছেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা।
লোকসভায় সংখ্যাগরিষ্ঠ বিজেপি। রাজ্যসভাতেও মোদীর দল সম্প্রতি একশোর গণ্ডি ছাড়িয়েছে। দেশের ডজনখানেক রাজ্যে বিজেপি সরাসরি ক্ষমতাসীন। এ ছাড়া ছ’টি রাজ্যে শরিক দলের সঙ্গে জোট সরকার চলছে। ফলে সংখ্যার বিচারে বিজেপির প্রার্থীর জয় প্রায় নিশ্চিত। কিন্তু বিজেপি শিবির চাইছে ভোটাভুটি এড়াতে। দলের এক নেতার কথায়, ‘‘রাষ্ট্রপতির পদের কথা মাথায় রেখে এমন এক জন প্রার্থীকে দাঁড় করানোর কথা ভাবা হচ্ছে, যাঁকে সব দল সমর্থন করবে।’’
দেশের জনসংখ্যার প্রায় চল্লিশ শতাংশ ওবিসি সম্প্রদায়ের। সাম্প্রতিক কালে ওবিসি ভোট নিশ্চিত করতে একাধিক পদক্ষেপ করেছে বিজেপি। দলের এক নেতার মতে, উত্তরপ্রদেশের ভোট প্রমাণ করেছে, ভাঙন ধরানোর চেষ্টা করা হলেও ওবিসি সমাজের বড় অংশ বিজেপির পাশে রয়েছে। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীশ বলেন, ‘‘গোটা দেশে বিজেপির যে সাংগঠনিক বিস্তার হয়েছে, তার পিছনে প্রধান কারণ ওবিসি সমাজের সমর্থন।’’ ২০২৪ সালের লোকসভা ভোটে ওবিসি-দের সমর্থনের কথা মাথায় রেখেই ওই সমাজের কাউকে দেশের প্রথম নাগরিকের পদে বসাতে চাইছে বিজেপি। তবে মহিলাদের সমর্থনের বিষয়টিও মাথায় রাখা হচ্ছে। সরকারি সুবিধার সুফল সরাসরি মহিলাদের কাছে পৌঁছনোর প্রতিফলন দেখা গিয়েছে উত্তরপ্রদেশের ভোটবাক্সে। মোদীও একাধিক বার স্বীকার করেছেন, বর্তমান সময়ে দলের নতুন ভোটব্যাঙ্ক মহিলারাই, যাঁদের কথা ভেবে নীতি প্রণয়নে মনযোগী হয়েছে সরকার। সেই কারণে এক ঢিলে দুই পাখি মারতে ওবিসি সমাজের কোনও মহিলা প্রতিনিধিকে রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী করার ভাবনা।
যে নামগুলি নিয়ে চর্চা শুরু হয়েছে, তাঁদের মধ্যে রয়েছেন ছত্তীসগঢ়ের রাজ্যপাল অনুসুরিয়া ইউকি, ঝাড়খণ্ডের প্রাক্তন রাজ্যপাল দ্রৌপদী মুর্মু। ওড়িশার দ্রৌপদীকে প্রার্থী করা হলে ওই রাজ্যের শাসক দল বিজেডির সমর্থন পাওয়া কার্যত নিশ্চিত। দৌড়ে রয়েছেন তেলঙ্গানার রাজ্যপাল তামিলিসাই সৌন্দররাজন। তামিলনাড়ুর ওই প্রাক্তন বিজেপি নেত্রীকে প্রার্থী করা হলে ডিএমকে তথা দক্ষিণী দলগুলির সমর্থন মিলবে বলে আশা করা হচ্ছে। তবে কেরলের রাজ্যপাল আরিফ মহম্মদ খানের নামও এই তালিকায় আছে। গত আট বছরে সংখ্যালঘুদের বিরুদ্ধে নানাবিধ বঞ্চনা, শোষণ ও অত্যাচারের অভিযোগ বার বার কেন্দ্রের ভাবমূর্তি নষ্ট করেছে। বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্বের একাংশের মত, সংখ্যালঘু সমাজের প্রতিনিধি আরিফকে রাষ্ট্রপতি করা হলে সেই অভিযোগকে অনেকাংশেই সামাল দিয়ে বহির্বিশ্বকে ইতিবাচক বার্তা দেওয়া যাবে।
জুলাইয়ে মেয়াদ শেষ হচ্ছে বর্তমান রাষ্ট্রপতির। সর্বসম্মত প্রার্থী বাছতে ইতিমধ্যেই শরিকদের সঙ্গে বৈঠক শুরু করেছে বিজেপি। গত কাল বিহারের মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমারের সঙ্গে আলোচনা করতে পটনা যান কেন্দ্রীয় শিক্ষামন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধান। অতীতে এনডিএ-র শরিক হওয়া সত্ত্বেও নীতীশ প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থন করায় অস্বস্তিতে পড়েছিল বিজেপি। তেমনই পাঁচ বছর আগে বিহারে কংগ্রেসের সঙ্গে জোটে থাকলেও এনডিএ প্রার্থী কোবিন্দকে সমর্থন জানায় জেডিইউ। তাই গোড়াতেই নীতীশের সমর্থন নিয়ে এগোনোর পরিকল্পনা করেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। খুব শীঘ্রই ওড়িশা, তেলঙ্গানা ও অন্ধ্রপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীদের সঙ্গে বিজেপি নেতারা বৈঠকে বসবেন বলে সূত্রের খবর।