ফিরে দেখা সত্তরে!
স্বাধীনতার বয়স সত্তর হবে এ বছর। সেই উপলক্ষে গোটা দেশে জাতীয়তাবাদের হাওয়া উস্কে দিতে অগস্টের শুরু থেকেই পথে নামছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার তথা শাসক দল। ইতিমধ্যেই হাতে নেওয়া হয়েছে বেশ কিছু পরিকল্পনা। ছ’জন মন্ত্রীকে মাথায় রেখে গড়া হয়েছে ছ’টি কমিটি। দেশ জুড়ে তিরঙ্গা যাত্রা করার পরিকল্পনা নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব।
সামনেই পঞ্জাব ও উত্তরপ্রদেশের মতো রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচন। কিন্তু দলিত কাঁটা থেকে কাশ্মীর সমস্যা-একাধিক কারণে জাতীয় রাজনীতিতে প্রতিকূল আবহাওয়ার মুখে মোদী সরকার। হাওয়ার মুখ ঘোরাতে আপাতত তাই স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের মোড়কে দেশভক্তির দাওয়াইয়ের উপরেই ভরসা রাখতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। তাঁরা ভাল করেই জানেন, এটা এমন এক দাওয়াই, কোনও ভাবেই যার বিরোধিতা করা সম্ভব নয় বিরোধী দলগুলির পক্ষে। তাই দল ও সরকারের শীর্ষ স্তরের নির্দেশ, বিভিন্ন মন্ত্রক তো বটেই, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও দলের সব সাংসদকে বাধ্যতামূলক ভাবে এ সব অনুষ্ঠানে সক্রিয় অংশ নিতে হবে। স্বাধীনতা দিবসের আগে থেকেই এলাকা ভিত্তিক রোড শো, জনসভা, বাইক মিছিল করে তিরঙ্গা যাত্রাতেও অংশ নিতে বলা হয়েছে তাঁদের।
স্বাধীনতার সত্তর বছর পূর্তি উপলক্ষে অনুষ্ঠান কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংহকে। বাকি পাঁচটি কমিটির দায়িত্বে রয়েছেন বেঙ্কাইয়া নায়ডু, নিতিন গডকড়ী, সুষমা স্বরাজ, মনোহর পর্রীকর ও অনন্ত কুমার।
কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক জানাচ্ছে, ইতিহাসকে ফিরে দেখতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী-সাংসদরা স্বাধীনতা সংগ্রামীদের জন্মভিটে, জালিয়ানওয়ালা বাগ বা চম্পারণের আন্দোলনস্থলে যাবেন, শ্রদ্ধা জানাবেন। দেশের তরুণ প্রজন্মের কাছে স্বাধীনতার ইতিহাসকে নতুন করে তুলে ধরবেন।
বিজেপি সূত্র বলছে, স্বাধীনতা দিবসকে ঘিরে এই সব অনুষ্ঠানের জন্য কোমর কষে নামছে দল। কেন্দ্রীয় মন্ত্রী ও সাংসদদের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, স্বাধীনতা দিবসের সময়ে অন্তত এক সপ্তাহ যেন তাঁরা নিজেদের লোকসভা কেন্দ্রে সময় কাটান। এতে সরকারের বিভিন্ন সাফল্য আম-জনতার সামনে তুলে ধরার সুযোগ পাবেন তাঁরা। আবার সাধারণ মানুষও এলাকার মন্ত্রী ও সাংসদদের কাছে সরাসরি নিজেদের অভাব-অভিযোগ জানানার সুযোগ পাবেন।
কী বলছেন প্রধানমন্ত্রী?
কেন্দ্রীয় মন্ত্রীদের প্রতি তাঁর নির্দেশ, স্বাধীনতা দিবসের গুরুত্ব তরুণ প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতে হবে। স্বাধীনতা আন্দোলনের বিভিন্ন ঘটনার সঙ্গে যে স্থানগুলি ইতিহাসের পাতায় জায়গা করে নিয়েছে, সেগুলির গুরুত্ব বোঝাতে হবে। কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তালিকায় রয়েছে জালিয়ানওয়ালা বাগ, উত্তরপ্রদেশের কাঁকোরি, পোর্ট ব্লেয়ারের সেলুলার জেল, বিহারের চম্পারণ কিংবা দাণ্ডী গ্রামের মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলি। এ ছাড়া প্রত্যেক সাংসদকে নিজেদের লোকসভা কেন্দ্রে স্বাধীনতার ইতিহাসের সঙ্গে জড়িত কোনও স্থান থাকলে সেখানে গিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ঘরোয়া ভাবে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘পরাধীন ভারতের মানুষ স্বাধীনতার জন্য কী ভাবে আত্মত্যাগ করেছিলেন, সেই ইতিহাস দেশের তরুণরা জানুক— এমনটাই চান প্রধানমন্ত্রী। তাই দেশের মানুষের আত্মত্যাগের ইতিহাসকে স্মরণ করিয়ে দিতেই এই উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে।’’
এ সবের সঙ্গে সোশ্যাল মিডিয়া ও বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে এ সবের ঢালাও প্রচারের দিকেও জোর দিচ্ছে সরকার। বিভিন্ন মন্ত্রক ও দলের সোশ্যাল মিডিয়া সেলকে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে সক্রিয় ভূমিকা নিতে বলা হয়েছে। তৈরি হচ্ছে স্বাধীনতা দিবস নিয়ে একাধিক বিজ্ঞাপনও। অগস্টের প্রথম সপ্তাহ থেকেই যা দেখা যাবে টিভির পর্দায়। সংসদের ব্যস্ততার মধ্যেও কোন কোন বিজ্ঞাপন শেষ পর্যন্ত ছাড়পত্র পাবে তা চূড়ান্ত করার জন্য সময় দিচ্ছেন খোদ প্রধানমন্ত্রী।