বিকল্প কথা ভাবছে বিজেপি ফাইল চিত্র
নীতীশ কুমার-তেজস্বী যাদব একসঙ্গে দিল্লিতে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর কাছে জাত গণনার দাবি তুললেও কেন্দ্রীয় সরকারের অবস্থান হল, ২০২১-এর জনগণনার সঙ্গে ওবিসিদের সংখ্যা গোনা হবে না। তবে উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে যে ভাবে বিজেপির অন্দরমহল, শরিক ও বিরোধীদের থেকে জাত গণনার দাবি উঠতে শুরু করেছে, তাতে বিকল্প রণকৌশল নিয়ে মোদী সরকার তথা বিজেপিকে চিন্তাভাবনা করতে হয়েছে।
কী সেই বিকল্প রণকৌশল? কেন্দ্রীয় সরকারের এক মন্ত্রী বলেন, ‘‘আগামী বছর উত্তরপ্রদেশ-সহ একাধিক রাজ্যে ওবিসি ভোটব্যাঙ্কের কথা মাথায় রেখে সরকারের তরফে ভবিষ্যতে আর্থ-সামাজিক জাত গণনা হবে বলে আশ্বাস দেওয়া যেতে পারে। তার সঙ্গে মোদী জমানায় ওবিসিদের কী ভাবে ক্ষমতায়ন হয়েছে, তা তুলে ধরতে হবে।’’ কী ভাবে? ওই মন্ত্রী বলেন, ‘‘প্রথমত, বিভিন্ন কেন্দ্রীয় প্রকল্পের ফলে কী ভাবে ওবিসি বা অনগ্রসর শ্রেণির মানুষ উপকৃত হয়েছেন, তা তুলে ধরতে হবে। দ্বিতীয়ত, কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা থেকে বিজেপির সংগঠনে ওবিসি নেতাদের কী ভাবে জায়গা দেওয়া হয়েছে, তা প্রচার করা হবে। তৃতীয়ত, উত্তরপ্রদেশের ভোটের আগে যোগী সরকারের মন্ত্রিসভায় রদবদল করে বিজেপির পাশাপাশি আপনা দল, নিষাদ পার্টির অনগ্রসর শ্রেণির নেতাদের জায়গা দেওয়ার কথা ভেবে রাখা হয়েছে।’’
রক্ষণের পাশাপাশি পাল্টা আক্রমণও থাকতে পারে কেন্দ্র তথা বিজেপির তূণে। ওই কেন্দ্রীয় মন্ত্রী বলেন, ‘‘এসপি, কংগ্রেসের মতো যে সব বিরোধী দল ওবিসিদের মন জিততে জাত গণনার দাবি তুলেছে, তারা ওবিসিদের জন্য কী করেছে, সেই প্রশ্ন তুলতে হবে।’’
আজ বিজেপি প্রশ্ন তুলেছে, অখিলেশ ওবিসি নেতা কল্যাণ সিংহের মৃত্যুর পরে তাঁকে শ্রদ্ধা জানাতে যাননি কেন? এসপি প্রধান অখিলেশ যাদব উত্তরপ্রদেশের যাদব ছাড়া অন্য ওবিসিদের ভোট নিজের দিকে টানতে চাইছেন। কল্যাণ ওই সম্প্রদায়েরই নেতা ছিলেন।
বিজেপি নেতারা মনে করছেন, ২০১৭-য় উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা ভোট ও ২০১৯-এর লোকসভাতেও ওবিসি ভোটাররা বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন। বিশেষত যাদব ছাড়া অন্য ওবিসিদের ভোট পেয়েই বিজেপি ক্ষমতায় এসেছে। ২০১৯-এ লোকসভায় খোদ প্রধানমন্ত্রী প্রচারে গিয়ে বলেছেন, তিনি সবচেয়ে অনগ্রসর শ্রেণির পরিবারের সন্তান। সম্প্রতি ডাক্তারি পড়ায় ওবিসিদের সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে, রাজ্যগুলির ওবিসি তালিকা তৈরির ক্ষমতা নিশ্চিত করে মোদী সরকার বিজেপির জন্য ওবিসি ভোট নিশ্চিত করে ফেলেছিল। এসপি, আরজেডি, কংগ্রেস সেই পরিকল্পনা ঘেঁটে দিতেই জাত গণনার দাবি তুলেছে। জেডিইউ, আপনা দল, নিষাদ পার্টি, রিপাবলিকান পার্টির মতো শরিক দলও তার সঙ্গে যোগ দেওয়ায় চাপ বেড়েছে।
জাত গণনায় কোথায় আপত্তি কেন্দ্রের? সরকারি সূত্রের ব্যাখ্যা, জনগণনার সঙ্গে তফসিলি জাতি, জনজাতির গণনা হলেও ওবিসিদের সংখ্যা গোনা হয় না। কারণ জণগণনা অনুযায়ী দেশের জনসংখ্যায় তফসিসি জাতির হার ১৫ শতাংশের আশেপাশে, জনজাতির ৭-৮ শতাংশ। সেই অনুপাতেই তফসিলি জাতির জন্য ১৫% ও জনজাতির জন্য ৭.৫% সংরক্ষণের বন্দোবস্ত রয়েছে। প্রশ্ন হল, ওবিসিদের জন্য ২৭ শতাংশ সংরক্ষণ তাদের জনসংখ্যার অনুপাতে দেওয়া হচ্ছে কি না, তা নিয়ে।
কেন্দ্রীয় সমাজ কল্যাণ মন্ত্রক সূত্রের বক্তব্য, ‘‘স্বাধীনতার আগে ১৯৩১-এ শেষ বার জাত গণনা হয়েছিল। তার ভিত্তিতে মণ্ডল কমিশন বলেছিল, জনসংখ্যায় ওবিসিদের হার আনুমানিক ৫২ শতাংশ। এখন জাত গণনায় যদি দেখা যায়, ওবিসিদের জনসংখ্যা সত্যিই ৫০ শতাংশের বেশি, তা হলে সেই হারেই সংরক্ষণ দেওয়ার দাবি উঠবে।’’
আর সেখানেই বিপদ দেখছে বিজেপি। কারণ এসসি-এসটি-ওবিসিদের জন্য চাকরি-শিক্ষায় ৫০ শতাংশের বেশি আসন সংরক্ষণ করতে গেলে ‘জেনারেল ক্যাটেগরি’ বা উচ্চবর্ণের ক্ষোভের মুখে পড়তে হবে। বিজেপি সূত্রের বক্তব্য, সবাইকে হিন্দুত্বের ছাতায় তলায় নিয়ে আসতে চাওয়া আরএসএসের মতাদর্শের সঙ্গেও এই জাতপাতের ভেদাভেদ খাপ খায় না। তার উপরে বিজেপির নিজস্ব উচ্চবর্ণের ভোটব্যাঙ্ক হারানোরও ভয় থাকছে। সেই কারণেই পাল্টা রণকৌশলের কথা ভাবতে হচ্ছে।