ফাইল ছবি
বিন্ধ্য পর্বতের দক্ষিণে হাতের পাঁচ কেবল কর্নাটক। তাই ২০২৪ সালের লোকসভার নির্বাচনে দাক্ষিণাত্য থেকে আরও বেশি দলীয় সাংসদ জিতিয়ে আনতে ‘দক্ষিণ ভারত বিজয়’ অভিযানে নেমে পড়লেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। প্রথম নিশানায় কে চন্দ্রশেখর রাওয়ের রাজ্য। আগামী বছরে হতে চলা তেলঙ্গানার বিধানসভা নির্বাচনে ক্ষমতা দখলের লক্ষ্যে আজ থেকে হায়দরাবাদে শুরু হয়েছে বিজেপির তিন দিনের জাতীয় কর্মসমিতি বৈঠক। চলবে রবিবার পর্যন্ত। বৈঠকে তেলঙ্গানাবাসীর উদ্দেশে বিজেপি মূল যে বার্তাটি দেবে—পরিবার মুক্ত ভারত গঠন।
এ দিকে, মুম্বইয়ে বিজেপির সদর দফতরে মহারাষ্ট্রে নতুন সরকার গঠনের সাফল্য উদ্যাপনের অনুষ্ঠানে ছিলেন না শেষ পর্যন্ত উপমুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে বসা দেবেন্দ্র ফডণবীস। এ দিন হায়দরাবাদেও আলোচনার কেন্দ্রে তিনি। তবে এ সংক্রান্ত প্রশ্ন এড়িয়ে দলের মহারাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত সি টি রবি বলেন, ‘‘দেবেন্দ্র অনুগত সৈনিক। দলের নির্দেশেই কাজ করেন।’’
গত লোকসভায় রাজ্যের ১৯টি আসনের চারটিতে জয় পায় বিজেপি। বিজেপি প্রার্থীর কাছে হেরে যান মুখ্যমন্ত্রী কে চন্দ্রশেখর রাও (কেসিআর)-এর কন্যা কে কবিতা। তার পরে যত দিন গিয়েছে, শক্তিশালী হয়ে ওঠার ইঙ্গিত দিয়ে রাজ্যের শাসক শিবিরকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে বিজেপি। এরই মধ্যে ডুব্বাক উপনির্বাচনে বিজেপি প্রার্থীর জয়। হায়দরাবাদ পুরসভা নির্বাচনেও টিআরএস-কে শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বিতায় ফেলে দেয় বিজেপি। ফলে খাতায়-কলমে রাজ্য বিধানসভায় কংগ্রেস দ্বিতীয় বড় দল হলেও, এই মুহূর্তে রাজ্যে টিআরএস-এর প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠে এসেছে বিজেপি। সে জন্যই প্রায পাঁচ বছর পরে দিল্লির বাইরে হতে চলা জাতীয় কর্মসমিতির বৈঠকের জন্য হায়দরাবাদকে বেছে নিয়েছে বিজেপি। দল মনে করছে, ২০১৯ সালের লোকসভা নির্বাচনে পূর্ব ও উত্তর-পূর্ব ভারতে আশাতীত ভাল ফল করেছিল দল। কিন্তু দক্ষিণে এখনও দলের যথাযথ বিস্তার ও ক্ষমতায়ন হয়নি। সেই কারণে দু’বছর পরে লোকসভা নির্বাচনে দক্ষিণে আরও বেশি লোকসভা আসন জেতার লক্ষ্যে মনোনিবেশ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিজেপি নেতৃত্ব। আগামী লোকসভা নির্বাচনের আগে শেষ বিধানসভা নির্বাচন হবে তেলঙ্গানাতেই।
আজ সন্ধ্যায় শক্তি প্রদর্শনের উদ্দেশ্যে দলের সভাপতি জে পি নড্ডার নেতৃত্বে বিশাল শোভাযাত্রা করে দল। কাল শুরু হবে দলের কর্মসমিতির বৈঠক। সেখানে তেলঙ্গানা জয়ের রণকৌশল ঠিক করা ছাড়াও দেশের আর্থিক, বৈদেশিক চ্যালেঞ্জগুলি নিয়ে প্রস্তাব হাতে নেবে দল। রবিবার কর্মসমিতিতে উপস্থিত ব্যক্তিদের সামনে প্রধানমন্ত্রী বক্তব্য রাখার পরে, বেগমপেটের কাছে প্যারেড গ্রাউন্ডে জনসভা করবেন। বিজেপি নেতৃত্বের দাবি, সেখানে বিরাট সমাবেশে বিধানসভা নির্বাচনের দামামা বাজাবেন প্রধানমন্ত্রী।
গত দু’টি লোকসভা নির্বাচনে দেশের ওবিসি সমাজের ভোটকে প্রাধান্য দিয়ে এসেছে বিজেপি নেতৃত্ব। এ বারও সদ্য সমাপ্ত উত্তরপ্রদেশ বিধানসভা ও আসন্ন লোকসভার কথা মাথায় রেখে ওবিসিদের স্বার্থে নানা সিদ্ধান্ত নেয় দল। এ রাজ্যের ভোটারদের ৫৬ শতাংশই ওবিসি। দল তাই যে কোনও মূল্যে ওবিসি সমাজের ভোট নিশ্চিত করার লক্ষ্য স্থির করেছে। পাশাপাশি এ রাজ্যের ১১৯টি বিধানসভা কেন্দ্রে দলের শীর্ষ নেতাদের দু’রাত করে কাটানোর নির্দেশ দিয়েছে দল। আর পাঁচটা আঞ্চলিক দলের মতো টিআরএসও পরিবারতান্ত্রিক দল। ২০২৪ সালে কংগ্রেস ও আঞ্চলিক দলগুলির প্রতিপত্তি খর্ব করতে পরিবারভিত্তিক রাজনীতির বিরুদ্ধে প্রবল ভাবে নামতে চলেছে বিজেপি। দলের নেতা তরুণ চুঘ বলেন, “কেসিআর নিজে মুখ্যমন্ত্রী, ছেলে মন্ত্রী, মেয়ে বিধান পরিষদের সদস্য। জামাই পিছন থেকে সরকারের কাজে নজরদারি করেন। কেসিআরের ভাগ্নেও মন্ত্রী। অথচ, তেলঙ্গানা রাজ্যের দাবিতে এখানকার মানুষ যখন আন্দোলন করছিলেন, তখন এঁরা সবাই বিদেশে ছিলেন।”
দলের বক্তব্য, পশ্চিমবঙ্গ, তেলঙ্গানা, তামিলনাড়ু, মহারাষ্ট্র, জম্মু-কাশ্মীরে বিভিন্ন পরিবারভিত্তিক দল ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার প্রশ্নে সক্রিয়। বিজেপি সভাপতি নড্ডার মতে, “ভারতের মতো দেশে পরিবারকেন্দ্রিক রাজনীতি শেষ হওয়ার প্রয়োজন। কারণ পরিবারের মধ্যে ক্ষমতা ধরে রাখার কারণে ইচ্ছুক যুব সমাজ রাজনীতিতে আসার আগ্রহ হারাচ্ছেন, অন্য দিকে ক্ষমতা ধরে রাখতে গিয়ে প্রায়ই দেশের স্বার্থবিরোধী কাজ করছে ওই দলগুলি।” তাই দল চাইছে পরিবারভিত্তিক রাজনীতির বিতর্ক উস্কে দিয়ে তেলঙ্গানার মানুষের কাছে প্রশ্ন রাখতে, রাজ্যের মানুষ পরিবারভিত্তিক দলকে ক্ষমতায় ফিরিয়ে আনতে ইচ্ছুক, না কি বিজেপিকে বাছবেন তাঁরা?