—প্রতীকী চিত্র।
সুন্দরী নারীসঙ্গের হাতছানি এড়াতে না পেরে মধু-ফাঁদে পা দিয়েছেন মধ্যপ্রদেশ ও জাতীয় স্তরের একাধিক নেতা-মন্ত্রী। দলীয় নেতা-মন্ত্রীদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ উঠতেই বিষয়টি নিয়ে উথালপাথাল শুরু হয়েছে বিজেপির অন্দরে। গোটা ঘটনায় নড়েচড়ে বসেছেন দিল্লিতে দলের শীর্ষ নেতৃত্ব। এ ব্যাপারে সবিস্তার রিপোর্ট চেয়ে পাঠিয়েছেন তাঁরা। এমন খবরই প্রকাশিত হয়েছে একটি সর্বভারতীয় সংবাদমাধ্যমে।
ওই সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, গত ১৯ সেপ্টেম্বর বিষয়টি প্রথম সামনে আসে। সুন্দরী নারীসঙ্গের টোপ দিয়ে বিভিন্ন রাজনীতিক এবং আমলাদের কাছ থেকে মোটা টাকা মুক্তিপণ আদায়কারী চক্রের (হানিট্র্যাপ) পর্দাফাঁস করে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। ৫ মহিলা-সহ মোট ছ’জনকে গ্রেফতার করে তারা। কয়েক ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালিয়ে উদ্ধার করে একাধিক স্পাই ক্যামেরা, অশ্লীল ভিডিয়োর পেনড্রাইভ এবং নগদ ১৪ লক্ষ টাকা।
এই ঘটনায় ঠিক কাদের ব্ল্যাকমেল করা হচ্ছিল, তা নিয়ে পুলিশের তরফে কোনও বিবৃতি প্রকাশ করা না হলেও বিজেপির মধ্যপ্রদেশ ও জাতীয় স্তরের একাধিক নেতা-মন্ত্রী এবং আমলারা এই ঘটনায় যুক্ত রয়েছেন বলে কানাঘুষো শুরু হয়, যা প্রকাশ পায় সংবাদমাধ্যমেও। জানা যায়, ভোপালের একটি নামী ক্লাবে নিয়মিত আনাগোনা ছিল তাঁদের। সুন্দরী মহিলাদের নিয়ে ঘর বুক করে প্রায়শই সেখানে আমোদ-প্রমোদে মেতে উঠতেন। এমনকি তাঁদের সঙ্গ দিতে ডাক পড়ত সদ্য কৈশোর পেরনো মেয়েদেরও। এমনটাই প্রকাশিত হয়ে ওই সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে।
আরও পড়ুন: রাজীবের ছুটি নিয়ে এখনও ধোঁয়াশায় সিবিআই, ফের চিঠি ডিজিকে
সেখানে লেখা হয়েছে, পরবর্তী কালে এই আমোদপ্রমোদই কাল হয়ে দাঁড়ায় ওই নেতা-মন্ত্রী এবং আমলাদের ক্ষেত্রে। গোপন ক্যামেরায় ছবি ও ভিডিয়ো তুলে রেখে তাঁদের ব্ল্যাকমেল করতে শুরু করে এক দল লোক। মোটা টাকা না পেলে সেগুলি প্রকাশ করার হুমকি দেওয়া হয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সোমবার বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করে মধ্যপ্রদেশ সরকার। তবে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ সূত্রে খবর, শুরুতে বিজেপি এবং কংগ্রেসের মধ্যে বিষয়টি নিয়ে কাদা ছোড়াছুড়ি শুরু হয়েছিল। কোন দলের নেতা স্পাই ক্যামেরায় ধরা পড়ে থাকতে পারেন, তা নিয়ে চাপা উত্তেজনা তৈরি হয়। তবে পুলিশের হাতে যে ভিডিয়ো এসে পৌঁছেছে তাতে একাধিক প্রথম সারির বিজেপি নেতা ও আরএসএস-এর কয়েক জন সদস্যকে অপ্রস্তুত অবস্থায় দেখা গিয়েছে বলে ওই খবরে তাদের সূত্রকে উল্লেখ করে দাবি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কত জনকে ব্ল্যাকমেল করা হয়েছিল, খতিয়ে দেখছে সিট। ধৃতদেরও জিজ্ঞাসাবাদ শুরু হয়েছে। তাতে জানা গিয়েছে, বিষয়টি ধামাচাপা দিতে তাদের এক কোটিরও বেশি টাকা দিয়েছিলেন বিজেপির এক প্রাক্তন সাংসদ। খুব শীঘ্রই তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ডেকে পাঠানো হতে পারে। এ ছাড়াও স্থানীয় এক সাংবাদিক মারফতও লেনদেন চলত বলে জেরায় উঠে এসেছে। এমনটাই প্রকাশিত হয়েছে ওই সংবাদে।
ধৃতদের ল্যাপটপ ও মোবাইল ঘেঁটে বিভিন্ন চ্যাট অ্যাপ্লিকেশনের মাধ্যমে ওই রাজনীতিকদের অশ্লীল কথাবার্তার রেকর্ড, স্ক্রিনশটস এবং অপ্রস্তুত অবস্থায় তোলা ছবি, ভিডিয়ো এবং অডিয়ো রেকর্ডিং সমেত প্রায় ৪ হাজার ফাইল সিটের হাতে পৌঁছেছে বলে খবর। ভারতীয় রাজনীতিকদের ঘিরে এ যাবৎ এত বড় যৌন কেলেঙ্কারির ঘটনা কখনও সামনে আসেনি বলে দাবি করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। তবে ইতিমধ্যেই বিষয়টিকে ধামাচাপা দেওয়ার প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে বলেও অভিযোগ উঠে আসছে। যে ক্লাবে এই উদ্দাম বিষয় চলত, সেখানকার চেক-ইন রেজিস্টারটি আশ্চর্যজনক ভাবে উধাও হয়ে গিয়েছে। এমনকি সিসিটিভি ফুটেজও বিকৃত করা হয়েছে বলে অভিযোগ। ঘটনার সময়কার সিসিটিভি ফুটেজ রেকর্ডও মুছে দেওয়ার অভিযোগ উঠছে।
গোটা ঘটনায় এখনও পর্যন্ত মুখে কুলুপ এঁটে রয়েছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ এবং প্রশাসন। তবে মঙ্গলবার মধু-ফাঁদে পা দেওয়া এক আইপিএস অফিসারকে মুখ্যমন্ত্রী কমলনাথ নিজের দফতরে ডেকে পাঠিয়েছিলেন বলে স্থানীয় সূত্রে খবর। নেতা-মন্ত্রীরা জড়িত বলে এই ঘটনায় যথেষ্ট সাবধানতা অবলম্বন করছে মধ্যপ্রদেশ পুলিশ। নিজের ফোনে ওই সমস্ত ছবি এবং ভিডিয়ো ট্রান্সফার করে নেওয়ার অভিযোগে তদন্তের শুরুতেই এক পুলিশ ইনস্পেক্টরকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তিনি ওই ফাইলগুলি কাউকে পাঠিয়েছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে তাঁর বিরুদ্ধে তদন্তও শুরু হয়েছে।
আরও পড়ুন: টানা দাম বেড়েই চলেছে পেট্রল-ডিজেলের, পাল্টা দিয়ে বাড়ছে কপালের ভাঁজ
এই ঘটনায় চাঞ্চল্য তৈরি হয়েছে রাজনৈতিক মহলেও। কারণ ২০১৮-য় দুর্নীতি দমন আইনে যে সংশোধন ঘটানো হয়, তাতে ‘অসঙ্গত সুযোগ-সুবিধা’র কথার উল্লেখ রয়েছে, যার অর্থ, শুধুমাত্র বেআইনি টাকার লেনদেনই নয়, কাউকে কিছু পাইয়ে দেওয়ার পরিবর্তে যৌন সুবিধা নিলে, তা-ও ঘুষ বলে প্রতিপন্ন হবে। সে ক্ষেত্রে দোষী প্রমাণিত হলে ৭ বছর পর্যন্ত জেল হতে পারে। এমনটাই প্রকাশিত হয়েছে ওই খবরে।