চৌধরি চরণ সিংহ।— ফাইল চিত্র।
জন্মদিন আসতে এখনও বাকি এক মাসের বেশি। কিন্তু গুজরাত ভোটের আগে কৃষক-ক্ষত মেটাতে চৌধরি চরণ সিংহকে নিয়ে এখন থেকেই মাতামাতি শুরু করে দিল বিজেপি। আর বিজেপির এই প্রচারের মোকাবিলা করতেই ভোটমুখী গুজরাতে পাল্টা যাত্রায় বেরোচ্ছেন কৃষক নেতারা।
গুজরাত প্রচারে গিয়ে কৃষকদের উপেক্ষা করা নিয়ে নিরন্তর নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহকে বিঁধে আসছেন রাহুল গাঁধী। এরও আগে কৃষক আন্দোলন হয়েছে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে। কৃষক-ক্ষত ঢাকতে তাই এ বারে ত্রিমুখী কৌশল নিল অমিত শাহের নেতৃত্বে বিজেপি। এক, রাহুলকে ‘জবাব’ দিতে গোটা দেশ থেকে বিজেপির কৃষক নেতাদের পাঠানো হচ্ছে গুজরাতে। দুই, ডিসেম্বরের ২৩ তারিখে প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী চৌধরি চরণ সিংহের জন্মদিনকে মহাসমারোহে পালন করে দলের কৃষক-প্রেম তুলে ধরা। এবং তিন, দেশের নানা প্রান্তের কৃষক নেতাদের তুলে ধরতে তাঁদের ভিটেয় ‘কৃষি-সংসদ’ বসানো।
চৌধরি চরণ সিংহ উত্তরপ্রদেশের প্রথম অ-কংগ্রেসি মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। জওহরলাল নেহরুর আর্থিক নীতির সমালোচনা করে এসেছেন। বনিবনা হয়নি ইন্দিরা গাঁধীর সঙ্গেও। এ হেন নেতার জন্মদিন গত বারও বিজেপি পালন করেছিল। উত্তরপ্রদেশ ভোটের আগে জাঠ ভোট টানতে। তাতে সফল হলেও গত কয়েক মাস ধরে কৃষক অসন্তোষ যে ভাবে মাথাচাড়া দিয়েছে আর খোদ মোদীর রাজ্যেই ভোটে তার প্রভাব পড়ছে, তা ভাঁজ ফেলছে বিজেপির কপালে। এই পরিস্থিতি সামাল দিতেই গুজরাত ভোটের দিকে তাকিয়ে এখন কৃষক-নেতা চরণ সিংহের শরণ নিচ্ছে বিজেপি।
আরও পড়ুন: প্রথম দফার প্রার্থী এখনও চূড়ান্ত হল না
বিজেপির কৃষক মোর্চার প্রধান বীরেন্দ্র সিংহ মস্ত বলেন, ‘‘রাহুল গাঁধী ও তাঁর পরিবার কৃষক বিরোধী। ছুটি কাটাতে রাহুল গাঁধী বিদেশে যান, আর আমরা ক্ষেতে যাই।’’ দলের নেতা নরেশ সিরোহী বলেন, ‘‘দেশের কৃষি ব্যবস্থার পরিবর্তন করেছিলেন চৌধরি চরণ সিংহ। তাঁর জন্মদিনকে মাথায় রেখে কৃষকদের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন করতে ‘কৃষি-সংসদ’ পালন করা হবে।’’
বিরোধীদের পাল্টা বক্তব্য, বিজেপির নিজেদের নেতার এত অভাব যে অন্য দলের নেতাদের ধরে উৎসব করতে হচ্ছে! তা ছাড়া চরণ সিংহ তো আরএসএস-জনসঙ্ঘের বিরোধীই ছিলেন। চরণ সিংহের ছেলে অজিত সিংহ বিজেপির এই আচরণে চূড়ান্ত বিরক্ত। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি যা করছে, তা নিয়ে আমাদের কোনও বক্তব্য বা মতামত কিছুই নেই!’’
মধ্যপ্রদেশের মন্দসৌরে কৃষকদের উপর গুলি চলার পর দেশজুড়ে কৃষক আন্দোলনের নেতৃত্ব দিয়েছিলেন শিবপ্রকাশ শর্মা। তিনি বলেন, ‘‘কখনও সর্দার পটেল, কখনও গাঁধী, কখনও চরণ সিংহের ছবি নিয়ে প্রচার করলেই হয় না। কৃষকদের দুরবস্থা ঘোচাতে চরণ সিংহের পথে চলা দরকার। মোদী সরকার প্রতিশ্রুতি থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। চরণ সিংহের জন্মদিন পালনেও কৃষকদের দুর্গতি ঘুচবে না।’’ বিজেপির প্রচারের মোকাবিলা করতে তাই মন্দসৌর থেকে গুজরাতে যাত্রা করার প্রস্তুতি নিচ্ছেন কৃষক নেতারা।