সংবাদমাধ্যমের কাছে প্রধানমন্ত্রীর বিএ এবং এমএ-র ডিগ্রি ও মার্কশিট দেখাচ্ছেন অমিত শাহ এবং অরুণ জেটলি। সোমবার নয়াদিল্লিতে পিটিআইয়ের ছবি।
অরবিন্দ কেজরীবালের লাগাতার আক্রমণের মুখে আজ নরেন্দ্র মোদীর দুই সেনাপতি প্রধানমন্ত্রীর বিএ ও এমএ ডিগ্রি সামনে নিয়ে এলেন। অমিত শাহ ও অরুণ জেটলির প্রকাশ করা ডিগ্রিতে দেখা যাচ্ছে, দু’বার ফেল করে রীতিমতো হোঁচট খেতে খেতে তৃতীয় শ্রেণিতে বিএ পাশ করেছেন মোদী। কিন্তু নাছোড়বান্দা কেজরীবাল এখনও দাবি করছেন, মোদীর এই ডিগ্রিও ভুয়ো।
কয়েক সপ্তাহ ধরেই কেজরীবাল ধারাবাহিক ভাবে বলে আসছেন, মোদী আসলে দ্বাদশ শ্রেণি পাশ করেছেন। নির্বাচনী হলফনামায় বিএ ও এমএ পাশ করেছেন বলে মোদী যে দাবি করেছেন, তার কোনও ভিত্তি নেই। কারণ, তথ্য জানার অধিকারে কোথাও কোনও ডিগ্রির হদিস পাওয়া যাচ্ছে না। চাপের মুখে পড়ে গুজরাত বিশ্ববিদ্যালয় তড়িঘড়ি মোদীর এমএ ডিগ্রি বের করে দেয়। সেখানে দেখা যাচ্ছে, প্রধানমন্ত্রী প্রথম ডিভিশনে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতকোত্তর পাশ করেছেন। তার পরেও কেজরীবাল বলতে থাকেন, এমএ পাশ করলেও বিএ করেননি মোদী। অবশেষে আজ প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশে সরকার ও দলের দুই সেনাপতি অরুণ জেটলি ও অমিত শাহ দু’টি ডিগ্রিই প্রকাশ্যে আনেন। সঙ্গে সবিস্তার মার্কশিট।
মার্কশিটে দেখা যাচ্ছে, ১৯৭৫ সালে ইংরেজি, হিন্দি, ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানের পার্ট ওয়ানের পরীক্ষায় একবারে উত্তীর্ণ হন মোদী। পরের বছর পার্ট-টুতে একমাত্র রাষ্ট্রবিজ্ঞান ছাড়া বাকি তিনটি বিষয়েই ফেল করেন। তার পরের বছর অর্থাৎ ১৯৭৭ সালে পার্ট থ্রির পরীক্ষায় পাশ করলেও পার্ট টু-এর ইতিহাসে ফের ফেল করেন। অবশেষে ১৯৭৮ সালে গিয়ে সেই ইতিহাসে পাশ করেন। সব মিলিয়ে তৃতীয় ডিভিশনে পাশ করেন তিনি।
নরেন্দ্র মোদীর ডিগ্রি সামনে আসতেই কেজরীবালের দল ফের আসরে নেমে পড়েছে। তাদের বক্তব্য, এক এক বছরের মার্কশিটে এক একটি নাম রয়েছে। কোথাও নরেন্দ্র কুমার দামোদরদাস মোদী, কোথাও শুধুই নরেন্দ্র দামোদরদাস মোদী। ১৯৭৭ সালের দু’টি মার্কশিট নিয়েও প্রশ্ন তুলে আপের নেতা আশুতোষ বলেন, এই ডিগ্রিও একই রকমের ভুয়ো।
সাংবাদিক বৈঠকে অমিত শাহ ও অরুণ জেটলি একযোগে ক্ষোভ জানিয়ে বলেন, কেজরীবাল রাজনীতির মান যে নিচু স্তরে নামিয়ে এনেছেন, তা ঘোরতর অপরাধ। এ বারে ডিগ্রি সামনে আসার পরে তাঁর উচিত দেশ ও দুনিয়ার কাছে ক্ষমা চাওয়া। কিন্তু এই ডিগ্রি ভুয়ো বলে কেজরীবালের দল পাল্টা মোদী, শাহ ও জেটলির ক্ষমা চাওয়ার দাবি করে বসেছে। প্রশ্ন হল, এত দিন ধরে কেজরীবাল আক্রমণ করে গেলেও প্রধানমন্ত্রী বা বিজেপি নেতৃত্ব কেন চুপ করে বসেছিলেন?
বিজেপি সূত্রের মতে, এমএ পরীক্ষায় প্রধানমন্ত্রী যেখানে প্রথম শ্রেণিতে পাশ করেছেন, তার পর বিএ-তে তৃতীয় শ্রেণিতে পাশ করার বিষয়টি সামনে আনা অস্বস্তিকর ছিল। তার উপর যখন বেশ কয়েক বার তিনি অকৃতকার্য হয়েছেন। কিন্তু আক্রমণের পারদ চড়ার পরে সেটিকে সামনে নিয়ে আসা ছাড়া উপায় ছিল না। মার্কশিট সামনে আসতেই বিভিন্ন মহল থেকে আসতে শুরু করেছে নানা ধরনের প্রতিক্রিয়া। কেউ বলছেন, ডিগ্রিতে কী আসে যায়। জরুরি অবস্থার উত্তাল সময়ে এক জন রাজনৈতিক কর্মী কোন বিষয়ে কত নম্বর পেয়েছেন, সেটা আলোচনার বিষয় হতে পারে না। মোদীর ডিগ্রি নয়, প্রধানমন্ত্রীর কাজ দেখা উচিত। অনেকেই বলছেন, মোদী কোন পরীক্ষায় পাশ করেছেন বা তাতে কত নম্বর পেয়েছেন, এখন সে সব টেনে আনার কী প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। এটা এখন একেবারেই অপ্রাসঙ্গিক একটি বিষয়। এ সব উস্কে দেওয়ার পিছনে সংকীর্ণ রাজনীতি রয়েছে। তবে কটাক্ষ করতে ছাড়ছে না বিরোধীরা। কংগ্রেসের এক নেতার মন্তব্য, ‘‘মার্কশিটে দেখা যাচ্ছে মোদী ইতিহাসে কাঁচা। লোকসভা
ভোটের প্রচারের সময়ে এর ছাপ রেখেছেন তিনি।’’
মোদীর ডিগ্রি নিয়ে কেজরীবালদের নতুন আক্রমণের কী জবাব দিচ্ছে বিজেপি?
দলের শীর্ষ নেতাদের বক্তব্য, উত্তর ভারতে নামের সঙ্গে ‘কুমার’ যোগ করার রেওয়াজ নতুন নয়। আর নামবিভ্রাটে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কিছু ভুল হতে পারে। কেজরীবাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তা যাচাই করে নিন। তবে এমএ পরীক্ষায় এত ভাল ফল করলেও বিএ-র এই হাল কেন? জেটলির জবাব, ‘‘জরুরি অবস্থা চলছিল। টালমাটাল সময়ে গুজরাত থেকে পরীক্ষা দিতে দিল্লি আসতেন নরেন্দ্র মোদী। সারাদিন সামাজিক কাজে ব্যস্ত থেকেও যে ভাবে তিনি পরীক্ষা দিয়ে পাশ করেছেন, সেটি এক জন আম আদমির উৎকৃষ্ট উদাহরণ।’’ সেই সময়ে দিল্লিতে এসে যাঁর বাড়িতে থেকে মোদী পরীক্ষা দিতেন, এমন এক ব্যক্তিকে সাক্ষী হিসেবে আজ বিজেপি দফতরে হাজির করানো হয়েছিল।