হামিদ আনসারি ও রাম মাধব
যোগ-উৎসবের মাঝেই উপ-রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাম মাধবের টুইটে ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী।
বিজেপির শীর্ষ সূত্রের মতে, যখন ভারতের উদ্যোগে গোটা দুনিয়া গত কাল যোগ নিয়ে মেতে ছিল, সেই সময়ে রাম মাধবের এই টুইট অহেতুক বিভাজনের পরিবেশ তৈরি করেছে। দলের মধ্যেই প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে রাজপথের মূল অনুষ্ঠানের হোতা প্রধানমন্ত্রী, সেখানে পদমর্যাদায় তাঁর থেকে উঁচুতে আসীন রাষ্ট্রপতি, উপ-রাষ্ট্রপতিকে আমন্ত্রণ জানানো যায় না। তা না জেনেই কেন টুইটে উপ-রাষ্ট্রপতির মতো সাংবিধানিক পদকে কটাক্ষ করতে গেলেন রাম মাধব?
কাল গোটা দিন মাতিয়ে সন্ধ্যায় সবে যখন দুটি বিশ্ব রেকর্ড ঘরে এসেছে, সেই সময়ই টুইটারে রাম মাধব প্রশ্ন তোলেন যোগ- উৎসবে উপ-রাষ্ট্রপতির সামিল না হওয়ার বিষয় তুলে। উপ-রাষ্ট্রপতির অধীনে থাকা রাজ্যসভা টিভিতে কেন যোগ-দিবসের সম্প্রচার হল না, তা নিয়েও প্রশ্ন তোলেন। পরে আনসারির দফতর জানায়, তাঁকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি বলেই আসেননি। রাজ্যসভা টিভিতে ওই অনুষ্ঠান সম্প্রচার করা হয়েছে।
টুইট প্রত্যাহার করতে গিয়ে বিপত্তি বাড়িয়েছেন মাধব। কারণ তিনি তখন আবার টুইটারে জানান, যে উপ-রাষ্ট্রপতি অসুস্থ। কিন্তু আনসারির দফতর থেকে তাঁর অসুস্থতার কথা জানানো হয়নি। ফলে, আজ ফের কার্যত নাকে খত দিয়ে রাম মাধব বলেন, ‘‘আমি খবর পেয়েছিলাম তিনি অসুস্থ। আমি ক্ষমা চাওয়ার পর এ বার বিতর্কে ইতি টানা দরকার।’’
গত কাল সকাল থেকে প্রধানমন্ত্রী যখন যোগের মাধ্যমে শান্তি ও ঐক্যের বার্তা দিচ্ছেন, সেই সময় এই টুইটের মধ্য দিয়ে উপ-রাষ্ট্রপতি হামিদ আনসারিকে আক্রমণ করে বিভাজনের বার্তা দেন রাম মাধব। টুইট প্রত্যাহার করে ক্ষমা চেয়েও শেষরক্ষা হয়নি। বিরোধীরাও আজ প্রধানমন্ত্রীকে আক্রমণের নতুন হাতিয়ার পেয়ে গেল। যা নিয়ে যারপরনাই ক্ষুব্ধ প্রধানমন্ত্রী। গতকাল রাতেই খবর পেয়ে তিনি অমিত শাহকে উপযুক্ত পদক্ষেপ করতে বলেন। অমিত শাহের হস্তক্ষেপেই তারপর টুইট প্রত্যাহার করে ক্ষমা চান রাম মাধব।
বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘বাড়া ভাতে জল ঢেলে দিয়েছেন রাম মাধব।’’ আয়ুষ-এর দায়িত্বে থাকা মন্ত্রী শ্রীপদ নাইককে দিয়েই আজ বলানো হয়, ‘‘রাম মাধব ভুল করে ফেলেছেন। ক্ষমাও চেয়েছেন। এরপর এর নিষ্পত্তি হওয়া উচিত।’’ রাম মাধবও আজ ফের বলেন, ‘‘যোগ দিবসে দুনিয়ায় কোটি কোটি মানুষ সামিল হওয়ার স্মৃতিকেই মনে রাখা উচিত।’’ আনসারির দফতর জানিয়েছে, শ্রীপদ নাইকের বিবৃতি যুক্তিপূর্ণ। বিতর্ক শেষ হয়ে যাওয়া উচিত। উপ-রাষ্ট্রপতি নিয়মিত যোগ করেন। কিন্তু সরকারি অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ না পেলে যান কী করে?
কিন্তু বিজেপির সাধারণ সম্পাদক তাঁর কীর্তি ধুয়েমুছে ফেলতে চাইলেও বিরোধীরা ছেড়ে কথা বলবে কেন? আজ সকাল থেকেই তাই সুষমা-বসুন্ধরার পাশাপাশি তাঁরা নতুন উদ্যমে ঝাঁপিয়ে পড়েছেন মোদী-বধে। কংগ্রেসের নেতা শাকিল আহমেদ বলেন, ‘‘গোড়া থেকেই আমরা বলে আসছি, যোগের মাধ্যমে রাজনীতি করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। এটি বিজেপি-আরএসএসের কর্মসূচি।’’ আহমেদের মতে, রাম মাধব এখন বিজেপিতে থাকলেও আদতে তিনি আরএসএস থেকে এসেছেন। নিজেদের বিভাজনের রাজনীতির জন্য উপ-রাষ্ট্রপতির পদকেও যে ভাবে খাটো করে দেখানো হল, তাতে আরএসএসের মানসিকতাই বেরিয়ে এসেছে।