ধর্মবীর সিংহ। —ফাইল চিত্র।
বিজেপির মন্ত্রী গিরিরাজ সিংহের ‘ঠুমকা’ মন্তব্যের রেশ এখনও চলছে। এরই মধ্যে কেন্দ্রের শাসকদলের এক সাংসদ প্রেমবিবাহ এবং একত্রবাস নিয়ে নিজেদের মতামত দিলেন। নানা বিশেষণে হরিয়ানার বিজেপি সাংসদ ধর্মবীর সিংহ জানালেন কেন এই দু’টি বিষয় সমাজকে ভাইরাসের মতো ধীরে ধীরে শেষ করছে।
জনসভা বা কোনও দলীয় কর্মসূচি নয়। বিজেপির এই লোকসভা সংসদ এই আলোচনা করেছেন খাস সংসদ ভবনের ভিতরে। লোকসভা অধিবেশন চলাকালীন। জিরো আওয়ারে এই প্রসঙ্গে সবিস্তার আলোচনা শুরু করেন তিনি। সরাসরিই জানান, একত্রবাস হল সমাজের বিপজ্জনক রোগের মতো। একে অবিলম্বে সমাজ থেকে উপড়ে ফেলে দেওয়া উচিত। কেন্দ্রীয় সরকার এবং সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ধর্মবীর বলেন, ‘‘সরকারের কাছে আমার আর্জি, অবিলম্বে একত্রবাসকে নিষিদ্ধ করতে আইন আনা হোক।’’
তবে এখানেই থামেননি গেরুয়া সাংসদ। ‘প্রেম করে বিয়ে করা’কেও সমাজের অর্ধেক সমস্যার কারণ বলে বোঝাতে চেয়েছেন তিনি। ধর্মবীর বলেছেন, ভারতের সংস্কৃতি হল দুই পরিবারের অনুমতি সাপেক্ষে সামাজিক অবস্থান, ধর্ম, গোত্র এবং আরও নানা বিষয় দেখে, তার পরে বিয়ে। কিন্তু ইদানীং সেই সংস্কৃতি প্রায় উধাও হতে বসেছে। এখন চতুর্দিকে প্রেম-বিবাহের চল হয়েছে বেশি। পাত্র-পাত্রী অনেক ক্ষেত্রে পরিবারের অনুমতির পরোয়া করছেন না। আর তা থেকেই যত অশান্তির সূত্রপাত। বহু পরিবার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে এই পারস্পরিক সংঘাতের জেরে। বাড়ছে বিচ্ছেদের হারও। ধর্মবীরের যুক্তি ভারতে এখনও বিচ্ছেদের হার ১.১ শতাংশ। যেখানে আমেরিকায় বিচ্ছেদের হার এর ৪০ গুণ।
সংসদকে ধর্মবীর জানিয়েছে, ভারতে যে টুকু বিচ্ছেদের ঘটনা ঘটছে তার অন্যতম কারণ, ওই প্রেম করে বিয়ে। তবে তার থেকেও একটি ভয়ঙ্কর রোগ এখন ধরেছে সমাজে তা হল বিয়ে না করেই পাত্র-পাত্রীর একত্রবাস। ধর্মবীর সংসদে বলেছেন, ‘‘এটি একটি মারাত্মক অসুখ। শুধু তাই নয়, এ জিনিস সমাজের শত্রু। শয়তানের মতোই বিষাক্ত। বিদেশে বিষয়টি অত্যন্ত সহজ হতে পারে। কিন্তু এখন এই বিষ আমাদের সমাজেও ঢুকে পড়েছে। কিন্তু একে সমূলে উপড়ে ফেলতে হবে।’’
সংসদে নিজের বক্তব্যের সপক্ষে উদাহরণ দিয়ে ধর্মবীর বলেন, ‘‘শ্রদ্ধা ওয়ালকর এবং আফতাব পুণাওয়ালার সঙ্গে কী হল দেখুন। ওরাও একত্রবাস করত। এ রকম ঘটনা রোজ খবরের পাতা খুললেই চোখে পড়ে। এই বিষয়গুলিই আমাদের সংস্কৃতির গোড়ায় আঘাত করছে। তাই কেন্দ্রের উচিত আইন করে এ জিনিস বন্ধ করা।’’
দেশে যখন সমলিঙ্গে বিবাহ নিয়ে আন্দোলন চলছে, সমকামী সম্পর্কে স্বীকৃতি দিয়েছে দেশের আদালত, সেখানে দাঁড়িয়ে প্রাপ্তবয়স্ক নারী পুরুষের পারস্পরিক সম্মতিতে একসঙ্গে থাকতে চাওয়া নিয়ে আপত্তি তুলেছেন সাংসদ। যা দেখে তাজ্জব দেশের মানুষ।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবারই বিজেপির মন্ত্রী গিরিরাজের বিরুদ্ধে ঠুমকা মন্তব্যে ক্ষোভ উগরে দিয়ে তৃণমূলের মহিলা সাংসদ এবং বিধায়কেরা বলেছিলেন, বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতা মন্ত্রীরা বরাবরই পিতৃতান্ত্রিক মন্তব্য করেছেন, মহিলাদের বিরুদ্ধেও অপমানজনক কথা বলেছেন। সেই আবহে বৃহস্পতিবারই বিজেপির এক সাংসদ সংসদে দাঁড়িয়ে নারীপুরুষের একত্রবাসকে সমাজের রোগ বলে অভিহিত করলেন।