নির্দল বিধায়ক ইঞ্জিনিয়ার রশিদ (বাঁ দিকে)-কে মারধর বিজেপি সদস্যদের। ছবি: এএফপি।
বিধায়ক হোস্টেলে গোমাংস খেয়ে পার্টিতে হইহুল্লোড় করার ‘অপরাধে’ জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় নিগ্রহের শিকার হতে হল নির্দল বিধায়ক ইঞ্জিনিয়ার রশিদকে। অভিযোগের তির বিজেপি বিধায়কদের দিকে। বৃহস্পতিবার দিনভর এই ঘটনা ঘিরে চূড়ান্ত নাটকের সাক্ষী থাকল বিধানসভা।
এ দিন রশিদ বিধানসভায় ঢুকতেই তাঁর উপরে বিজেপি সদস্যরা চড়াও হন বলে অভিযোগ। অধিবেশন তখনও শুরু হয়নি। টিভি চ্যানেলে ঘটনার ফুটেজ প্রকাশিত হওয়ার পরে দেখা গিয়েছে, রশিদকে রীতিমতো মারধর করা হচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী মুফতি মহম্মদ সইদ এবং ন্যাশনাল কনফারেন্স নেতা ওমর আবদুল্লা ঘটনার তীব্র নিন্দা করেছেন। পিডিপি নেতৃত্বাধীন সরকারের অংশ হওয়ায় বিজেপির এই কাজ নিয়ে সব স্তরেই সমালোচনা হচ্ছে। ওমর আবদুল্লা বলেছেন, ‘‘রশিদ যা করেছেন, তাতে কারও আপত্তি থাকলে তা নিয়ে বিধানসভায় আলোচনা হোক। কিন্তু কেউ কী খাচ্ছেন, তার জন্য তাঁকে মারধর করা যায় না। দাদরিতে যা হয়েছে এখানে সেই চেষ্টা চলছে।’’
একটি সূত্রের দাবি, রশিদকে বিজেপি সদস্যদের হাত থেকে বিরোধীরা উদ্ধার না করলে তাঁর কী অবস্থা হত, কেউ জানে না। পরে ওয়াকআউট করেন বিরোধীরা। বিজেপি নেতারা ক্ষমা চাইবেন এই প্রতিশ্রুতি পাওয়ার পরে ফিরে আসেন তাঁরা। তবে রশিদের বক্তব্য, ‘‘ক্ষমা যথেষ্ট নয়। আমি বেআইনি কাজ করিনি।’’ বিধায়ক জানিয়েছেন কী ভাবে বিজেপির ছ-আট জন চড়াও হন তাঁর উপরে। রশিদের কথায়, ‘‘ওদের কয়েক জন ঘাড় আর পা চেপে ধরে। বাকিরা বুকে ঘুষি মারছিল। তার পরে জ্ঞান হারাই।’’ হট্টগোলে আজ কিছু ক্ষণ মুলতবি ছিল সভা।
জম্মু ও কাশ্মীর বিধানসভায় অধিবেশনের শেষ দিন ছিল আজই। রাজ্যে গো-হত্যা এবং গোমাংস বিক্রিতে নিষেধাজ্ঞা সংক্রান্ত ১৮৬২ সালের আইন খারিজের দাবিতে এ দিন একটি বিল সভায় পেশ করতে চেয়েছিলেন রশিদ-সহ ন্যাশনাল কনফারেন্স এবং সিপিএম বিধায়করা। গোলমালের জেরে সেই বিল নিয়ে আলোচনাই সম্ভব হয়নি। এর আগে জম্মু-কাশ্মীর হাইকোর্ট রাজ্যে গোমাংস বিক্রির উপরে নিষেধাজ্ঞা বলবৎ করার নির্দেশ দিয়েছিল পুলিশকে। এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে একটি নয়া বেঞ্চ গঠনের কথাও বলেও কোর্ট। গোমাংস নিষিদ্ধকরণ বিতর্কে রাজ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি যাতে কোনও ভাবে নষ্ট না হয় সেই লক্ষ্যে পিডিপি-বিজেপি সরকার সুপ্রিম কোর্টের হস্তক্ষেপ চেয়েছিল। তার পরে গত সোমবার হাইকোর্টের ওই নির্দেশ প্রয়োগের উপরে দু’মাসের স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
আজ উধমপুরে তিনটি গরুর দেহাবশেষ উদ্ধার হওয়ার পরে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ জানিয়েছে, গরুর দেহাবশেষের ছবি তুলে হোয়াটসঅ্যাপে প্রচার করে বিতর্ক উস্কে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছিল। তাই মোবাইল ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িক ভাবে বন্ধ ছিল। উধমপুরের ডেপুটি কমিশনার জানান, বিষাক্ত কিছু খেয়ে গরুগুলি মারা গিয়েছে। ময়নাতদন্তে সব স্পষ্ট হবে।