শরজিল ইমাম।
‘দেশবিরোধী’ মন্তব্য করার অভিযোগে ধৃত জেএনইউ ছাত্র শরজিল ইমামের সঙ্গে ইসলামি মৌলবাদী সংগঠনগুলির যোগসূত্র এখনও প্রমাণ করতে পারেনি দিল্লি পুলিশ। এর মধ্যে অসম সরকারের মুখপাত্র হিমন্তবিশ্ব শর্মা আজ দাবি করলেন, পিএফআইয়ের উস্কানিতে ১১ ও ১২ ডিসেম্বর গুয়াহাটিতে যে সিএএ-বিরোধী হিংসাত্মক আন্দোলন হয়েছে, তার পিছনে ছিল শরজিলের বক্তব্যের প্ররোচনা।
হিংসার প্ররোচনা কম আসছে না গেরুয়া শিবির থেকে। জাতীয়তাবাদ প্রচারের নামে এখন পুরোদস্তুর হিংসার ভাষায় কথা বলছে তারা। বিজেপি-সঙ্গ ছাড়লেও শিবসেনা গেরুয়াই রয়েছে বলে উদ্ধব ঠাকরে জানিয়েছেন কিছু দিন আগে। গত কাল তাঁর দল শাহিন বাগ আন্দোলনের অন্যতম নেতা শরজিলের হাত কেটে নেওয়ার হুমকি দিয়েছে। এর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে শরজিলকে গুলি করে মারার ডাক দিলেন বিজেপি বিধায়ক সঙ্গীত সোম। ২০১৩-র মুজফ্ফরনগরে ২০১৩-র হিংসার ঘটনায় একধিক বার নাম জড়িয়েছে এই বিধায়কের। আজ তিনি শরজিল প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘যারা ভারত ভাঙার কথা বলে, তাদের প্রকাশ্যে গুলি করা উচিত।’’
এই জাতীয় প্ররোচনার ফল কী হতে পারে, গত কালই তা দেখেছে দিল্লি। শাহিন বাগের অদূরে জামিয়া মিলিয়া ইসলামিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে এক যুবক প্রকাশ্যে, এমনকি ফেসবুক লাইভে এসে, গুলি চালিয়েছে ‘এই নে
আজাদি’ বলে।
শরজিলের একটি ভিডিয়ো সম্প্রতি ভাইরাল হয়েছে। যেখানে তাঁকে বলতে দেখা গিয়েছে, অসমে মুসলিম ও বাংলাভাষীদের উপরে অত্যাচার চলছে। ৬-৮ মাসের মধ্যে বাংলাভাষীদের খতম করে দেওয়া হবে। তাই ‘চিকেন নেক’ (পশ্চিবঙ্গের সংকীর্ণ ভূখণ্ড, যা উত্তর-পূর্ব ভারতকে বাকি ভারতের সঙ্গে জুড়ে রেখেছে) বিচ্ছিন্ন করে, রেল সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে অসমকে বাকি দেশ থেকে আলাদা করে দেওয়াটা আন্দোলনকারীদের দায়িত্ব।
গত ২৮ জানুয়ারি বিহারের জহানাবাদ থেকে গ্রেফতারের পরে পাঁচ দিনের জন্য শরজিলকে হেফাজতে পেয়েছে দিল্লি পুলিশ। তার বিরুদ্ধে অসম ছাড়াও মণিপুর ও অরুণাচল সরকারও বিভিন্ন ধারায় মামলা করেছে। হিমন্ত জানান, রাজ্য সরকার শরিজলকে হাতে পেতে ইতিমধ্যেই আবেদন জানিয়েছে। হিমন্তের কথায়, “যে ভাষায় শরজিল কথা বলেছেন, তার সঙ্গে গুয়াহাটিতে হওয়া হিংসাত্মক ঘটনার সরাসরি যোগ আছে বলে আমাদের সন্দেহ। কেন্দ্রীয় ফরেন্সিক ল্যাবরেটরিও কিছু তথ্য দিয়েছে। পুলিশ ওই ঘটনায় পপুলার ফ্রন্ট অব ইন্ডিয়ার ভূমিকা নিয়ে তদন্ত চালাচ্ছে।”
অসমের ডিজিপি ভাস্করজ্যোতি মহন্ত জানান, শরজিলকে রিম্যান্ডে অসমে আনার জন্য চেষ্টা চলছে। প্রোডাকশন ওয়ারেন্ট পেলেই তাঁকে আনা হবে। অসম পুলিশের একটি দল দিল্লিতে আছে। শরিজলকে এখন যাঁরা জেরা করছেন, সেই দলে অসমের এক পুলিশকর্তাও রয়েছেন।
অসমে বেআইনি কার্যকলাপ রোধের যে মামলায় কৃষক মুক্তি আন্দোলনের নেতা অখিল গগৈ, ধৈর্য কোঁয়র, বিতু সোনোয়ালকে গ্রেফতার করে জেলে রেখেছে এনআইএ, সেই তদন্তে এ দিন কৃষক মুক্তি সংগ্রাম সমিতির উপদেষ্টা হুসেন মহম্মদকে এনআইএর কার্যালয়ে নিয়ে গিয়ে জেরা করা হয়।