ফাইল চিত্র
দল পরপর দু’বার ক্ষমতায় এলেও, যোগী আদিত্যনাথ মন্ত্রিসভার প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী কেশবপ্রসাদ মৌর্য-সহ অন্তত ডজনখানেক মন্ত্রী এ যাত্রায় হেরেছেন। পরাজিতদের মধ্যে কেশবপ্রসাদের পুনর্বাসন নিয়ে এক দিকে যেমন দোটানায় দল, তেমনি ওবিসি সমাজের বড় মাপের নেতা মৌর্যের ওই পরাজয় লোকসভার আগে অশনি সঙ্কেত হিসাবে দেখছেন বিজেপি নেতৃত্ব। দল মনে করছে, উত্তরপ্রদেশে বৃহত্তর ওবিসি সমাজে বিজেপির প্রভাব যে কমছে এটা তারই প্রমাণ। নেতৃত্বের আশঙ্কা, আগামী লোকসভার নির্বাচনে যা নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে।
উত্তরপ্রদেশের ওবিসি ভোট প্রায় ৪০ শতাংশ। গত লোকসভা নির্বাচন থেকে বিজেপিকে সমর্থন করে এসেছে ওই ওবিসি সমাজ। কিন্তু যোগী সরকারের পাঁচ বছরের শাসনে ওবিসি সমাজ যে অসন্তুষ্ট তার আঁচ দিল্লিতে বসেই পাচ্ছিলেন নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহেরা। পরিস্থিতি অনুকূলে আনতে ওবিসি সমাজের জন্য শিক্ষা ও চাকরিতে সংরক্ষণ বাড়ানো, রাজ্যভিত্তিক ওবিসি তালিকা বানানোর মতো সিদ্ধান্ত নেয় কেন্দ্র। তাতে ওবিসি ভোটব্যাঙ্কের ধস নামা রোখা গেলেও, অতীতের সমর্থন ফিরে পায়নি বিজেপি। তবে ভোটের ফলাফল বিশ্লেষণ করে বিএসপি নেত্রী মায়াবতীর দাবি, ‘‘এ যাত্রায় সমাজবাদী পার্টির জঙ্গলরাজের সময়কাল স্মরণ করে ফের বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন ওবিসিরা। এমনকি যাদবের গুন্ডাগিরির কথা মাথায় রেখে দলিতেরাও বিজেপিকে ভোট দিয়েছেন।’’
মায়াবতী ওই দাবি করলেও, যে ভাবে কৌশাম্বী এলাকায় নিজের আসন সিরাথু থেকে মৌর্য হেরে গিয়েছেন, তা বিজেপির বেশ অস্বস্তির। দলের মতে, মৌর্য রাজ্যের অন্যতম বড় ওবিসি নেতা। শীর্ষ নেতার প্রতি ওবিসি সমাজের ওই অনাস্থা স্পষ্ট করে দিয়েছে বিজেপির থেকে তারা অনেকটাই সরে গিয়েছে। পরিবর্তে ওই আসন থেকে জিতেছেন আপনা দলের (কে)-এর পল্লবী পটেল। নবাগতা নেত্রী নিজেও ওবিসি সমাজের। বিজেপি শরিক আপনা দল (সোনেলাল)-এর নেত্রী অনুপ্রিয়া পটেলের নিজের বোন। বিজেপি শিবিরের মতে, ওই এলাকায় মৌর্য সমাজের ভোট পেলেও, পটেল, সোনেলাল, পাসি সমাজের ভোট পাননি মৌর্য। যা তাঁর হারের অন্যতম কারণ।
গতকাল মৌর্য হেরে যাওয়ায় তাঁর রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ নিয়ে প্রশ্ন উঠে গিয়েছে। এক সময়ে দলের রাজ্য সভাপতি ও উপমুখ্যমন্ত্রী থাকা মৌর্যের ভবিষ্যৎ নিয়ে বড় মাপের প্রশ্নচিহ্ন তৈরি হয়েছে। এক বিজেপির নেতার মতে, ‘‘ওই মাপের নেতাকে তো বসিয়ে রাখা যাবে না। প্রয়োজনে বিধান পরিষদ থেকে জিতিয়ে এনে ফের উপমুখ্যমন্ত্রী করা হতে পারে। কারণ, মৌর্যের মতো নেতা যদি বসে যান, তা হলে দলের ওবিসি ভোটব্যাঙ্কে আরও ধস নামার আশঙ্কা রয়েছে।’’ তবে যে ভাবে মাত্র তিন সপ্তাহের প্রচারে আপনা দল (কে) –এর প্রার্থী পল্লবী এসপির টিকিটে লড়ে মৌর্যের মতো পোড়খাওয়া নেতাকে হারিয়েছেন, তাতে অন্তর্ঘাতের সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না। দলের ওই অংশের মতে, মৌর্যের ডানা ছাঁটার উদ্দেশ্যে পরিকল্পিত ভাবে হারানো হয়েছে তাঁকে। মৌর্য জিতে পরপর দু’বার উপমুখ্যমন্ত্রিত্বের দাবিদার হলে, কিছু শিবিরের পক্ষে তা ভাল হত না।
তবে শুধু মৌর্যই নয় যোগী মন্ত্রিসভার তিন পূর্ণ মন্ত্রী ও আট প্রতিমন্ত্রী ভোটে হেরেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হার হল আখ বিভাগের মন্ত্রী সুরেশ রাণার। গোড়ায় বিজেপির বিরুদ্ধে পশ্চিম উত্তরপ্রদেশে যে প্রতিষ্ঠান বিরোধী হাওয়া ছিল তার শিকার হন রাণা। এ ছাড়া প্রতাপগড়ে হেরেছেন গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রী মোতি সিংহ। চম্বলের ডাকাত দাদুয়ার ভাইপো রাম কুমারের কাছে হেরেছেন তিনি।