অ্যাপের মাধ্যমে চাঁদা পাঠানো যাবে নরেন্দ্র মোদীকে।—ফাইল চিত্র।
বড় কর্পোরেট সংস্থার বিজ্ঞাপন ম্লান হয়ে যেতে পারে। কোনও প্রতিভাবান ফিল্মমেকারের তৈরি স্মার্ট শর্টফিল্মের সঙ্গে হেসেখেলে টক্কর নিতে পারে। ভোটের আগে দলের তহবিল ভরতে আড়াই মিনিটের এমনই এক বিজ্ঞাপন সোশ্যাল মিডিয়ায় ছেড়েছে বিজেপি। এ দেশের কোনও রাজনৈতিক দলের তরফ থেকে এত পেশাদার ভঙ্গিতে বিজ্ঞাপন আগে আর ক’টা হয়েছে, সে হিসেব কষতে গেলে রাজনৈতিক নেতারাও ধন্দে পড়বেন।
দাদু, তাঁর দুই নাতি-নাতনি আর পরিচারিকা— চরিত্র এই চার। কিন্তু কাহিনির আবর্তন মূলত দাদু আর নাতনি ‘মিঠী’কে ঘিরেই। পাঁচ টাকার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করতে গিয়ে নাতনিকে দাদু বোঝাচ্ছেন যে, নরেন্দ্র করতে মোদীর চার বছরের শাসনে দেশের বিকাশ ঊর্ধ্বমুখী। তার পরে বোঝাচ্ছেন— পাঁচ-দশ-পঞ্চাশ, যার যেমন সামর্থ, তাই দিয়ে যদি সাহায্য করেন ‘মোদীজি’কে, তা হলে আরও পাঁচ বছরের জন্য বিকাশ ঊর্ধ্বমুখীই থাকবে।
কী ভাবে সাহায্য করা যাবে টাকা দিয়ে? বিজ্ঞাপনের শেষাংশ জানাচ্ছে সে কথা। একটি নম্বরে মিস্ড কল দিতে বলা হচ্ছে। ওই মিস্ড কলের মাধ্যমে মোবাইলে ডাউনলোড করা যাবে নরেন্দ্র মোদী অ্যাপ। সেই অ্যাপের মাধ্যমে চাঁদা পাঠানো যাবে নরেন্দ্র মোদীকে।
আড়াই মিনিটের বিজ্ঞাপনে একাধারে নরেন্দ্র মোদীর ‘সাফল্যের’ প্রচার। তার সঙ্গেই নরেন্দ্র মোদী অ্যাপের প্রচার। তাতেই শেষ নয়— ভোটের আগে দলের তহবিল ভরার জন্য অভিনব প্রচার কৌশল। কর্পোরেট কায়দায় বিজ্ঞাপন দিয়ে চাঁদা চাইছে কোনও রাজনৈতিক দল— এ ছবি বেশ বিরল ভারতে।
আরও পড়ুন: বড়সড় ফিদায়েঁ হামলার ছক বানচাল, ১০ জনকে গ্রেফতার করল এনআইএ, উদ্ধার বিস্ফোরক
অ্যাপের মাধ্যমে নির্বাচনী তহবিল ভরার পরিকল্পনা আরও একটা সুবিধা দিতে পারে বিজেপি-কে। বলছেন সোশ্যাল মিডিয়া বিশেষজ্ঞরা। সাম্প্রতিক বিধানসভা নির্বাচনে তিনটি রাজ্য হাতছাড়া হওয়ার পরে হাওয়াটা ঠিক কী রকম, দলের জনভিত্তির চেহারাটা কোথায় দাঁড়িয়ে এখন, কোন রাজ্যে পরিস্থিতি ভাল, কোথায় খারাপ— অ্যাপ লঞ্চ করিয়ে চাঁদা তোলার এই প্রক্রিয়ায় তার আঁচ বেশ ভাল ভাবেই পাওয়া সম্ভব বলে বিশেষজ্ঞদের মত।
আরও পড়ুন: একমাত্র বাংলাতেই গণতন্ত্র নেই, মমতা এখন কিম জঙ-উন, তোপ কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর
বিজেপি বলছে, তিন রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচন যে সব ইস্যুর প্রেক্ষিতে হয়েছে, লোকসভা নির্বাচন সেই সব ইস্যুর প্রেক্ষিতে হবে না। সেখানে নরেন্দ্র মোদীর নামে ভোট চাওয়া হবে এবং তাতেই হাওয়া অন্য রকম হয়ে যাবে বলে বিজেপি নেতাদের দাবি। বেশ কিছু জনমত সমীক্ষাও ইঙ্গিত দিয়েছে যে, রাজস্থান, মধ্যপ্রদেশ বা ছত্তীসগঢ়ের মতো রাজ্যে বিধানসভা নির্বাচনে যাঁরা বিজেপি ভোট দিতে প্রস্তুত ছিলেন না, মোদীর নামে ভোট হলে লোকসভায় তাঁদের অনেকেই পদ্মফুলে ছাপ দিতে রাজি। সে সব সমীক্ষা কতটা ঠিক বলছে, অ্যাপের মাধ্যমে চাঁদা তুলে তার আঁচ অনেকটাই পাওয়া সম্ভব বলে বিজেপি নেতারা মনে করছেন। হিন্দি বলয়ের রাজ্যগুলিতে নরেন্দ্র মোদীর নামে কি এ বারও ঝড় তোলা যাবে? অ্যাপ লঞ্চ এবং চাঁদা আদায়ের বহরেই তার কিছুটা আভাস মিলবে বলে বিজেপি মনে করছে।