নীতীশ কুমার।
রাজগিরের বন বাংলো থেকে রবিবার পটনায় ফিরে রাতেই আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদকে ফোন করেন মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ কুমার। আর তার ১২ ঘণ্টার মধ্যেই দলের বিধায়ক ও নেতাদের তড়িঘড়ি ডেকে পাঠিয়ে বৈঠকে বসলেন লালু। বৈঠকের পর আরজেডি জানিয়ে দিল, দুর্নীতির অভিযোগ যতই উঠুক, উপমুখ্যমন্ত্রী পদ থেকে সরবেন না তেজস্বী। আর সেই ঘোষণার কিছুক্ষণ পরেই বিহার বিজেপি ঘোষণা করল, লালুর সঙ্গ ছাড়লে তারা নীতীশের সরকারকে বাইরে থেকে সমর্থন জানাতে তৈরি। সব মিলিয়ে সোমবার পটনার রাজনৈতিক পরিস্থিতি টানটান।
তবে এই টানাপড়েনের অন্যতম প্রধান কুশীলব, নীতীশ এ দিনও নীরব। আজ, মঙ্গলবার মুখ্যমন্ত্রী নিবাসে বসছে জেডিইউ-এর বৈঠক। সেখানে উপস্থিত থাকবেন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতারা। থাকবেন শাখা সংগঠনগুলির প্রধানরাও। পটনায় উপস্থিত দলীয় বিধায়কদেরও এই বৈঠকে থাকতে বলা হয়েছে। জেডিইউ সূত্রে জানা গিয়েছে, আলোচনার কেন্দ্রে থাকবেন সেই তেজস্বী।
প্রশ্ন হলো, তেজস্বী সম্পর্কে বা সার্বিক ভাবে যাদব পরিবারের বিরুদ্ধে ওঠা দুর্নীতির অভিযোগ নিয়ে নীতীশের মনোভাব কী? জেডিইউ সূত্রের বক্তব্য, নীতীশ দুর্নীতির সঙ্গে আপস করবেন না। গত কয়েক দশক ধরে যে পরিচ্ছন্ন ভাবমূর্তি তিনি গড়ে তুলেছেন, তা কোনওমতেই নষ্ট হতে দিতে চান না তিনি। তাই রবিবার রাতে ফোনে লালুকে বাজিয়ে দেখেন নীতীশ। এই সূত্রের দাবি, তেজস্বী ‘পরিচ্ছন্ন’ হয়ে ফের উপমুখ্যমন্ত্রীর কুর্সিতে ফিরুন, এই বার্তাই দেন লালুকে। পরিবর্তে আরজেডি প্রধানের আর এক ছেলে তেজপ্রতাপকে উপমুখ্যমন্ত্রী পদে বসানোর সমাধান সূত্রটিও তিনি দেন।
কিন্তু লালু পত্রপাঠ তা খারিজ করে দেন। নীতীশের ফোন রেখেই তিনি সোমবার জরুরি বৈঠক ডাকেন। সেই বৈঠকে তেজস্বীকে স্বপদে বহাল রাখার সিদ্ধান্ত অনুমোদন করিয়ে নিয়েছেন লালু। পরে রাজ্যের অর্থমন্ত্রী তথা আরজেডি নেতা আব্দুল বারি সিদ্দিকি, প্রবীণ নেতা জগদানন্দ সিংহ জানান, পরিষদীয় দলের সদস্যরা সকলেই জানিয়েছেন, পরিস্থিতি যাই হোক, তাঁরা তেজস্বীর পাশেই আছেন।
আরও পড়ুন: দিল্লিতে বসেই হুঁশিয়ারি চিনের
লালু তাঁর ‘বার্তা’ উপেক্ষা করার পরে কী করবেন নীতীশ? আরজেডি-র সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করবেন, না কি সরকার বাঁচানোর তাগিদে মুখ বুজে থাকবেন? নীতীশের দ্বিধা কাটাতে তড়িঘড়ি এগিয়ে আসে বিজেপি। সমস্ত রকম রাখঢাক সরিয়ে তাদের তরফে সরাসরি জানানো হয়, জোট ছাড়লে নীতীশের চিন্তা নেই। বাইরে থেকে তাঁকে সমর্থন দিতে তারা তৈরি। দলের রাজ্য সভাপতি নিত্যানন্দ রাইকে উদ্ধৃত করে সহ-সভাপতি দেবেশ কুমার এ কথা জানান। তিনি অবশ্য একই সঙ্গে অবশ্য বলেন, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। যদিও ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ছাড়পত্র ছাড়া রাজ্য নেতৃত্ব এমন ঘোষণা করল। এটা হতেই পারে না।
ফলে দিনের শেষে বল সেই নীতীশের কোর্টে। রাজ্যের রাজনীতিকদের অনেকেরই ধারণা, আগামী ২৪ ঘণ্টায় নীতীশ হয়তো এ ব্যাপারে ‘আলোকপাত’ করবেন। তবে তিনি পুরোপুরি নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহের পুরোপুরি কব্জায় চলে যাবেন এমনটা মনে করছেন না তাঁরা।