বিরোধীরা সমস্বরে বলে যাচ্ছেন, ঠিকঠাক প্রস্তুতি না নিয়েই নোট বাতিলের ঘোষণা করে দিয়ে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী গোটা দেশকে দুর্ভোগে ফেলেছেন। কিন্তু নোট বাতিলের কিছু দিন আগেই বিহারে নগদ টাকায় বিজেপির জমি কেনার কথা সামনে আসতেই বিরোধীরা এখন মোদী, অমিত শাহদের ‘দুর্নীতি’ নিয়ে মুখর।
এমনকী, যে নীতীশ কুমার বাকি বিরোধীদের থেকে আলাদা অবস্থান নিয়ে নোট বাতিলের পক্ষে কথা বলছিলেন, তাঁর দল এখন এই ‘জমি কেলেঙ্কারি’ নিয়ে তদন্তের দাবি তুলেছে। বিজেপির বক্তব্য, প্রতি বছরই পার্টি অফিসের জন্য জমি কেনা হয় দলের টাকায়। এর সঙ্গে নোট বাতিলের সম্পর্ক নেই।
নোট বাতিলের আগেই তার খবর কিছু সংবাদপত্রে বেরিয়ে যাওয়া বা পশ্চিমবঙ্গে বিভিন্ন ব্যাঙ্কে বিজেপির মোটা টাকা জমা দেওয়া নিয়ে বিতর্ক চলছিলই। এ বার আরও জোরালো ভাবে অভিযোগ উঠে এল যে, নোট নিয়ে সিদ্ধান্ত মাত্র কয়েক জনের মধ্যে সীমাবদ্ধ ছিল বলে মোদী সরকার যে দাবি করছে, তা ঠিক নয়। বিরোধীদের দাবি, মোদী যে নোট বাতিল করতে পারেন, সে কথা আগেই জেনে গিয়েছিল বিজেপি। তাই আগেভাগেই রাজ্যে রাজ্যে তারা সঙ্কট মোকাবিলায় নেমে পড়েছিল। বিহারে যেমন গত অগস্ট-সেপ্টেম্বরে বেশ কয়েকটি জেলায় জলের দরে নগদে জমি কিনেছে বিজেপি। কংগ্রেসের দাবি, দলের হয়ে জমি কেনায় বিজেপি সভাপতি অমিত শাহের নামও রয়েছে। সূত্রের খবর, বিহারের মধুবনী, কাটিহার, মাধেপুরা, লখিসরাই, কিষানগঞ্জ এবং অরওল জেলায় ২৫০ বর্গফুট থেকে প্রায় দেড় একর পর্যন্ত জমি কিনেছে বিজেপি। দাম হিসেবে ৮ লক্ষ থেকে ১ কোটি ১৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত দেওয়া হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী নীতীশ নিজে এ নিয়ে মুখ না খুললেও তাঁর দল টুইটারে এ নিয়ে বিজেপিকে খোঁচা দিতেও ছাড়েনি। সংযুক্ত জনতা দলের নেতাদের মন্তব্য, ‘চেক বা প্লাস্টিক কার্ডে লেনদেনের দাবি করে বেড়ান যাঁরা, তাঁরাই নগদে জমি কিনেছেন, তা-ও আবার নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের আগে!’ বিহারে দলের মুখপাত্র ও বিধান পরিষদের সদস্য নীরজ কুমার টুইটারে লিখেছেন, ‘সুপ্রিম কোর্টের বিচারপতির নেতৃত্বে এই পাহাড়প্রমাণ দুর্নীতির তদন্ত হোক।’
বিজেপির রাজ্য নেতাদের বক্তব্য, প্রতি বছরই দেশের বিভিন্ন জেলা ও ব্লক স্তরে নতুন দলীয় দফতর তৈরি হয়। স্থানীয় পার্টি সদস্যরা টাকা তুলে ওই জমি কেনেন। চলতি বছরেও বিহারের ৫টি জেলায় দলীয় দফতর তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। রাজ্যের পার্টি তহবিলের টাকায় আইন মেনেই অগস্ট মাসে ওই জমি কেনা হয়েছে।
বিজেপি নেতা তথা রাজ্যের প্রাক্তন উপ-মুখ্যমন্ত্রী সুশীল মোদী বলেন, ‘‘নিয়ম মেনেই সব করা হয়েছে।’’ বিজেপি বলছে, জমি রেজিস্ট্রারের দফতরের নথিতেই তো বলা আছে, বিধায়ক সঞ্জীব চৌরসিয়া-সহ দলের বিভিন্ন শীর্ষস্থানীয় নেতার নামে জমি কেনা হয়েছে। আর সঞ্জীব চৌরসিয়ার বক্তব্য, ‘‘পার্টি অফিস তৈরির জন্য দল টাকা দিয়েছে। পার্টির নেতা হিসেবে আমরা তাতে সই করেছি, এতে অন্যায়ের কী আছে!’’