টিকিটের জন্য তৎপর রাজদীপ

লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়ানোর কুচকাওয়াজ শুরু করে দিলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায়। দলের মঞ্চে দাবি পেশের সময় এখনও হয়নি। কিন্তু বসে থাকারও সুযোগ নেই।

Advertisement

উত্তম সাহা

শিলচর শেষ আপডেট: ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৬ ০৩:৪১
Share:

লোকসভা নির্বাচনে দাঁড়ানোর কুচকাওয়াজ শুরু করে দিলেন রাজ্য বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায়। দলের মঞ্চে দাবি পেশের সময় এখনও হয়নি। কিন্তু বসে থাকারও সুযোগ নেই। শুরুতে তাই শহরবাসীর সঙ্গে সম্পর্ক গাঢ়তর করে নেওয়ার ছক কষছেন তিনি। রাজদীপ মাঠে নামলেন সেই ‘বিমলাংশু রায় ফাউন্ডেশন’-এরই হাত ধরে।

Advertisement

প্রাক্তন বিধায়ক প্রয়াত বিমলাংশু রায়ের বড় ছেলে রাজদীপ। সংগঠনে অত্যন্ত প্রভাবশালী নেতা ছিলেন বিমলাংশুবাবু। সেই পরিচিতিকে কাজে লাগিয়ে তিনি পিতার প্রথম মৃত্যুবার্ষিকীতে স্মারক বক্তৃতা করতে এনেছিলেন অরুণ জেটলিকে। বর্তমান অর্থমন্ত্রী তখন ছিলেন রাজ্যসভার বিরোধী দলনেতা।

সেটা ২০১০ সাল। ক’দিন পর বিধানসভা নির্বাচনে শিলচরের টিকিট পেতে খুব বেশি বেগ পেতে হয়নি তাঁকে। যদিও শেষ পর্যন্ত কংগ্রেস প্রার্থী সুস্মিতা দেবের সঙ্গে পেরে ওঠেননি। পরে সুস্মিতা দেব সাংসদ হয়ে বিধানসভার আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে বিজেপির টিকিট
পেয়ে যান দিলীপকুমার পাল। জিতেও যান বিরাট ব্যবধানে। বিধানসভায় ঢোকার রাস্তা যে বন্ধ হয়ে গিয়েছে, তা বুঝতে কষ্ট হয়নি অস্থি-বিশেষজ্ঞ রাজদীপ রায়ের। এ বার তাই বিধানসভা ভোটে দাঁড়াতে চাননি। পাখির চোখ করেছেন ২০১৯ সালের লোকসভা ভোটকেই।

Advertisement

ফের পুরনো কৌশল। আবারও বড় কর্মসূচি হাতে নিলেন বিমলাংশু রায় ফাউন্ডেশনের নামে। আগামী ১৯ সেপ্টেম্বর বিমলাংশু রায়ের জন্মদিনে স্মারক বক্তৃতার আয়োজন করলেন। এ বার মূল বক্তা দু’জন। রেলমন্ত্রী সুরেশ প্রভাকর প্রভু ও রাজ্যের অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা। কেন্দ্র-রাজ্যে দু’জনই এখন অতি শক্তিশালী। অসম সরকারের ‘সেকেন্ড-ইন-কম্যান্ড’ হিমন্তবাবু শিলচর বঙ্গভবনে উপস্থিত থেকে ‘লুক ইস্ট থ্রু নর্থ-ইস্ট’ বিষয়ে বক্তৃতা করবেন। রেলমন্ত্রী প্রভু সামিল হবেন ভিডিও কনফারেন্সে। আরও একজনকে তিনি সেদিন বক্তৃতার জন্য আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। তিনি হলেন তাপস পাল। শিলচরের এই কৃতী সন্তান বর্তমানে বিশ্বব্যাঙ্কের পরামর্শদাতা। ব্রহ্মপুত্র খননের যে চুক্তি অসম সরকার ও বিশ্বব্যাঙ্কের মধ্যে হয়েছে, বর্তমানে সেই প্রকল্পের তিনিই ডিরেক্টর।

তাঁকে মঞ্চে তোলাও এক বিশেষ কারণে। আসলে টিকিট-কৌশলের সঙ্গে রাজদীপবাবু শহরের বিশিষ্টজনদের মনজয়েরও কৌশল ছকে ফেলেছেন। যাঁরা রাজনীতির সঙ্গে সরাসরি জড়িত নন, কিন্তু জনমত গঠনে মূল্যবান, তাঁদের ডেকে দু-দিন আগে কনক্লেভ করলেন। ইস্যু
‘স্বপ্নের বরাক’।

বরাক নিয়ে তাঁর নিজের স্বপ্নের কথা তিনি আগেও বহুবার বহু ফোরামে উল্লেখ করেছেন। এ বার জানতে চাইছেন অন্যরা কী ভাবেন এ নিয়ে। এরই মধ্যে দু’দফায় এই ‘জানাজানি’-র পর্ব সেরে নিয়েছেন। প্রথমে স্কুল-কলেজের ছাত্রছাত্রীদের কাছে লিখিতভাবে তাদের ‘স্বপ্নের বরাক’ কেমন হবে, জানতে চেয়েছেন। এটি ছিল প্রতিযোগিতামূলক। দশম শ্রেণি ও তার নীচে একটি বিভাগ। তাতে পুরস্কৃত করা হবে সৃঞ্জয়কুমার ভরদ্বাজ (মহর্ষি বিদ্যামন্দির), সন্দীপন মিশ্র (সাউথ পয়েন্ট স্কুল), অঙ্কিতা রায় (সাউথ পয়েন্ট স্কুল), নউরতা শীল (মহর্ষি বিদ্যামন্দির) ও নিকিতা দাস (ডিএন উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়)-কে। দশম-উর্ধ্বদের বিভাগে শুভম পাল (গুরুচরণ কলেজ), পঞ্চমী নাথ (স্বর্ণলক্ষ্মী উচ্চতর মাধ্যমিক বিদ্যালয়), ইসমত আরা মজুমদার (হোলিক্রশ স্কুল), সৌরভ ভট্টাচার্য (গুরুচরণ কলেজ) এবং অনুরূপা দাস (রামানুজ গুপ্ত জুনিয়র কলেজ)-কে।

এরপর সেই কনক্লেভ। জয়দীপ বিশ্বাস ও অরিজিত আদিত্যের সঞ্চালনায় শহরের নামকরা চিকিৎসক, ওজনদার ব্যবসায়ী, বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের কর্মকর্তাদের মতামত জানতে চাওয়া হয়। প্রাক্তন সাংসদ, কংগ্রেস নেতা কমলেন্দু ভট্টাচার্য থেকে দুই অতিরিক্ত জেলাশাসক জিতু দাস (কাছাড়) ও বি সি নাথ (করিমগঞ্জ), দুই পুলিশ সুপার রাজবীর সিংহ (কাছাড়) ও প্রণবজ্যোতি গোস্বামী (হাইলাকান্দি), উত্তর-পূর্ব সীমান্ত রেলের ডেপুটি চিফ ইঞ্জিনিয়ার এস পি দেশমুখ, পূর্ত বিভাগের এগজিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার মলয় দেবও নিজেদের ভাবনা তুলে ধরেন। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণ, জঞ্জাল নিষ্কাশন, রাস্তাঘাট তৈরি ইত্যাদিই অধিকাংশের স্বপ্ন হলেও দু’-একটি প্রস্তাব বেশ ভাববার।

এর মধ্যে রয়েছে অরুণাচল থেকে চন্দ্রনাথপুর লাইন নির্মাণ, পাহাড় লাইনে পরিত্যক্ত রেললাইনের উপর দিয়ে সড়ক নির্মাণ, অফিসপাড়া শিলচর শহর থেকে সরানো, বর্ডার ট্যুরিজমে গুরুত্ব আরোপের মতো প্রস্তাবগুলি প্রকৃত অর্থেই স্বপ্ন দেখায়। রাজদীপবাবু জানান, ‘‘সেই সব স্বপ্ন পূরণে কী কী করা যেতে পারে, তাপস পাল তা নিয়েই বলবেন।’’

এ ভাবেই সাধারণ মানুষের মনে আস্থা বাড়বে, কেন্দ্র-রাজ্যে ক্ষমতাসীন বিজেপির নেতা রাজদীপবাবু স্বপ্নের বরাক গড়ার প্রাথমিক কাজ শুরু করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে শুরু লোকসভায় যাওয়ার বহু লালিত ‘স্বপ্ন’ পূরণের প্রাথমিক কাজকর্ম।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement