BJP

জাতগণনার মোকাবিলায় পিছিয়ে পড়াদের আরও পদ দেবে বিজেপি

মাস খানেক আগে বিহার সরকার সে রাজ্যের জাতভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশিত করার পর থেকেই গোটা দেশে ওই ধাঁচের জনগণনার দাবি তুলে সরব হয় কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল।

Advertisement

অনমিত্র সেনগুপ্ত

নয়াদিল্লি শেষ আপডেট: ০৫ নভেম্বর ২০২৩ ০৭:৩৪
Share:

—প্রতীকী ছবি।

বিরোধীরা তো বটেই, জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলে সরব এনডিএ শরিকেরাও। ক্রমশ এ নিয়ে দেশ জুড়ে দাবি উঠতে শুরু করায় বিজেপি নেতৃত্ব পাল্টা পদক্ষেপে দল, মন্ত্রিসভা, বিভিন্ন নিগম ও পর্ষদে আরও বেশি করে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ও দলিত সমাজের প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। বিরোধীরা যাকে লোকদেখানো পদক্ষেপ বলে মন্তব্য করেছেন।

Advertisement

আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে পরীক্ষামূলক ভাবে দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষকে দলে আরও বেশি করে শামিল করতে চলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। বিজেপির এক নেতার কথায়, ‘‘দলের একেবারে তৃণমূল স্তর থেকে মন্ত্রিসভা, প্রায় সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে প়ড়া শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতেই ওই উদ্যোগ। চলতি সপ্তাহে দিল্লিতে বিজেপি সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নড্ডার সঙ্গে দলের শীর্ষ পদাধিকারীদের বৈঠকের পরেই এই কাজ শুরু করার জন্য উত্তরপ্রদেশকে বেছে নেওয়া হয়েছে।’’

যোগী-রাজ্যকে বেছে নেওয়ার পিছনে অন্য একটি কারণ, এই রাজ্যের বড় সংখ্যক মানুষ পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ও দলিত সম্প্রদায়ের। তাঁদের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে এক দিকে যেমন ওই সমাজের ভোটারদের বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে, তেমনি আপনা দল, হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চা সেকুলার, নিশাদ পার্টি, সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির মতো এনডিএ-র আঞ্চলিক শরিক দলগুলির (যারা জাতভিত্তিক জনগণনার দাবি তুলেছে) পাশে থাকার বার্তা দেওয়া সম্ভব হবে।

Advertisement

মাস খানেক আগে বিহার সরকার সে রাজ্যের জাতভিত্তিক জনগণনার রিপোর্ট প্রকাশিত করার পর থেকেই গোটা দেশে ওই ধাঁচের জনগণনার দাবি তুলে সরব হয় কংগ্রেস-সহ একাধিক বিরোধী দল। বিজেপি গোড়া থেকেই তা নিয়ে অনীহা প্রকাশ করে বলে এসেছে, জাতের ভিত্তিতে দেশকে ভাগ করা উন্নয়নবিরোধী পদক্ষেপ। প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী অভিযোগ তোলেন, বিরোধীরা জাতের ভিত্তিতে দেশকে ফের এক বার ভাগ করতে চাইছেন। কিন্তু বিরোধীদের সুরেই আপনা দল, নিশাদ পার্টি কিংবা হিন্দুস্তান আওয়াম মোর্চার মতো পিছিয়ে থাকা শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব করা এনডিএ-শরিক দলগুলি জাতিভিত্তিক জনগনার পক্ষে দাবি তুললে কিছুটা নরম হতে বাধ্য হন বিজেপি শীর্ষ নেতৃত্ব। খোদ অমিত শাহ ছ্ত্তীসগঢ়ের জনসভা থেকে বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করায় জোর দেন। যে মন্তব্য যথেষ্ট তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছেন রাজনীতিকদের একাংশ।

তাঁদের মতে, আলোচনার কথা বলে বিষয়টিকে অনির্দিষ্টকালীন সময় ধরে ঝুলিয়ে রাখার কৌশল নিতে চাইছেন বিজেপি নেতৃত্ব। পাশাপাশি সেই সময়ের মধ্যে একাধিক পদক্ষেপের মাধ্যমে পিছিয়ে পড়া শ্রেণি ও দলিত শ্রেণির ভোটব্যাঙ্কের সমর্থন নিশ্চিত করার কৌশল নিয়েছেন তাঁরা। সেই লক্ষ্যপূরণে যেমন প্রতিটি বুথ কমিটিতে দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে বলা হয়েছে, তেমনি ‘পৃষ্ঠা প্রমুখ’ হিসেবেও দায়িত্ব দেওয়া হবে পিছিয়ে পড়া শ্রেণিভুক্ত দলীয় কর্মীদের। পাশাপাশি মণ্ডল, ব্লক, জেলা ও রাজ্যস্তরের প্রতিটি কমিটিতে স্থান দেওয়া হবে পিছিয়ে পড়া কর্মীদের।

বিজেপি সূত্রের মতে, খুব দ্রুত উত্তরপ্রদেশের মন্ত্রিসভার সম্প্রসারণ হতে চলেছে। সেখানে স্থান পেতে চলেছেন এনডিএ-র শরিক দল সুহেলদেব ভারতীয় সমাজ পার্টির নেতা সুহেলদেব। আপনা দল থেকেও কাউকে মন্ত্রিসভায় স্থান দেওয়া যেতে পারে কি না, তা-ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এ ছাড়া বিভিন্ন যে নিগম, বোর্ড ও পর্ষদগুলি রয়েছে, সেগুলিতেও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির প্রতিনিধিত্ব বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল।

সরকারের বিভিন্ন ধরনের জনমুখী প্রকল্পের সুবিধা অনেক ক্ষেত্রেই পান না পিছিয়ে থাকা শ্রেণির লোকেরা। তা মাথায় রেখে ২৫ নভেম্বর থেকে দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মানুষের বাড়ি বাড়ি ঘুরে কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা তারা পাচ্ছেন কি না তা খতিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নিয়েছে দল। দলীয় কর্মীরা পথে নামলে এতে এক দিকে কেন্দ্রের বিভিন্ন জনমুখী প্রকল্পের সুফলগুলি নিয়ে প্রচার সম্ভব হবে, তেমনি দলিত ও পিছিয়ে পড়া শ্রেণির মধ্যে দলের জনভিত্তি বাড়বে বলে আশা করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। যদিও, কংগ্রেসের বক্তব্য, দশ বছর কেন্দ্রে শাসন করার পরে বিজেপির মনে হয়েছে পিছিয়ে থাকা শ্রেণির জন্য তারা কিছুই করেনি। এই কথাটাই বিরোধীরা এত দিন বোঝাতে চাইছিল। এরা যদি সত্যিই কিছু করতে চায়, তা হলে সবার আগে জাতভিত্তিক জনগণনা করুক।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement