পুলিশ প্রস্তুত যে কোনও অপ্রীতিকর পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য। বিজেপি শিবির ব্যস্ত আগামী কালের বনধ সফল করে তোলার পরিকল্পনায়। এআইইউডিএফ বনধের বিরোধিতা করছে। কংগ্রেস বনধের পক্ষেও নেই, সক্রিয় বিরোধিতায়ও যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। পুলিশ সুপারের কুশপুতুল দাহ, নতুন দু-একটি এজাহার দায়ের ছাড়া আজ শহরে গত কালের উত্তেজনার চিহ্নমাত্র নেই। তবে বনধ ঘিরে সাধারণ মানুষের মধ্যে উৎকণ্ঠা রয়েছে।
বিধায়ককে অন্যায় ভাবে গ্রেফতার, নেতাদের সঙ্গে অশালীন আচরণ এবং লাঠিচার্জের অভিযোগ এনে কাছাড়ের পুলিশ সুপার রজবীর সিংহের বদলি এবং পুরো ঘটনার বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিতে আগামী কাল বরাক উপত্যকার তিন জেলায় বনধের ডাক দিয়েছে বিজেপি। একই দাবিতে আজ তাঁরা কাছাড়ের প্রায় প্রতিটি থানা ও পুলিশচৌকির সামনে পুলিশ সুপার সিংহের কুশপুতুল দাহ করে। শিলচরে কুশপুতুল দাহ করা হয় পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে। পুলিশের কাছে খবর ছিল, গেরুয়া বাহিনী সদর থানার সামনে আসছে। তারা থানার সামনে বাঁশের ব্যারিকেড গড়ে তোলে। কিন্তু মিছিল ওই পথেই যায়নি। কুশপুতুল নিয়ে দলীয় কার্যালয় থেকে শহর পরিক্রমা করে তাঁরা পৌঁছন পুলিশ সুপারের কার্যালয়ের সামনে। পুরো মিছিলে নেতৃত্ব দেন দলের প্রদেশ সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায়, পার্থ চন্দ, বীরেশ বন্দ্যোপাধ্যায়, বিজেন্দ্রপ্রসাদ সিংহ, কাজল রায়, বিপ্লব দেবনাথ, ভাগ্যরানি পাল ও মধুমিতা নাগ।
জেলা বিজেপির সভাপতি কৌশিক রাই জানান, পুলিশ সুপারের বিরুদ্ধে এ দিন তাঁরা দুটি এজাহার দিয়েছেন। একটি করেছেন শিলচর শহর বিজেপির সভাপতি দীপায়ন চক্রবর্তী। তাঁর অভিযোগ, গত কাল ধৃত বিধায়ক দিলীপকুমার পালের খবর নিতে গেলে পুলিশ সুপার তাঁকে শারীরিক নিগ্রহ করেন। চশমা ভেঙে দেন। অন্য এজাহারে মহিলা মোর্চার মধুমিতা নাগ, সন্ধ্যা আচার্য সহ ৩৬ জন বিনা প্ররোচনায় লাঠিচার্জের অভিযোগ করেছেন। মহিলা মোর্চা জানিয়ে দিয়েছে, মঙ্গলবার তাঁরা পুলিশ সুপারের অফিসের সামনে ঝাড়ু হাতে বিক্ষোভ দেখাবেন।
এআইইউডিএফ থেকে বহিষ্কৃত কাটিগড়ার বিধায়ক আতাউর রহমান মাঝারভুইয়া বর্তমান পরিস্থিতির জন্য বিজেপি নেতাদের দিকে তোপ দাগেন। তিনি বিজেপি বিধায়ক দিলীপকুমার পালকে অভিযুক্ত করে জানান, তিনি নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই হিংসার ঘটনা বাড়ছে। এআইইউডিএফ আজ জেলাশাসক ও এসপিকে স্মারকপত্র দিয়ে বলেছে, একটি চক্র হিংসা ছড়ানোর কাজ করছে। তাদের শনাক্ত করে শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।
বিজেপির সাধারণ সম্পাদক রাজদীপ রায় পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ‘‘বরাক জুড়ে হিংসা কায়েমে বনধ বিরোধী কমিটি গঠিত হয়েছে। এরা ব্যবসায়ীদের দোকানপাট খোলা রাখার জন্য চাপ দিচ্ছে।’’ ফলে কাল কী হবে, এ নিয়ে তাঁরা আশঙ্কায়। রজবীর সিংহের উপর তাঁরা যে আর আস্থা রাখতে পারছেন না, সে কথা বারবার উল্লেখ করেন তিনি। তিনি জানান, গত রাতে জেলা বিজেপির সভাপতি কৌশিক রাইয়ের ব্যক্তিগত দেহরক্ষী প্রত্যাহার করা হয়েছে।
এ দিকে, আইন-শৃঙ্খলার খোঁজখবর নিতে আইজিপি এসএন সিংহ আজই শিলচর এসে পৌঁছেছেন। তিনি কাল এখানে অবস্থান করবেন। পুলিশ সুপার সিংহ আজ শিলচরের টাউন দারোগার দায়িত্ব থেকে চম্পক শইকিয়াকে সরিয়ে দিয়েছেন। তাঁকে রাঙ্গিরখাড়ি থানায় অ্যাটাচড অফিসার হিসেবে পাঠানো হয়েছে। নতুন টাউন দারোগা হয়েছেন কে রংমাই।
কাছাড়ের ভারপ্রাপ্ত জেলাশাসক এম কে দাস জানিয়েছেন, পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রশাসন প্রস্তুত রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় ম্যাজিস্ট্রেটদের দায়িত্ব ভাগ করে দেওয়া হয়েছে। তাঁরা নিজেদের এলাকায় সকাল থেকে দায়িত্ব পালন করবেন।
কংগ্রেস নেতারা বিধায়ক সহ বিজেপি নেতাদের গ্রেফতার করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশ সুপার রজবীর সিংহকে বাহবা দিয়েছেন। তাঁকে নির্ভয়ে কাজ চালিয়ে যেতে পরামর্শ দেন তাঁরা। শহর কংগ্রেস কমিটির সভাপতি শৈবাল দত্ত বিজেপি-কে অভিযুক্ত করে বলেন, এঁরা বরাকে অশান্তি সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। পায়ের নীচে মাটি নেই বলে হিংসার রাস্তায় হাঁটছেন। তবে বিজেপির বন্ধে তাঁদের ভূমিকা থাকবে না বলে শৈবালবাবু জানিয়েছেন।
নানা রকমের গুজবের মধ্যেই একদল লোক শান্তি সম্প্রীতি অক্ষুন্ন রাখার জন্য সভা-সমিতি করে চলেছেন। মেহেরপুরে কাল বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মানুষ বৈঠকে মিলিত হয়ে এলাকায় সম্প্রীতি বজায় রাখার ব্যাপারে সহমত ব্যক্ত করেন। সম্প্রীতি বজায় রাখার আহ্বান জানিয়েছে সম্মিলিত সাংস্কৃতিক মঞ্চও। ২৮টি সাংস্কৃতিক সংগঠনের জোটের সভাপতি আশিস ভৌমিক ও সম্পাদক অজয় রায় বলেন, বরাক উপত্যকা নানা সমস্যায় জর্জরিত। ছ’মাসের কথা বলে রেলের মেগাব্লক এক বছর হচ্ছে। সড়কগুলি যানবাহন চলাচলের উপযুক্ত নয়। এনআরসি, বিদেশি সমস্যা ইত্যাদিতে মানুষ দুশ্চিন্তায়। এই সব সমস্যা থেকে সাধারণ জনতার দৃষ্টি ঘুরিয়ে দেওয়ার ষড়যন্ত্র চলছে। কেউ যেন এর ফাঁদে পা না দেন— তাঁরা আর্জি জানান।