ডিএমকে-র নেতা ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিন। ফাইল চিত্র।
বিরোধী ঐক্যের যে হাওয়া তৈরি হয়েছে রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজ হওয়ার পর, তা আরও জোরালো করতে আগামী সোমবার ডিএমকে-র নেতা ও তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী এম কে স্ট্যালিনের ডাকে চেন্নাইয়ে বসছে বিরোধী নেতা এবং মুখ্যমন্ত্রীদের সম্মেলন। অংশগ্রহণকারীদের সুবিধার্থে ওই সম্মেলনে কিছু নেতা সরাসরি থাকবেন, অনেকে ভিডিয়ো মাধ্যমে যোগ দেবেন।
স্টালিনের কার্যালয় থেকে চিঠি গিয়েছে বিভিন্ন বিরোধী দলের বিরোধী নেতাদের কাছে। রাজনৈতিক সূত্রে জানা গিয়েছে, এখনও পর্যন্ত কাকে প্রতিনিধি হিসাবে নির্দিষ্ট করা হয়েছে তা জানিয়ে দিয়েছে দলগুলি। যোগ দেবেন তৃণমূলের ডেরেক ও'ব্রায়েন, এসপি-র অখিলেশ যাদব, আরজেডি-র তেজস্বী যাদব, আপ-এর সঞ্জয় সিংহ, জেএমএম-এর হিমন্ত সোরেন, বিআরএস-এর কে কেশব রাও, এনসি-র ফারুক আবদুল্লা-র মতো নেতারা। এখনও পর্যন্ত ঠিক আছে, কংগ্রেস, আপ, এনসিপি-সহ মোট ১৯টি দলের নেতা উপস্থিত থাকবেন সোমবারের বৈঠকে। উপস্থিত থাকার কথা বিজেডি এবং জগন কংগ্রেসের প্রতিনিধিরও। জানা গিয়েছে, আলোচনার বিষয়বস্তু হিসাবে রাখা হয়েছে সামাজিক ন্যায় এবং ভারতের গতিপথ। 'অল ইন্ডিয়া ফেডারেশন ফর সোশ্যাল জাস্টিস ফোরাম' এই আলোচনার আয়োজক। রাজনৈতিক সূত্রের বক্তব্য, সামাজিক ন্যায় বিষয়ক আলোচনার মোড়কে আসলে মোদী- বিরোধী অবিজেপি দলগুলিকে আরও সংঘবদ্ধ করার এটি একটি প্রয়াস।
গত সোমবার রাহুল গান্ধীর সদস্যপদ খারিজের এক দিন পরই কংগ্রেসের নেতৃত্বের মল্লিকার্জুন খড়্গের বাসভবনে বিরোধী দলগুলির সংসদীয় নেতাদের বৈঠকে স্থির হয়েছিল ঘন ঘন বিভিন্ন স্তরে এই আলোচনা এবং বিরোধিতার কৌশলসন্ধান চলতে থাকবে। কংগ্রেস প্রথমে স্থির করে, এক সপ্তাহ পরেই সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের নিয়ে দিল্লিতে বৈঠক করা হবে। কিন্তু পরে ভেবে দেখা হয়, অযথা তাড়াহুড়ো না করে এপ্রিলে এই বৈঠক করা হবে। এরই মাঝে স্ট্যালিন সামাজিক ন্যায়ের মোড়কে আলোচনার প্রস্তাবটি নিয়ে সমমনস্ক রাজনৈতিক দলগুলির সঙ্গে আলোচনা সেরে নেন। প্রায় সবাই রাজি হওয়ায় আনুষ্ঠানিকভাবে চিঠি পাঠানো হয়।
এই সম্মেলনের সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য দিক, বিজেডি এবং জগন কংগ্রেসের এই বৈঠকে যোগদানের কথা ভাবা। এরা বিরোধী সমাবেশে কার্যত নতুন অতিথি। সংসদে বিজেপি বি টিম বা পরোক্ষ শরিক হিসাবেই এই দুই দলের পরিচয়। তা হলে কী ভাবে হচ্ছে এই অসাধ্যসাধন? তৃণমূল শিবির শুধু মনে করিয়ে দিতে চাইছে, পাঁচ দিন আগেই ওড়িশায় বিজেডি সর্বাধিনায়ক তথা মুখ্যমন্ত্রী নবীন পট্টনায়কের সঙ্গে বৈঠক সেরে এসেছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যান্য আঞ্চলিক দলের নেতাদের সঙ্গেও তাঁর নিয়মিত যোগাযোগ রয়েছে বলে জানিয়েছেন তৃণমূলের সংসদীয় নেতৃত্ব। গতকালই তিনি সমস্ত বিরোধী দলগুলিকে বিজেপি-র বিরুদ্ধে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন এবং প্রসঙ্গক্রমে অন্য বিরোধী নেতাদের সঙ্গে জগনের নামও করেছেন। ফলে চেন্নাইয়ের মঞ্চে জগন এবং নবীনের দলের প্রতিনিধিদের যোগদানে তৃণমূল নেত্রীর সক্রিয়তার দিকটি তুলে ধরছে তৃণমূল।
তৃণমূলের রাজ্যসভার নেতা ডেরেক ও'ব্রায়েনের কথায়, “বিরোধী ঐক্য ধারাবাহিক প্রক্রিয়া। ধাপে ধাপে এগোনো প্রয়োজন। সংসদের ভিতরে ও বাইরে সব বিরোধী দলকে একজোট হওয়ার ডাক দিয়েছেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কলকাতা থেকে। কোনও একটি মুখকে সামনে আনার প্রশ্ন নেই। এটা সমবেত প্রয়াস।” ডেরেক জানান, সোমবার মমতা মেদিনীপুরে থাকবেন, তাই তাঁর পক্ষে ওই বৈঠকে যোগ দেওয়া সম্ভব হবে না। দলের প্রতিনিধিত্ব করবেন ডেরেক।