বিপিন রাওয়ত।
কাশ্মীরে পাকিস্তানি হামলা ও জঙ্গি সন্ত্রাসের মোকাবিলায় ফের পদক্ষেপ করা প্রয়োজন বলে মনে করেন সেনাপ্রধান বিপিন রাওয়ত। তাঁর মতে, উপত্যকায় পুলিশকর্মীদের হত্যা রুখতে যুবকদেরই রুখে দাঁড়াতে হবে।
আজ এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তান ও কাশ্মীর প্রসঙ্গে নানা প্রশ্নের জবাব দেন সেনাপ্রধান। তাঁর কথায়, ‘‘চলতি বছরের মে মাসে সীমান্তে সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন থামানোর প্রস্তাব দেয় পাকিস্তান। আমরা তা মেনেও নিই। সংঘর্ষ চললে বেশি বিপাকে পড়েন পাকিস্তানের মানুষই। তাঁরা সীমান্তের বেশি কাছে থাকেন।’’ রাওয়ত জানিয়েছেন, সংঘর্ষবিরতি লঙ্ঘন থামাতে পাক প্রস্তাব মেনে নেওয়ার পরেও জঙ্গি অনুপ্রবেশ কমেনি। সীমান্তে পরিস্থিতিও বদলায়নি।
রাওয়তের কথায়, ‘‘পাক সরকার সে দেশের সেনাবাহিনী ও আইএসআইকে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে পরিস্থিতি বদলানোর কোনও সম্ভাবনা নেই। সন্ত্রাস বন্ধ না হলে আলোচনা না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ভারত সরকার। ভারতীয় সেনাবাহিনী সেই সিদ্ধান্তের সঙ্গে সম্পূর্ণ একমত।’’ সেনাপ্রধানের মতে, পাকিস্তানকে এমন কিছু পদক্ষেপ করতে হবে যা থেকে বোঝা যায়, সন্ত্রাস দমনে তারা আন্তরিক। কিন্তু এখনও তেমন কোনও ইঙ্গিত মেলেনি। ফের কি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক প্রয়োজন? রাওয়তের কথায়, ‘‘কোনও একটা পদক্ষেপ নিশ্চয়ই প্রয়োজন। তবে তা কবে, কী ভাবে করা সম্ভব তা আমি প্রকাশ্যে আলোচনা করতে চাই না।’’
রাওয়তের মতে, কাশ্মীরে সেনা বা পুলিশে নিয়োগের পরীক্ষার ব্যবস্থা করলে দলে দলে যুবক হাজির হন। কারণ, তা উপত্যকায় কর্মসংস্থানের অন্যতম মূল উৎস। আবার অন্য দিকে স্পেশ্যাল পুলিশ অফিসার (এসপিও)-সহ বাহিনীর কর্মীদের নিশানা করছে জঙ্গিরা। কারণ, তারা কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। স্থানীয় যুবকদেরই স্থির করতে হবে, তাঁরা এই অবস্থা চলতে দেবেন কি না। প্রয়োজনে সুরক্ষার জন্য যুবকেরা নিজেদের বাহিনী তৈরি করুন।
রাজনীতিকদের একাংশের মতে, সার্জিক্যাল স্ট্রাইকের দ্বিতীয় বর্ষপূর্তি ধুমধাম করে উদ্যাপন করতে চাইছিল নরেন্দ্র মোদী সরকার। ২৮, ২৯, ৩০ সেপ্টেম্বর এ নিয়ে ‘মহা পরাক্রম দিবস’ পালন করার পরিকল্পনা রয়েছে। ২৮ সেপ্টেম্বর ইন্ডিয়া গেটে মূল অনুষ্ঠান হবে। সেখানে হাজির থাকার কথা খোদ প্রধানমন্ত্রীর। কিন্তু তার ঠিক আগেই জম্মুতে বিএসএফ জওয়ানকে খুন করে গলা কাটে পাক বাহিনী। তার পরেও একের পর এক হামলা চলছে। ফলে বিপাকে পড়েছে মোদী সরকার। সামনেই কয়েক রাজ্যে ভোট। রাফাল-সহ নানা বিষয়ে বিরোধীদের আক্রমণে জেরবার সরকার। এই পরিস্থিতিতে ফের সেনা অভিযানকে সামনে রেখে নজর ঘোরানোর চেষ্টা করতে পারে সরকার।
কংগ্রেসের মতে, মোদী সরকারের পাকিস্তান নীতিটাই স্পষ্ট নয়। কখনও প্রধানমন্ত্রী প্রাক্তন পাক প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে নিমন্ত্রণ রক্ষা করতে যাচ্ছেন। আবার তার পরেই হামলা হলে আলোচনা বন্ধ করা হচ্ছে। প্রাক্তন অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরমের কথায়, ‘‘সেনাপ্রধান বলছেন ফের সার্জিক্যাল স্ট্রাইক প্রয়োজন। তিনিই এই বিষয়ে সবচেয়ে ভাল সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন। কিন্তু তিনি কি দয়া করে জানাবেন গত ২০ বছরে কতগুলি সার্জিক্যাল স্ট্রাইক হয়েছে?’’