কিরণ মজুমদার শ।
হিজাব নিয়ে তোলপাড়েই থামছে না কর্নাটক। দাবি উঠেছে, মন্দির চত্বরে মুসলিমদের ব্যবসা করতে দেওয়া যাবে না। দাবি উঠেছে, হালাল মাংস বিক্রিও বন্ধ করতে হবে। এই পরিস্থিতিতে সাম্প্রদায়িকতার বিপদ নিয়ে টুইট করে গেরুয়া শিবিরের আক্রমণের মুখে পড়েছেন বায়োকন কর্ণধার কিরণ মজুমদার শ।
বুধবার রাতে কিরণ টুইটারে লেখেন, ‘‘কর্নাটক সব সময় সকলকে সঙ্গে নিয়ে উন্নয়নের পথে এগিয়েছে। এই ধরনের সাম্প্রদায়িক ভাগাভাগি আমাদের প্রশ্রয় দেওয়া উচিত নয়। যদি তথ্যপ্রযুক্তি, জৈবপ্রযুক্তির জগত সাম্প্রদায়িক হয়ে যায়, তা হলে আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে আমাদের নেতৃত্বও নষ্ট হবে। মুখ্যমন্ত্রী, দয়া করে এই ধর্মীয় বিভাজন রুখুন।’’ এর সঙ্গেই তিনি শেয়ার করেন খবরের রিপোর্ট, যেখানে মন্দির চত্বরে মুসলিমদের ব্যবসা করতে না দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। সাম্প্রতিক এই বিতর্কের মধ্যে কিরণই কর্পোরেট জগতের নেতৃস্থানীয়দের মধ্যে প্রথম প্রকাশ্যে মুখ খুললেন। এবং যথারীতি বিজেপির রোষে পড়লেন। বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালবীয় পাল্টা টুইট করে বললেন, ‘‘কিরণ শ-এর মতো মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত রাজনৈতিক মতামত এ ভাবে চাপিয়ে দিচ্ছেন এবং তার সঙ্গে তথ্যপ্রযুক্তি-জৈবপ্রযুক্তিতে ভারতের নেতৃত্বের প্রশ্নকে জুড়ে দিচ্ছেন, এটা খুব দুর্ভাগ্যজনক। রাহুল বাজাজ কিছুকাল আগে ঠিক এই জাতীয় কথা গুজরাত সম্পর্কে বলেছিলেন। গুজরাত এখন গাড়ি উৎপাদন শিল্পে পয়লা সারিতে।’’
এখানেই থামেননি অমিত। কটাক্ষের সুরে বলেছেন, ‘‘ধর্মীয় বিভাজন দেখে কিরণ নড়ে বসেছেন। খুব ভাল কথা। কিন্তু যখন সংখ্যালঘুদের কট্টর অংশটি শিক্ষার চেয়ে হিজাবকে এগিয়ে রাখছিল, তখন তিনি কিছু বলেছিলেন? যখন হিন্দু সংগঠনে অ-হিন্দুদের প্রবেশ রুখতে কংগ্রেস আইন করেছিল, তখন কিছু বলেছিলেন? কিরণ কংগ্রেসের ইস্তাহার রচনায় সাহায্য করেছিলেন। এ থেকেই যা বোঝার বোঝা যাচ্ছে।’’
কিরণের উপরে বিজেপির রাগ আদতে পুরনো। দেশে অসহিষ্ণুতার সংস্কৃতির বিরুদ্ধে বাণিজ্য জগতের যে গুটিকয় মুখ ধারাবাহিক ভাবে সরব থেকেছেন, কিরণ তাঁদেরই এক জন। আর এক জন ছিলেন সদ্যপ্রয়াত রাহুল বাজাজ, যাঁর কথা মালবীয় টুইটে লিখতে ভোলেননি।
অথচ কিরণ নিজে কিন্তু এ বার আলাদা করে বিজেপির বিরুদ্ধে কিছু বলেননি। বরং তাঁর টুইটের নীচে জনৈক মন্তব্য করেছিলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রী বিভাজন বাড়িয়েই চলবেন। আমাদের চোখের সামনে কর্নাটকের পতন হবে।’’ তার উত্তরে কিরণ লেখেন, ‘‘আমাদের মুখ্যমন্ত্রী প্রগতিশীল নেতা। আমি নিশ্চিত, তিনি সমস্যার নিরসন করবেন।’’ আজও মালবীয়ের টুইট এবং গেরুয়া বাহিনীর ট্রোলিংয়ের জবাবে তিনি ফের মুখ্যমন্ত্রীকে ট্যাগ করে শুধু বলেছেন, ‘‘কায়েমি স্বার্থ বিষয়টাকে রাজনৈতিক দলাদলিতে টেনে নিয়ে যেতে চাইছে। গর্বিত কান্নাডিগা হিসেবে আমি চাই না এই সব ঘটনা অর্থনীতির বিকাশকে ব্যাহত করুক। আমার বিশ্বাস, মুখ্যমন্ত্রী শান্তিপূর্ণ ভাবে বিষয়গুলো মেটাবেন।’’
‘মেটানোর’ আশ্বাস মুখ্যমন্ত্রী বাসবরাজ বোম্মাই নিজেও অবশ্য দিয়েছেন। যেমন, হালাল মাংস বিক্রি নিষিদ্ধ করার যে দাবি তুলেছে বিজেপি, সে ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেছেন, ‘‘গুরুতর আপত্তি উঠেছে। আমরা অবশ্যই বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’’ ‘গুরুতর’, কারণ কর্নাটক বিজেপির সাধারণ সচিব সি টি রবি বলেছেন, হালাল মাংস বিক্রি করা এক ধরনের ‘অর্থনৈতিক জেহাদ’। বিশ্ব হিন্দু পরিষদ এবং বজরং দল মন্দির চত্বরে মুসলিম ব্যবসায়ীদের ঢুকতে না দেওয়ার যে দাবি জানিয়েছে, তা নিয়েও বিধানসভায় সরাসরি জবাব দেননি মুখ্যমন্ত্রী। শুধু ২০০২ সালের একটি আইনের কথা মনে করিয়ে দিয়েছেন।
বিরোধীদের অভিযোগ, সামনের বছর বিধানসভা ভোটের দিকে তাকিয়ে এখন থেকেই কর্নাটককে ‘উত্তরপ্রদেশ’ বানানোর চেষ্টা হচ্ছে। কংগ্রেস নেতা প্রিয়ঙ্ক খড়্গে বলছেন, মানুষের কাছে বলার মতো কিছু নেই বিজেপির। তাই আজ কাশ্মীর ফাইলস, কাল মন্দিরে ব্যবসা, পরশু হালাল মাংসের মতো বিষয় আমদানি করতে হচ্ছে।’’ কংগ্রেসেরই দীনেশ গুন্ডু রাও বলেন, ‘‘হালালে কী এসে যায়? যার ইচ্ছে কিনবে, যার ইচ্ছে নয় কিনবে না! খুব পরিকল্পনা করে এগুলো ছড়ানো হচ্ছে।’’