গুয়াহাটিতে রাহুল গাঁধী। পাশে তরুণ গগৈ। শুক্রবার উজ্জ্বল দেবের তোলা ছবি।
‘নমস্তে’ বলে গত কাল যাঁর সঙ্গে হাত মিলিয়েছিলেন, সেই নরেন্দ্র মোদীকেই আজ সমালোচনায় বিঁধলেন রাহুল গাঁধী। এ ভাবেই কার্য অসমে ভোট প্রচার শুরু করলেন তিনি। একইসঙ্গে জানিয়ে দিলেন, বিহার মডেলের আদলেই অসমে লড়বেন তাঁরা। ক্ষমতা সে ভাবেই নিজেদের দখলে রাখবেন।
বিহারের দিকে তাকিয়ে অসমেও নির্বাচনী ‘বৈতরণী’ পার করতে প্রশান্ত কিশোরকেই ‘কাণ্ডারী’ করতে চেয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। দলীয় সূত্রে খবর, অসমে কংগ্রেসের হাল ধরতে রাজি প্রশান্ত। শুধু তাই নয়, রাহুলের প্রথম নির্বাচনী সফরের হাল-হকিকৎ সরেজমিনে দেখতে গত রাতেই গোপনে দলীয় সাংসদ গৌরব গগৈয়ের সঙ্গে গুয়াহাটি পৌঁছন প্রশান্ত। তার আগে, দিল্লিতে প্রশান্তের পৌরোহিত্যে নীতীশ কুমারের সঙ্গে এআইইউডিএফ সভাপতি বদরুদ্দিন আজমলের একটি বৈঠক হয়। সেখানে সাংসদ রাধেশ্যাম বিশ্বাসও হাজির ছিলেন। কংগ্রেস সূত্রে খবর, গগৈ-আজমল প্রাক-নির্বাচনী মিত্রতা হলে নামনি অসম ও বরাক মিলিয়ে রাজ্যের ৩৪ শতাংশ মুসলিম ভোট ভাগাভাগি হয়ে যাবে। সেই বিষয়ে বৈঠকে আলোচনা হয়।
এ দিন গুয়াহাটিতে রাহুল, তরুণ গগৈ, প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি অঞ্জন দত্তের সঙ্গেও আলোচনা করেন প্রশান্ত। সন্ধ্যায় ব্রহ্মপুত্র অতিথিশালায় রাজ্যের বুদ্ধিজীবি ও প্রভাবশালী ব্যক্তিদের সঙ্গে বৈঠকে রাজ্যবাসীর আশা-নিরাশার খতিয়ান বুঝে নেন রাহুল।
কংগ্রেসের সহ-সভাপতির সফরের ঠিক আগের রাতে পূর্ব পরিকল্পনামতো কংগ্রেসের জমি শক্ত করতে তরুণ গগৈ মন্ত্রিসভার বিশেষ বৈঠক ডাকেন। সেখানে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, গুয়াহাটি-সহ রাজ্যের ভূমিহীন ব্যক্তি এবং জমিহীন প্রাক্তন ও বর্তমান চা শ্রমিকদের মধ্যে ২৬ জানুয়ারির মধ্যে পাট্টা বিলি করা হবে। জমিহীন মানুষদের অধিকাংশই সংখ্যালঘু, উপজাতি ও চা জনগোষ্ঠীর সদস্য। পাশাপাশি, রাজ্যের গ্রাম পঞ্চায়েত প্রধানদের ভাতার পরিবর্তে মাসিক বেতনের ব্যবস্থা করে গ্রামগুলিতেও ঘাঁটি শক্ত করার ব্যবস্থা করল গগৈ সরকার।
গুয়াহাটি পৌঁছে প্রথমে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজের প্রেক্ষাগৃহে মহিলা স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলির প্রতিনিধিদের সঙ্গে দেখা করেন রাহুল। সেখানে তিনি বলেন, ‘‘মহিলা, বিশেষ করে স্বাবলম্বী মহিলারাই সবল সমাজের মেরুদণ্ড হতে পারেন।’’
সেখান থেকে বেরিয়ে রাহুল সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা বরাবরই তৃণমূল স্তরের ও দরিদ্র মানুষের সঙ্গে রয়েছি। মুখ্যমন্ত্রী গগৈয়ের নেতৃত্বে রাজ্যে কংগ্রেস খুব ভাল কাজ করেছে। তাই অসমে আমরাই জিতব।’’
এআইইউডিএফের সঙ্গে জোট প্রসঙ্গে রাহুল জানান, জোট নিয়ে এখনও আলোচনা চলছে। এ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী ও অঞ্জন দত্তই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন। রাহুল আরও বলেন, ‘‘বিহারে মহাজোট কাজ করবে না বলে যাঁরা ব্যঙ্গ করেছিলেন, তাঁরাই পরে মুখ থুবড়ে পড়েছেন। অসমেও তাঁদের একই অবস্থা হবে।’’
এর পর জেলা গ্রন্থাগারে কংগ্রেসের নেতা-কর্মীদের সভায় অংশ নেন রাহুল। সেখানে প্রধানমন্ত্রী মোদীর কড়া সমালোচনা করে রাহুল বলেন, ‘‘ক্ষমতায় আসার পরে প্রধানমন্ত্রী একের পর এক প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছেন। নাগাড়ে ঘোষণা হয়েছে প্রকল্প। তখন ভেবেছিলাম পাঁচটা প্রকল্প চালু করলে অন্তত একটি প্রকল্প তো সফল হবে। কিন্তু কার্যক্ষেত্রে কোনওটিই সফল হয়নি।’’ অবশ্য দলীয় সভা হলেও আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা থেকে রাহুল প্রকল্পের সাফল্য নিয়ে দর্শকদের দিকে স্বভাবসিদ্ধ প্রশ্ন ছোঁড়েননি। যা বলার নিজেই বলে দিয়েছেন। মোদী প্রসঙ্গে রাহুল আরও বলেন, ‘‘মোদী এক চমক সর্বস্ব নেতা। আমি কাছ থেকে তাঁকে নিয়মিত দেখছি। এক জন নেতা কেবল বড় বড় ভাষণ, কথার মারপ্যাঁচ দিয়েই দেশ চালাচ্ছেন। এমনকী দেশের চেয়ে তিনি বিদেশেই বেশি থাকেন।’’ বিহার ভোটের সময় গোমাংস ভক্ষণ নিয়ে বিতর্ক মাথা চাড়া দিয়েছিল। কিন্তু ৩৪ শতাংশ সংখ্যালঘু ভোটব্যাঙ্ক থাকা অসমে ওই বিতর্ক উল্টো প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিজেপির আশঙ্কা।
তাই, আরএসএসের প্রচার প্রমুখ মনমোহন বৈদ্য দু’দিন আগেই ইটানগরে এসে ঘোষণা করেছেন, অরুণাচলে অন্তত তিন হাজার আরএসএস সদস্য রয়েছেন যাঁরা গোমাংস খান। সেটা অরুণাচলের খাদ্যাভ্যাসের অঙ্গ। আরএসএস কখনও মানুষের খাদ্যাভ্যাস বদলাতে চায় না। তাই গোমাংস খেলেও আরএসএসের সভ্য হওয়ায় বাধা নেই।
রাহুল অবশ্য সাম্প্রদায়িকতার তীরেই বিজেপিকে বিঁধতে চাইছেন। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ও সঙ্ঘ পরিবারের কূটনীতির মূল মন্ত্রই হল মানুষের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করা।’’ কংগ্রেসের দাবি, তার প্রতিবাদেই আগামী কাল বরপেটা থেকে মেদেরটাড়ি অবধি ৭ কিলোমিটার পদযাত্রায় নেতৃত্ব দিতে চলেছেন রাহুল।