যেন কুবেরের ধনের খোঁজ মিলেছে বিহারে! দেশের ৪৪ শতাংশ স্বর্ণ ভান্ডার রয়েছে এই এলাকাতেই। এমনটাই দাবি করা হচ্ছে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে। এ বার ‘দেশের বৃহত্তম’ এই সোনার খনি খননের অনুমতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিল বিহার সরকার। ওই রাজ্যের এক উচ্চপদস্থ আধিকারিককে উদ্ধৃত করে এমনই খবর জানিয়েছে সংবাদমাধ্যম।
বিহারের জামুই জেলায় প্রায় ২৩ কোটি টন সোনা মজুদ রয়েছে বলে সমীক্ষা করে জানায় জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়া (জিএসআই)। সোনার সঙ্গে সঙ্গে প্রায় ৩৭.৬ টন খনিজ আকরিক থাকার খবরও দিয়েছে তারা।
এই প্রেক্ষিতে সম্প্রতি নীতীশ সরকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জামুই জেলার ওই এলাকায় সোনার অনুসন্ধানে নামা হবে। এ নিয়ে কেন্দ্রের সঙ্গে আলোচনা চলছে বলে খবর।
বিহারের মুখ্য সচিব হরজোৎ কউর সংবাদ সংস্থা পিটিআইকে জানিয়েছেন, খনি খননের ব্যাপারে বিহার রাজ্য খনি এবং ভূতত্ত্ব বিভাগের সঙ্গে কেন্দ্রীয় সংস্থার আলোচনা হয়েছে। জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার অধিকর্তাদের সঙ্গেও এ ব্যাপারে পরামর্শ করা হয়েছে।
বিহারের কোন কোন জায়গায় এই সোনার খনির হদিস মিলল? জানা গিয়েছে, জামুই জেলার করমটিয়া, ঝাঝা, সোনো এলাকায় খনির সন্ধান মিলেছে।
গত বছর লোকসভায় একটি লিখিত জবাবে বিহারের সোনার খনির প্রসঙ্গ তুলেছিলেন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ জোশী।
কেন্দ্রীয় মন্ত্রী লোকসভায় জানান, দেশের মোট সোনার ৪৪ শতাংশ পাওয়া যেতে পারে বিহারের ওই খনিতে। মোট সোনার পরিমাণ হতে পারে প্রায় ২৩ কোটি টন।
এই বিরাট সোনার খনির অনুসন্ধানে নামার আগে আগামী এক মাসের মধ্যে কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে মউ চুক্তি সই করতে পারে বিহার সরকার। এমনটাই জানা গিয়েছে নীতীশ কুমারের সরকার সূত্রে।
বিহার সরকার সোনা অনুসন্ধানের জন্য কেন্দ্রীয় সংস্থার সঙ্গে প্রাথমিক পর্যায় বা জি-৩ স্তরে একটি চুক্তি করতে পারে বলে জানা যাচ্ছে।
কী ভাবে পাওয়া গিয়েছিল এই সোনার সন্ধান? এক সময় মাওবাদী অধ্যুষিত জামুইয়ের লাল মাটির নীচে যে এত বড় সোনার ভান্ডার লুকিয়ে রয়েছে, তা কেউ কোনও দিন ঘুণাক্ষরেও আঁচ করতে পারেননি। এখানকার সোনার ভান্ডারের সন্ধান পেতে ৪০ বছর সময় লেগে গিয়েছে। সেটাও সম্ভব হয়েছে পিঁপড়েদের জন্য!
জনশ্রুতি, বছর চল্লিশ আগে একটি বিশাল বটগাছ ছিল ওই এলাকায়। রোদের তেজ আর গরমের হাত থেকে বাঁচতে পিঁপড়েরা বটগাছের নীচে বাসা বানাতে শুরু করে।
মাটি খুঁড়ে যখন নীচ থেকে উপরে তোলা শুরু করে পিঁপড়েরা, তখন সেই মাটির মধ্যে হলুদ চকচকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণা মিশে থাকতে দেখেছিলেন স্থানীয়রা। মুহূর্তে ওই খবর এলাকার লোকজনের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ে। সন্ধানের সেই শুরু।
ভারতে সবচেয়ে বেশি সোনা পাওয়া যায় কর্নাটক রাজ্যে। এই রাজ্যের কোলার ভারতের অন্যতম প্রাচীন এবং প্রধান সোনার খনি। ২০০১ সালে অবশ্য এই সোনার খনি বন্ধ হয়ে যায়।
এর আগে উত্তরপ্রদেশের সোনভদ্রে সোনার খনির হদিস পেয়েছিল জিএসআই। বলা হয়েছিল ৩,৫০০ টন সোনার সন্ধান মিলেছে সেখানে।
২০২০ সালে সোনভদ্রে সোনার সন্ধান মেলার খবর নিয়ে হইচই পড়ে গিয়েছিল সারা দেশে। কেন্দ্রীয় নেতারা এ নিয়ে টুইট করেন। কিন্তু পরে জিএসআই একটি বিবৃতি জারি করে জানায়, বিষয়টি আদৌ তা নয়।
জিওলজিক্যাল সার্ভে অব ইন্ডিয়ার তরফে বলা হয়, সোনভদ্রে শেষ ১৯৯৯ সালে শেষ সমীক্ষা করা হয়েছিল। সে বার ১৬০ কিলোগ্রাম সোনা পাওয়া যায়। সাড়ে তিন হাজার টন সোনার খোঁজ পাওয়ার খবর গুজব বলে জানায় তারা।
এ নিয়ে নেটমাধ্যমে শুরু হয় তামাশা। সোনভদ্রে সোনা নিয়ে মিমে ভরে যায় ফেসবুক, টুইটার এবং ইনস্টাগ্রাম।
বিহারে সোনার খোঁজে নামছে বিহার সরকার। এ কথা শোনা যাচ্ছে নীতীশ সরকার সূত্রে। তবে জিএসআই এ নিয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য এখনও দেয়নি।