তেজস্বী যাদব ও রাহুল গাঁধী— ফাইল চিত্র।
আসন ভাগাভাগি ঘিরে মতবিরোধের জেরে ইতিমধ্যেই জোট ছেড়েছে দুই শরিক। তবুও বিহারের ‘মহাগঠবন্ধনে’র অন্দরে টানাপড়েন চলছিল সমানে। শেষ পর্যন্ত আরজেডি প্রধান লালুপ্রসাদের ‘হস্তক্ষেপে’ শনিবার আসন সমঝোতা নিয়ে ঐকমত্য হল। বিহারে এবার আরজেডি-কংগ্রেসের জোটে শামিল হচ্ছে তিন বাম দল, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন, সিপিআই এবং সিপিএম।
লালুর ছেলে তথা প্রাক্তন উপমুখ্যমন্ত্রী তেজস্বী যাদব এদিন বিকেলে সাংবাদিক বৈঠকে বলেন, ‘‘সমঝোতা সূত্র অনুযায়ী আসন্ন বিধানসভা ভোটে বিহারের ২৪৩টি আসনের মধ্যে লালুর দল ১৪৪টিতে লড়বে। কংগ্রেস ৭০টিতে। বামেদের জন্য বরাদ্দ হয়েছে ২৯টি আসন। আরজেডি-র বরাদ্দ আসন থেকেই ঝাড়খণ্ড মুক্তি মোর্চা (জেএমএম)-কে এবং বিকাশশীল ইনসান পার্টি (ভিআইপি)-কে আসন ছাড়া হবে। আগামী দু’-তিন দিনের মধ্যেই আসনওয়াড়ি রফা চূড়ান্ত হয়ে যাবে।’’ তেজস্বী জানান, বাল্মিকীনগর লোকসভা উপনির্বাচনেও প্রার্থী দেবে কংগ্রেস।
আরজেডি সূত্রের খবর, সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ১৯, সিপিআই ৬ এবং সিপিএম ৪টি কেন্দ্রে প্রার্থী দেবে। জেএমএম-কে দু’টি এবং ভিআইপি-কে গোটা আটেক আসন ছাড়া হতে পারে। বিহার বিধানসভা ভোটের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক অবিনাশ পাণ্ডে এদিন বলেন, ‘‘জোটের মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হবেন তেজস্বী যাদব।’’ ইতিমধ্যেই সিপিআই(এমএল) লিবারেশন ৩০টি বিধানসভা আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে। আরজেডি মুখপাত্র মৃত্যুঞ্জয় তিওয়ারির দাবি, আলোচনার মাধ্যমে বিষয়টি সমাধান হয়ে যাবে। অবিনাশের কথায়, ‘‘কোনও আসনেই ‘মহাগঠবন্ধনে’র শরিকদের ‘বন্ধুত্বপূর্ণ লড়াই’ হবে না।’’
তেজস্বীর সঙ্গে মতবিরোধের জেরে ইতিমধ্যেই ‘মহাগঠবন্ধন’ ছেড়েছে প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী জিতনরাম মাঁঝির ‘হিন্দুস্থান আওয়াম মোর্চা’ (হাম) এবং প্রাক্তন কেন্দ্রীয় প্রতিমন্ত্রী উপেন্দ্র কুশওয়াহার ‘রাষ্ট্রীয় লোকসমতা পার্টি’ (আরএলএসপি)। দলিত নেতা জিতনরাম এনডিএ জোটে ফিরে গিয়েছেন। দলিত নেত্রী মায়াবতীর বিএসপি-কে সঙ্গে নিয়ে নয়া ‘তৃতীয় জোট’ গড়েছেন অনগ্রসর নেতা উপেন্দ্র। দু’জনেই তেজস্বীর বিরুদ্ধে আসন সমঝোতা নিয়ে অনমনীয় মনোভাবের অভিযোগ তোলেন। তাৎপর্যপূর্ণ ভাবে বুধবার তেজস্বীর বিরুদ্ধে সুর চড়ান বিহারের কংগ্রেস সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত এআইসিসি সাধারণ সম্পাদক শক্তিসিন গোহিল।
আরও পড়ুন: ‘অটল টানেল’ ধরে দ্রুত সেনা পৌঁছবে শীতের লাদাখে
আরজেডি সূত্রের খবর, এর পরেই সহযোগীদের সঙ্গে বিবাদ মেটাতে সক্রিয় হন লালু। রাঁচিতে জেলবন্দি লালুর সঙ্গে দেখা করে বৃহস্পতিবার বিকেলে পটনা ফেরেন তাঁর বিশ্বস্ত নেতা ভোলা যাদব। এরপর দফায় দফায় বৈঠকের পরে কংগ্রেস ও বামেদের সঙ্গে বোঝাপড়া চূড়ান্ত হয়। অন্যদিকে, শুক্রবার দিল্লিতে ফিরে গিয়ে কংগ্রেস নেতা রাহুল গাঁধীর সঙ্গে আসন রফা নিয়ে আলোচনা করেন গোহিল।
আরও পড়ুন: ইতিহাসের ‘প্রবীণ’ ছাত্র যখন হাথরসের বর্তমান ‘ভিলেন’
যদিও এদিন তেজস্বীর সাংবাদিক বৈঠকের পরেই সুর চড়িয়েছেন ভিআইপি-র প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি তথা বলিউডের ‘সেট ডিজাইনার’ মুকেশ সহানি। তিনি বলেন, ‘‘আমাকে উপমুখ্যমন্ত্রিত্ব এবং ২৫টি আসনের প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আরজেডি বিশ্বাসঘাতকতা করল।’’ প্রসঙ্গত, গত বছর লোকসভা ভোটে ‘মহাগঠবন্ধনে’র শরিক হিসেবে তিনটি কেন্দ্রে লড়ে একটিতেও জিততে পারেনি মুকেশের দল। তিনি নিজেও খগড়িয়া লোকসভা কেন্দ্রে হেরে গিয়েছিলেন।