কড়া পাহারায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ইভিএম। ছবি: পিটিআই।
পটনার সদাকত আশ্রমে বসে কার্যত কপাল চাপড়ানোই বাকি রেখেছেন ভরত শর্মা। এনডিএ বিরোধী মহাজোট যে শেষবেলায় এ ভাবে চালিয়ে খেলে ব্যবধান কমিয়ে আনার ব্যাপারে এতটা আশাবাদী হতে পারবে, তা এক মাস আগেও ভাবতে পারেননি বিহার কংগ্রেসের ওই নেতা। আইপিএল ক্রিকেটের মাস। আদ্যন্ত ক্রিকেটভক্ত ভরতের আক্ষেপ, ‘‘ওপেনিংটা যদি একটু ভাল হত। গোড়ায় একটু চালিয়ে খেললে, ১০ নভেম্বর সব হিসাব উল্টে দেওয়া যেত। ’’
ওই আফসোসই এখন ভেসে বেড়াচ্ছে সদাকত আশ্রমের গোটা চত্বর জুড়েই। লড়াই যে এত হাড্ডাহাড্ডি হবে তা সম্ভবত গোড়ায় বোঝেননি কংগ্রেস নেতা-কর্মীরা। সনিয়া গাঁধী তো দূর, যাননি প্রিয়ঙ্কা গাঁধীও। রাহুল গাঁধী গিয়েছেন বটে, কিন্তু নমো নমো করে ছ-সাতটি জনসভা করেই দিল্লি ফিরে এসেছেন। গোড়া থেকেই কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের কাছে ‘দুয়োরানি হয়ে থাকা’ বিহার কংগ্রেসের নেতারা বরং প্রথম দফা প্রচারে নেমে নীতীশ কুমার তথা এনডিএ-র বিরুদ্ধে রাজ্যবাসীর ক্ষোভ দেখে অনেকটাই অগোছালো দশা কাটিয়ে উঠে পুরোদস্তুর লড়াইতে নামেন। বিরোধী মহাজোটের সবচেয়ে দু্র্বল সঙ্গী কংগ্রেস জোট সঙ্গী আরজেডির যাদব ভোটের সমর্থনে ভাল ফল করবে বলেই বুক বাঁধছেন দলীয় নেতৃত্ব। কংগ্রেস বলছে, আরও আগে ঝাঁপালে আরও চাপে ফেলা যেত নীতীশকে।
কিন্তু তা হল কই! শুরুতেই বিহার কংগ্রেসের শীর্ষ নেতৃত্বের বিরুদ্ধে টিকিট বিক্রির অভিযোগ ওঠে। ফলে বসে যান দলের একনিষ্ঠ কর্মীরা। যোগ্য প্রার্থীরা ভিড় করেন চিরাগ পাসোয়ানের এলজেপি বা উপেন্দ্র কুশওয়াহার দলে। শেষে নির্বাচন সংক্রান্ত যাবতীয় সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা দলে তাঁর ঘনিষ্ঠ রণদীপ সুরজেওয়ালার হাতে তুলে দেন রাহুল।
কংগ্রেসের গোড়ার দিকের গা-ছাড়া মনোভাবে ক্ষুব্ধ আরজেডি নেতৃত্ব বলছেন, এক দিকে তেজস্বীর নেতৃত্বে আরজেডি শাসক শিবিরকে চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলেছে। জোটের তৃতীয় সঙ্গী বামেরাও এককাট্টা। এই পরিস্থিতিতে কংগ্রেসের দুর্বলতা শাসক শিবিরের গলার ফাঁস অনেকটাই আলগা করে দিচ্ছে। আরজেডি নেতা শিবানন্দ তিওয়ারির কথায়, কংগ্রেসের কোনও তারকা প্রচারক না থাকায় কংগ্রেসের প্রার্থীরা তেজস্বীকে নিজেদের কেন্দ্রে প্রচারে নিয়ে যাচ্ছেন। গত বিধানসভায় ৪১টি আসনের মধ্যে লড়ে ২৭টি আসনে জিতেছিল কংগ্রেস। এবার কংগ্রেসকে ৭০টি আসন ছাড়া নিয়েও ক্ষুব্ধ আরজেডি। ওই আসনগুলিতে আরজেডি সরাসরি লড়লে আখেরে আসন বাড়ত জোটের।
রাহুলের নির্দেশে গত তিন সপ্তাহ ধরে বিহারে পড়ে থাকা রণদীপ সুরজেওয়ালা সব অভিযোগ খারিজ করে বলেন, আসন আদৌ বিক্রি হয়নি। কংগ্রেস নিজের যোগ্যতায় ৭০টি আসনে লড়ছে। অন্তত ৪৫-৫০টি আসনে জেতার পরিস্থিতিতে রয়েছে দল। তবে আরও আগে থেকে সর্বাত্মক প্রচারে নামলে ফল আরও ভাল হতে পারত বলে মেনে নিয়েছেন তিনিও।