২৩ দিনে ৫৩১টি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে।—ছবি রয়টার্স।
কাশ্মীরে গত ২৩ দিনে কী ঘটেছে, তা নিয়ে জগৎজোড়া আগ্রহ। সরকারের দাবি, সামান্য কিছু বিক্ষোভের ঘটনা ছাড়া উপত্যকা আপাত ভাবে শান্তই রয়েছে। কিন্তু জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে যে রিপোর্ট স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক ও প্রধানমন্ত্রীর দফতরে পৌঁছেছে, সেখানেই বলা হয়েছে এখনও পর্যন্ত ৫৩১টি পাথর ছোড়ার ঘটনা ঘটেছে। রাস্তা রোকো হয়েছে ৫০টি। বিভিন্ন ঘটনায় আহত হয়েছেন ৯১ জন। তাঁদের মধ্যে ৭১ জন স্থানীয় মানুষ এবং ২০ জন নিরাপত্তা কর্মী। প্রাণহানি হয়েছে মাত্র এক জনের। সেটিও নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে নয়, পাথর ছুড়ে এক লরিচালককে মেরে ফেলেছে বিক্ষোভকারীরা।
ওই রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে, ২০০৮ সালের পরবর্তী সময়ে যে ধরনের হিংসা হয়েছিল, সেই তুলনায় গোলমাল এখন অনেক কম। ৩৭০ অনুচ্ছেদ তুলে দেওয়ার প্রতিক্রিয়ায় যে ধরনের বিক্ষোভ হওয়ার আশঙ্কা ছিল, তার ছিটেফোঁটাও হয়নি। সৈয়দ আহমেদ শাহ গিলানির নেতৃত্বাধীন অল পার্টি হুরিয়ত কনফারেন্স কাশ্মীরিদের একত্রিত হয়ে বিক্ষোভে নামার ডাক দিলেও সে ভাবে সাড়া মেলেনি। তবে স্কুল-কলেজ খোলা হলেও ছাত্র-ছাত্রী তেমন আসছে না। দোকান-বাজার ধীরে ধীরে খুলতে শুরু করেছে। তার মধ্যে পথের ধারের দোকানির সংখ্যাই বেশি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের এক সূত্র জানাচ্ছে, জম্মু-কাশ্মীরের তিনটি অঞ্চলের মধ্যে লাদাখে কোনও ক্ষোভ বিক্ষোভের ঘটনা ঘটেনি। জম্মুরও অধিকাংশ স্থান ‘স্বাভাবিক’। তবে পুঞ্চ এবং বানিহালে বেশ কিছু অশান্তির ঘটনা ঘটেছে। পাথর ছোড়া ও রাস্তা আটকানোর ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে কাশ্মীর উপত্যকায়। সবচেয়ে বেশি বিক্ষোভ হয়েছে দক্ষিণ কাশ্মীরে। নির্দিষ্ট ভাবে বলতে গেলে শ্রীনগর, সাফা কাদাল, পারিমপোরা এবং সৌরা— এই চার থানা এলাকাতেই গোলমাল সবচেয়ে বেশি। কাশ্মীর প্রশাসনের দাবি, রাজ্যের ১০৩টি থানা এলাকার মধ্যে ৮১টি থেকে কার্ফু তুলে নেওয়া হয়েছে। ৯৬টি টেলিফোন এক্সচেঞ্জের মধ্যে ৪৭টি এক্সচেঞ্জ এলাকায় ফোন পরিষেবাও চালু হয়েছে। এখনও পর্যন্ত প্রায় ২০০০ বিক্ষোভকারীকে আটক করা হয়েছে। তাঁদের অনেককে আবার ছেড়েও দেওয়া হয়েছে। ১৭৬ জন বিচ্ছিন্নতাবাদী ও পাক মদতে পুষ্ট বিক্ষোভকারীকে পাবলিক সিকিয়োরিটি আইনে গ্রেফতার করে মধ্যপ্রদেশ ও উত্তরপ্রদেশের জেলে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
কাশ্মীর প্রশাসন নয়াদিল্লিকে জানিয়েছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিকের পথে হলেও পাকিস্তান অশান্তি ছড়ানোর জন্য সর্বাত্মক চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। অধিকৃত কাশ্মীরের বিভিন্ন জঙ্গি শিবিরে ইতিমধ্যেই ২৭৫ জন জঙ্গিকে জড়ো করেছে আইএসআই এবং পাক সেনা। তাদের মধ্যে বেশ কিছু তালিবান যোদ্ধাও রয়েছে বলে খবর। সেই কারণে নিয়ন্ত্রণ রেখায় চূড়ান্ত সতর্কতা রয়েছে।
গত ৫ অগস্ট ৩৭০ অনুচ্ছেদ বাতিলের সিদ্ধান্ত সংসদে পাশ হওয়ার পর কাশ্মীর অগ্নিগর্ভ হয়ে উঠবে, এমনই আশঙ্কা ছিল কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের। কিন্তু যে ভাবে প্রথম ২৩দিনে ছোটখাটো বিক্ষোভ, রাস্তা রোকো এবং জমায়েত হয়েছে, তাতে অনেকটাই নিশ্চিন্ত প্রশাসন। বিশেষ করে নিরাপত্তারক্ষীদের গুলিতে কাশ্মীরের স্থানীয় মানুষদের মৃত্যু না হওয়াকে বড় সাফল্য বলে মনে করছে তারা। পাকিস্তানি উস্কানি উপেক্ষা করে উপত্যকায় স্থায়ী শান্তির জন্য জম্মু-কাশ্মীর প্রশাসনের তরফে কেন্দ্রের কাছে ব্যাপক উন্নয়ন কর্মযজ্ঞ এবং কর্মসংস্থানের জন্য প্রকল্প নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে।