এনআইএ-র হাতে তদন্তভার উঠল। ছবি: পিটিআই।
ভীমা-কোরেগাঁও মামলার তদন্ত নিয়ে এ বার মহারাষ্ট্রের উদ্ধব ঠাকরে সরকারের সঙ্গে সরাসরি সঙ্ঘাতে জড়িয়ে পড়ল কেন্দ্রীয় সরকার। মামলায় অভিযুক্তদের অব্যাহতি দিতে একদিকে উদ্ধব সরকার যখন তোড়জোড় শুরু করেছে, ঠিক সেইসময়ই তাদের নাকের ডগা দিয়ে মামলার তদন্তভার জাতীয় তদন্তকারী সংস্থা (এনআইএ)-র হাতে তুলে দেওয়া হল। এ নিয়ে দু’পক্ষের মধ্যে সঙ্ঘাত চরমে উঠেছে। আইন-শৃঙ্খলা রাজ্যের ব্যাপার, ইচ্ছাকৃত ভাবে তাতে কেন্দ্র তাতে নাক গলাচ্ছে বলে অভিযোগ তুলতে শুরু করেছে উদ্ধব সরকার।
যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ভীমা-কোরেগাঁও মামলা তুলে নেওয়া হবে বলে ক্ষমতায় এসেই জানিয়ে দিয়েছিলেন উদ্ধব সরকার। সেই মতো বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার পুণে পুলিশের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন উপ মুখ্যমন্ত্র অজিত পওয়ার এবং রাজ্যের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অনিল দেশমুখ। সেখানে দিল্লির সমাজকর্মী রোমা উইলসনের হয়ে সওয়াল করেন অজিত পওয়ার। তিনি জানান, ইমেল মারফত প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর প্রাণনাশের পরিকল্পনার যে চিঠি রোনার কাছে এসেছিল, সেটি আসলে ভুয়ো। কে ওই চিঠি পাঠিয়েছিল তা নিয়ে সন্দেহ রয়েছে। তাই বিষয়টি খতিয়ে দেখা উচিত। আগামী ১৫ দিনের মধ্যে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে যাবতীয় অভিযোগ প্রমাণ করতে হবে।নইলে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) নিযুক্ত করে মহারাষ্ট্র সরকারই নতুন করে তদন্ত শুরু করবে।
সেই বৈঠকের পরই, শুক্রবার ভীমা-কোরেগাঁও মামলার তদন্তভার এনআইএ-র হাতে তুলে দেয় কেন্দ্র। তাতে ক্ষোভ প্রকাশ করেন অনিল দেশমুখ। সংবাদমাধ্যমে তিনি বলেন, ‘‘এনআইএ-র হাতে ভীমা-কোরেগাঁও মামলার তদন্ত তুলে দেওয়ার সিদ্ধান্ত অসাংবিধানিক। এ ব্যাপারে রাজ্য সরকারের অনুমতিই নেওয়া হয়নি। আমি এর তীব্র নিন্দা করছি।’’
আরও পড়ুন: কাশ্মীরে বন্দি নেতাদের ছেড়ে দেওয়া হোক, আর্জি আমেরিকার
কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গাঁধী এ দিন টুইটারে লেখেন, ‘‘মোদী-শাহের নীতির বিরোধিতা করলেই যে কেউ শহুরে নকশাল। ভীমা-কোরেগাঁও প্রতিরোধের প্রতীক যা সরকারের অনুগত এনআইএ চেষ্টা করলেও মেটাতে পারবে না।’’
রাহুলের টুইট।
মহারাষ্ট্রের আবাসন মন্ত্রী তথা এনসিপি নেতা জিতেন্দ্র অহওয়াদ বলেন, ‘‘আগ বাড়িয়ে ভীমা-কোরেগাঁও মামলা নিজেদের হাতে তুলে নিয়ে সংবিধানকে অসম্মান করা হয়েছে। সংবিধানে কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে সমন্বয় রাখার কথা বলা হয়েছে। বলা হয়েছে, প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত যাবতীয় বিষয় কেন্দ্রের হাতে থাকবে। আইন-শৃঙ্খলা থাকবে রাজ্যের হাতে। এ ভাবে রাজ্যের এক্তিয়ারে থাকা কোনও বিষয়কে নিজেদের হাতে তুলে নেওয়া সংবিধানকে পদদলিত করার সমান।’’
কেন্দ্রীয় সিদ্ধান্তের তীব্র নিন্দা করেছেন মহারাষ্ট্র কংগ্রেসের মুখপাত্র সচিন সবন্তও। টুইটারে তিনি লেখেন, ‘‘আচমকা ভীমা-কোরেগাঁও মামলা এনআইএ-র হাতে তুলে দেওয়ার পিছনে বিজেপির ষড়যন্ত্র রয়েছে। মামলাটি তাদের এক্তিয়ারে পড়ে, এটা বুঝতে ২ বছর সময়ই বা লাগল কেন এনআইএ-র?’’
আরও পড়ুন: পাকিস্তান ও বাংলোদেশি মুসলিমদের দেশ থেকে তাড়ানো উচিত, সামনায় শিবসেনার মন্তব্যে বিতর্ক
তৃতীয় ইঙ্গ-মরাঠা যুদ্ধের সমাপ্তি উপলক্ষ্যে প্রতি বছর ১জানুয়ারি ভীমা কোরেগাঁওয়ে জয় স্তম্ভে প্রচুর দলিত মানুষ জড়ো হন। ১৮১৮ সালে এই দিনেই ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি পেশোয়াদের পরাজিত করে। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানিকে সাহায্য করেছিল তৎকালীন সমাজে অস্পৃশ্য বলে পরিচিত ‘মাহার’ জনগোষ্ঠী। পেশোয়া পদের বিলুপ্তির দিনটিকে তাঁরা বিজয় দিবস হিসেবে পালন করেন তখন থেকেই।২০১৭-র ৩১ ডিসেম্বর দলিতদের ‘এলগার পরিষদ’-এর এইঅনুষ্ঠানের পর দিনই হিংসা ছড়িয়েছিল পুণে জেলার ভীমা-কোরেগাঁও এলাকায়। তদন্তে নেমে সমাজকর্মী গৌতম নওলখা, ভারাভারা রাও, অরুণ ফেরেরা, রোনা উইলসন, ভারনন গঞ্জালভেস ও সুধা ভরদ্বাজ-সহ বেশ কয়েক জনের বিরুদ্ধে এফআইআর দায়ের করে পুলিশ। প্রধানমন্ত্রীকে হত্যার চক্রান্তে লিপ্ত থাকার অভিযোগে গ্রেফতার করা হয় তাঁদের। বিজেপির তরফে তাঁদের ‘শহুরে নকশাল’ বলেও দাগিয়ে দেওয়া হয়। যদিও বিরোধীদের দাবি, সরকার বিরোধী অবস্থানের জন্যই ওই সমাজকর্মীদের গ্রেফতার করা হয়েছে।
সেই বিতর্কের মধ্যেই গতবছর সংসদে বেআইনি কার্যকলাপ প্রতিরোধ আইন (ইউএপিএ) সংশোধনী বিল পাশ করিয়ে নিয়েছে মোদী সরকার, যার আওতায় কোনও সংগঠনের পাশাপাশি এ কোনও ব্যক্তিবিশেষকেও সন্ত্রাসবাদী ঘোষণা করা যাবে। দেশবিরোধী কার্যকলাপে যুক্ত রয়েছেন সন্দ্হে সন্ত্রাসবাদী হিসাবে যাকে ইচ্ছা গ্রেফতার করতে পারবে এনআইএ। ‘শহুরে নকশাল’ তথা বিরোধী স্বরকে দমিয়ে রাখতেই এনআইএ-র হাতে এই ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ বিরোধীদের।