মোদী জমানার ‘অচ্ছে দিন’ নিয়ে প্রশ্ন তুলল খোদ সঙ্ঘের শ্রমিক সংগঠনই। তাদের অভিযোগ, কাজের নতুন সুযোগ তৈরির বিষয়ে মোদী সরকার রঙিন ছবি তুলে ধরছে ঠিকই। কিন্তু আদপে নতুন চাকরির দেখা মিলছে অল্প। বরং উল্টে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির দাপটে রোজগার খোয়াচ্ছেন অনেক কর্মী।
সম্প্রতি কেন্দ্রীয় শ্রম মন্ত্রকের এক পরিসংখ্যান দেখিয়েছিল, নোট বাতিলের জেরে কাজ খুইয়েছেন প্রায় দু’লক্ষ মানুষ। সেই অস্বস্তি ঢাকতে নতুন ভাবে কর্মী-গণনার জন্য মঙ্গলবার টাস্ক ফোর্স গড়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কিন্তু তার মধ্যেই কর্মসংস্থান নিয়ে মোদী সরকারের অস্বস্তি আরও বাড়িয়ে তুলল আরএসএসের শ্রমিক সংগঠন ভারতীয় মজদুর সঙ্ঘ (বিএমএস)।
সংগঠনটির অভিযোগ, ‘অচ্ছে দিন’-এর প্রতিশ্রুতি দিয়ে ক্ষমতায় এসেছেন মোদী। কিন্তু শ্রমিকদের সুদিন আসেনি। দিল্লিতে ঠান্ডা ঘরে বসে আমলারা বিপুল কর্মসংস্থানের কথা বলেন। সেই ছবি প্রধানমন্ত্রীর কাছে তুলে ধরেন। কিন্তু বাস্তবের সঙ্গে তার যোগ নেই। বরং অত্যাধুনিক প্রযুক্তি যে-ভাবে থাবা বসাচ্ছে, তাতে বিপুল সংখ্যায় কাজ খোওয়া যেতে বসেছে। হাতের সামনে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্প তার জ্বলজ্যান্ত উদাহরণ।
মোদী সরকারের তিন বছর পূর্ণ হচ্ছে ২৬মে। তার আগে ২২ থেকে ২৪মে এ সবের প্রতিবাদে কানপুরে সম্মেলন আয়োজন করছে বিএমএস। তাদের দাবি, সেখানেই আন্দোলনের পরবর্তী রণকৌশল তৈরি হবে। সংগঠনের নেতা ব্রজেশ উপাধ্যায় বলেন, ‘‘ছোটবেলা থেকে ইন্দিরা গাঁধীর ‘গরিবি হটাও’ স্লোগান শুনেছি। কিন্তু দারিদ্র ঘোচেনি। এখন মোদীর গলায় ‘অচ্ছে দিন’। কাজের কাজ কিছু হয়নি।’’ উপাধ্যায়ের মতে, যোজনা কমিশনের শেষবেলায় প্রাক্তন ডেপুটি চেয়ারম্যান মন্টেক সিংহ অহলুওয়ালিয়া স্বীকার করেছিলেন, আর্থিক বৃদ্ধি হচ্ছে ঠিকই। কিন্তু তার সঙ্গে তাল মিলিয়ে কাজের সুযোগ তৈরি হচ্ছে না। তাঁর প্রশ্ন, এই সরকারই বা আলাদা কোথায়?
বিএমএসের ভয়, কেন্দ্র যে-পথে চলেছে, তাতে ২০৩০ সালে গিয়ে বিভিন্ন ক্ষেত্রের কর্মীদের মাত্র ৫% টিকে থাকবে। কারণ, সরকারি নীতিতে শিল্পপতিদের ফায়দা হলেও, কর্মীরা সুফল পাচ্ছেন না। অনেকে বলছেন, বিএমএস যে-ভাষায় মোদী সরকারকে বিঁধেছে, সাধারণত তা প্রয়োগ করেন বিরোধী নেতা রাহুল গাঁধী! প্রায় প্রতিটি সভায় নিয়ম করে বলেন, ক্ষমতায় আসার আগে ২ কোটি যুবকের কাজের ব্যবস্থা করার প্রতিশ্রুতি দেন মোদী। কিন্তু এখন ৫০ জন শিল্পপতির কথাই ভাবেন।
বিজেপি অবশ্য বিএমএসের আক্রমণকে লঘু করে দেখাচ্ছে। দলের মতে, প্রধানমন্ত্রী কাজের সুযোগ বাড়াতে আন্তরিক চেষ্টা করছেন। যেমন, মুদ্রা যোজনার আওতাতেই ৪ কোটি ঋণ নেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ, অন্তত চার কোটি জনের রোজগার সেখানেই স্পষ্ট। তাদের দাবি, কর্মী -গণনার জন্য নীতি আয়োগের ভাইস চেয়ারম্যান অরবিন্দ পানাগড়িয়ার নেতৃত্বে যে-টাস্কফোর্স তৈরি হয়েছে, সেখানেই আসল ছবি উঠে আসবে।