ভাইয়ুজি মহারাজ
দু’রাজ্যের তাবড় মন্ত্রীরা ছিলেন তাঁর ভক্ত। তাঁদের উপদেশ দিতেন। ‘পারিশ্রমিক’ নিতেন না কখনও। চড়তেন দুধ সাদা মার্সিডিস। ঘোড়া ছোটানো, মার্শাল আর্টে দখল ছিল তাঁর। কবিতাও লিখতেন। এক সময় মুম্বইয়ের মডেল। পরে সব ছেড়ে সমাজ সেবায় মন দেন। টুইটার অ্যাকাউন্টে লেখা ছিল, তিনি এক ধর্মগুরু। যার উদ্দেশ্য সুখী, স্বচ্ছল ও সমৃদ্ধশালী ভারত গড়ে তোলা। মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে ব্যাপক জনপ্রিয় সেই ভাইয়ুজি মহারাজ নিজের মাথায় গুলি করে আত্মঘাতী হলেন আজ। সুইসাইড নোটে লিখে গিয়েছেন, ‘‘চাপ সহ্য করতে পারছি না। চললাম।’’
তাঁর মৃত্যুতে সিবিআই তদন্ত দাবি করেছে মধ্যপ্রদেশ কংগ্রেস। তাদের দাবি, মুখ্যমন্ত্রী শিবরাজ সিংহ চৌহান তাঁকে মন্ত্রিত্ব দিয়ে বিজেপির সঙ্গে কাজ করার জন্য চাপ দিচ্ছিল। সেই কারণে এপ্রিলে তাঁকে প্রতিমন্ত্রীর পদেও বসানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়। তাতে সায় দেননি ভাইয়ুজি নিজেই। বলেছিলেন, ‘‘একজন সাধুর কাছে কোনও প্রশাসনিক পদেরই গুরুত্ব নেই।’’ আজ তাঁর আত্মহত্যার খবরে শোক প্রকাশ করেছেন শিবরাজ সিংহ চৌহান। বলেছেন, ‘‘সংস্কৃতি, জ্ঞান ও স্বার্থহীন কার্মকাণ্ডের মিশেল মহারাজ।’’ মধ্যপ্রদেশ ও মহারাষ্ট্রে কৃষক উন্নয়ন, ভূমি সংস্কার ও শিশু শিক্ষা নিয়ে তাঁর কাজের প্রশংসা করেছেন মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী দেবেন্দ্র ফডণবীসও। মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী পৃথ্বীরাজ চহ্বাণের টুইট, ‘‘তিনি বিচক্ষণের মতো আধ্যাত্মবাদের মাধ্যমে দেশের উন্নয়নের পরামর্শ দিতেন কিন্তু কখনও রাজনীতিতে পা দেওয়ার চেষ্টা করেননি।’’
ধোপদুরস্ত পোশাকে আর পরিচ্ছন্ন করে কাটা চুল-দাড়িতে ‘সাধু’ সুলভ ছাপ ছিল না বছর পঞ্চাশের ভাইয়ুজির চেহারায়। জমিদারের ছেলে তিনি। আসল নাম উদয় সিংহ দেশমুখ। প্রথম স্ত্রীর সঙ্গে একটি মেয়ে রয়েছে। তাঁর মৃত্যুর পর গত বছর ফের বিয়ে করেন। মুম্বইয়ে একটি সংস্থার পদস্থ কর্তা হিসেবে কর্পোরেট দুনিয়াতেও এক সময় নামডাক ছিল তাঁর। পরে রঙিন দুনিয়া ছেড়ে সমাজসেবায় মন দেন।
আরও পড়ুন: বৈজলের বাড়িতে ধর্না চলছে কেজরীর
মহারাষ্ট্রের প্রাক্তন মুখ্যমন্ত্রী সুশীল কুমার শিন্দে, বিলাসরাও দেশমুখের মতো নেতাদের ঘনিষ্ট ছিলেন ভাইয়ুজি। জন লোকপাল বিল নিয়ে অণ্ণা হজারের সঙ্গে ইউপিএ সরকারের সমঝোতা হয়েছিল তাঁরই মধ্যস্থতায়। তাঁর কথায় অনশন ভাঙেন অণ্ণা। ইনদওরে মূল আশ্রম হলেও মহারাষ্ট্রে প্রচুর অনুগামী ছিল তাঁর। অনুমান, পারিবারিক অশান্তিতেই আত্মঘাতী হয়েছেন ভাইয়ুজি।