এ ভাবেই ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে অস্থায়ী আস্তানা। ছবি: পিটিআই
সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ) পাশের পর থেকেই দেশ জুড়ে প্রতিবাদ-বিক্ষোভ অব্যাহত। তার মধ্যে কোনও প্রমাণ ছাড়াই বাংলাদেশি অনুপ্রেবেশকারী বলে দেগে দিয়ে শহরের একটি বস্তি থেকে ভিন্ রাজ্যের কয়েকশো বাসিন্দাকে উচ্ছেদ করে দিল বেঙ্গালুরু পুর কর্পোরেশন। শহরের মারাঠা হালল্লির কাছে কারিয়াম্মানা আগ্রহরা বস্তি ভেঙে গুঁড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। আশ্রয় হারিয়ে খোলা আকাশের নীচে দিন কাটাচ্ছেন ওই সব মানুষজন। সূত্রের খবর, তাঁদের কেউ অসম, কেউ ত্রিপুরা থেকে কাজের সূত্রে ওই বস্তিতে থাকতেন। এমনকি, তাঁদের মধ্যে বেশ কিছু কর্নাটকের বাসিন্দাও রয়েছেন।
গত ১১ জানুয়ারি ওই জমির মালিককে একটি নোটিস ধরায় বেঙ্গালুরু পুলিশ। তাতে বলা হয়, এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে। তাই ওই জমি খালি করতে হবে। তার পরের দিন স্থানীয় বিজেপি বিধায়ক অরবিন্দ লিম্বভালি ওই বস্তির একাধিক ছবি-ভিডিয়ো তুলে টুইটারে পোস্ট করেন। তিনি লিখেছিলেন, ‘‘ওই এলাকায় অন্য জায়গা থেকে অনেকে এসে বেআইনি ভাবে বসবাস শুরু করেছেন। তাঁদের অনেকেই বাংলাদেশি অনুপ্রেবেশকারী।’’
এর পরে সক্রিয় হন বেঙ্গালুরু পুর কর্তৃপক্ষ। শনিবার ওই বস্তির সব বাড়িঘর ভেঙে দেওয়া হয়। তার পর একটি চিঠি দিয়ে পুরকর্তারা জানান, ওই বাড়িঘরগুলি বাংলাদেশি অনুপ্রবেশকারীরা বেআইনি ভাবে তৈরি করেছিল। তাদের জন্য সংলগ্ন গোটা এলাকার পরিবেশ নষ্ট হচ্ছিল। এ নিয়ে পুরসভায় অনেকেই নালিশ করেছিলেন। তার জন্যই ভেঙে দেওয়া হয়েছে।
আরও পডু়ন: ‘বাংলায় সিএএ-এনআরসি হবে না’, এ বার উত্তরবঙ্গ উৎসবের মঞ্চ থেকে হুঁশিয়ারি মমতার
কিন্তু উচ্ছেদ হওয়া বাসিন্দাদের দাবি, তাঁরা কেউ বাংলাদেশি নন। সকলেরই ভারতীয় নাগরিকত্বের প্রামান্য নথিপত্র রয়েছে। তাঁদের সবাই হয় ভিন্ রাজ্য থেকে এসেছেন অথবা কর্নাটকেরই বাসিন্দা। অসম থেকে আসা ওই বস্তির বাসিন্দা আদাদুর রহমান বলেন, ‘‘শনিবার দুপুর ১২টা নাগাদ আমাদের অস্থায়ী ঘরবাড়ি গুঁড়িয়ে দিল। আমাদের এলাকা ছেড়ে চলে যেতে বলল। এক জন পুলিশও তাঁদের সঙ্গে ছিলেন। আমরা বাংলাদেশি নই। আমরা যে ভারতীয়, তার কাগজপত্র সব আছে। এখানে কাজ করে সংসার চলে আমাদের।’’
আরও পড়ুন: নির্ভয়া কাণ্ডের সময় নাবালক ছিল না, পবনের আর্জি খারিজ সুপ্রিম কোর্টে
একাধিক সংবাদ মাধ্যমের দাবি, ওই বস্তির বাসিন্দারা আধার কার্ড, ভোটার পরিচয়পত্র, প্যান কার্ডের মতো নথিপত্র দেখিয়েছেন। আবার অসম এনআরসি-তে যে তাঁদের নাম রয়েছে, সে রাজ্য থেকে আসা কয়েক জন সেই নথিও দেখিয়েছেন। ত্রিপুরা থেকে আসা কালারাম বলেন, ‘‘এখানে পরিচারক-পরিচারিকা বা নিরাপত্তারক্ষীর কাজ করে মাসে ১২ থেকে ১৫ হাজার টাকা রোজগার হয়। বাড়িতেও টাকা পাঠাতে হয়। এই রোজগারে কী ভাবে অন্যত্র গিয়ে মাসে ১৫-২০ হাজার টাকা দিয়ে বাড়ি ভাড়া করে থাকব?’’
তবে পুলিশের দাবি, তাঁরা কাউকে উঠে যেতে বলেননি। বেঙ্গালুরুর ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এম এন অনুচেথ বলেন, ‘‘কাউকে উঠতে বলা হয়নি। আমরা জমির মালিককে শুধু বাসিন্দাদের বৈধ নথিপত্র দিতে বলেছিলাম। ২০১৮ সালে উত্তর বেঙ্গালুরু থেকে একই ভাবে প্রায় ৬০ জন বাংলাদেশিকে চিহ্নিত করা হয়েছিল।’’