ছবি: পিটিআই।
সংশোধিত নাগরিক আইন (সিএএ)-বিরোধী আন্দোলন ঘিরে বাঙালি-অসমিয় টানাপড়েন বাড়ছে অসমে। পশ্চিমবঙ্গের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সরকার ওই আইনের বিরুদ্ধে অসমিয়দের প্রতিবাদকে সরাসরি সমর্থন জানানোয় বাঙালিদের অস্বস্তি বেড়েছে এই রাজ্যে। তাঁদের উদ্বেগে ফেলছে, শুধু অসমিয় ভূমিপুত্রদের জন্য জমি সংরক্ষণের সিদ্ধান্ত।
অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব শর্মা বুঝিয়েছিলেন, সংশোধনীর জেরে এনআরসি থেকে নাম বাদ পড়া ৫ লাখ হিন্দু বাঙালি নাগরিকত্ব পাবেন। মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলছেন, এনআরসি-ছুট হলেই নাগরিকত্ব মিলবে না। পড়শি দেশ থেকে ধর্মীয় অত্যাচারে পালিয়ে এসেছেন যাঁরা, শুধু তাঁরাই ওই আইনে আবেদন করতে পারবেন। বাঙালি সংগঠনগুলি প্রশ্ন তুলেছে, অসমে জন্মেছেন, এমন অনেক পুরনো বাসিন্দার নাম এনআরসি থেকে বাদ পড়েছে। তাঁদের কেন নিজেদের শরণার্থী বলে প্রমাণ দিয়ে নাগরিক হতে হবে?
সর্বানন্দ মন্ত্রিসভার সিদ্ধান্ত, ভূমিপুত্র অসমিয়দের জমি অ-অসমিয়া, বহিরাগতরা কিনতে পারবে না। অর্থমন্ত্রী হিমন্তবিশ্ব বলছেন, ১৯৭১ দূরের কথা, ১৯৪১ সালের আগে এলেও অসমে ভূমিপুত্র বাদে অন্য কেউ জমি-বাড়ি কিনতে পারবে না। সব মিলিয়ে দিশাহারা অবস্থা অসমের বাঙালিদের।
সারা অসম বাঙালি ঐক্য মঞ্চের কার্যকরী সভাপতি শান্তনু মুখোপাধ্যায়ের বক্তব্য, সরকার ইচ্ছে করে সব গুলিয়ে দিতে চাইছে। কারা ‘ভূমিপুত্র অসমিয়া’— তার সর্বসম্মত, নির্দিষ্ট সংজ্ঞা নেই। অসম চুক্তিতেও এই শব্দবন্ধ অন্তর্ভুক্ত নয়। সরকার বলছে ১৯৪১-এর আগে এলেও অ-অসমিয়ারা জমির অধিকার পাবে না। অসম চুক্তিতে ১৯৭১ সালকে ভিত্তিবর্ষ বলা হয়েছে। তাঁর মতে, বিজেপির কূটনীতি আর তুঘলকি আইন প্রণয়নের ফলে বাঙালিরাই সমস্যায় পড়ছেন। দেখা যাচ্ছে সিএএ-ও বাঙালিদের কাজে আসবে না।
কংগ্রেস মুখপাত্র অভিজিৎ মজুমদার বলেন, ‘‘এনআরসি-ছুট বাঙালিদের কাজেই লাগবে না সিএএ। খামোকা বাংলার রাজনীতিতে ফায়দা লুটতে অসমের বাঙালিদের ব্যবহার করল বিজেপি।” সারা অসম বাঙালি পরিষদের সভাপতি শান্তনু সান্যাল খড়্গহস্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপরে। তাঁর মতে, “অসমের পরিস্থিতি না-জেনেই এনআরসির সময় তিনি প্রতিনিধিদল পাঠিয়ে বাঙালিদের আশ্রয় দেবেন বললেন। এখন ফের অসমে বাঙালিদের পরিস্থিতি অনুধাবন না-করে অসমিয়দের আন্দোলনকে সমর্থন জানালেন। তাঁর কাজকর্মে অসমে বিজেপি সরকারের সুবিধা হচ্ছে। ক্রমশ কোণঠাসা হচ্ছে হিন্দু বাঙালি।”