বরাকে শুরু বঙ্গ সম্মেলন

আক্ষরিক অর্থেই আজ সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হল শিলচর শহরে। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ২৬-তম কেন্দ্রীয় অধিবেশন উপলক্ষে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ শহর পরিক্রমা করেন। নিজেদের অধিবেশন বলে বঙ্গভাষীরাই বেশি সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে পরম্পরাগত পোশাক পরে অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর মানুষদেরও দেখা যায়।

Advertisement

নিজস্ব সংবাদদাতা

শিলচর শেষ আপডেট: ২১ মার্চ ২০১৫ ০৩:৩১
Share:

বরাক বঙ্গ সম্মেলনের উদ্বোধনে। শুক্রবার শিলচরে। ছবি: সুদীপ সিংহ।

আক্ষরিক অর্থেই আজ সকালে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা হল শিলচর শহরে। বরাক উপত্যকা বঙ্গ সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্মেলনের ২৬-তম কেন্দ্রীয় অধিবেশন উপলক্ষে বিভিন্ন বয়সের নারী-পুরুষ শহর পরিক্রমা করেন। নিজেদের অধিবেশন বলে বঙ্গভাষীরাই বেশি সংখ্যায় উপস্থিত ছিলেন। এর মধ্যে পরম্পরাগত পোশাক পরে অন্যান্য ভাষাগোষ্ঠীর মানুষদেরও দেখা যায়। বিশেষ করে, মণিপুরিরা করতাল বাজিয়ে পথ পরিক্রমা করেন। ছিল ঢাকের দল। বিভিন্ন সংস্থা-সংগঠনের সভ্যরাও নিজেদের ব্যানার নিয়ে পথ হাঁটেন। ছিল বিভিন্ন স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা, এনসিসি, স্কাউটস এবং গাইডসও। বঙ্গভবন থেকে রাঙ্গিরখাড়ি। সেখান থেকে ঘুরে গিয়ে অম্বিকাপট্টি, শ্যামাপ্রসাদ রোড হয়ে মিছিল ফিরে আসে বঙ্গ ভবনে। ব্রডগেজ আসায় একে স্বাগত জানিয়ে ট্যাবলোও বের করেন আয়োজকরা।

Advertisement

সম্মেলনের কেন্দ্রীয় অধিবেশন উপলক্ষে কয়েক দিন থেকেই সেজে উঠছিল শিলচর শহর। স্থানে স্থানে তোরণ বসে। আজ সকালে সমস্ত মণীষীদের প্রতিমূর্তিতে মাল্যদান করা হয়। পতাকা উত্তোলনের পর বের হয় শোভাযাত্রা। পরে একে একে উদ্বোধন হয় সাহিত্য বাসর, লোকমঞ্চ, প্রদর্শনী, ও বইমেলার। উদ্বোধন করেন ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য, মহবুবুল বারী, নকুল সাহা ও মনুজেন্দ্র শ্যাম। বঙ্গ ভবনের বিভিন্ন তলে দিনভর অনুষ্ঠান চলতে থাকে। কোথাও আলোচনা, কোথাও ঘুরে ঘুরে ছবি দেখা। বইমেলা প্রাঙ্গণেও ভিড় ছিল। সমস্ত কর্মসূচি বঙ্গ ভবনের ভেতরে হলেও লোকমঞ্চ করা হয়েছে ডাকবাংলো প্রাঙ্গণে। সেখানে সারা দিন লোকগানের আসর বসে। আসর বন্দনায় শুরু হয়। চলে ধামাইল, ভাটিয়ালি, কীতর্নাঙ্গের গান, জারিগান, বাউলা, তিন্নাথের গান, মালজোড়া, দেহতত্ত্বের গান, জিকির ইত্যাদি। সন্ধ্যায় শিলচর রামকৃষ্ণ মিশনের সম্পাদক স্বামী সত্যস্থানন্দ মহারাজ গান গেয়ে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। বরাক বঙ্গের নিজস্ব ওয়েবসাইটেরও যাত্রা শুরু হয় আজ।

মূল অধিবেশনের উদ্বোধক ছিলেন কথাসাহিত্যিক বাণী বসু। তিনি প্রদীপ জ্বালিয়ে এর সূচনা করেন। সঙ্গে ছিলেন অসমের পরিবহণ, ক্রীড়া ও যুব কল্যাণ মন্ত্রী অজিত সিংহ, শিলচরের বিধায়ক দিলীপকুমার পাল, প্রাক্তন কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কবীন্দ্র পুরকায়স্থ, সাহিত্যিক ভগীরথ মিশ্র, ইতিহাস গবেষক আবু মহম্মদ জাহিরুল হাসান, রবীন্দ্র গবেষক ঊষারঞ্জন ভট্টাচার্য প্রমুখ। বাণী বসু তাঁর বক্তৃতায় বিশ্বায়নের দরুন ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি হারিয়ে যেতে চলেছে বলে আশঙ্কা ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, “বিশ্বায়নের মূল তত্ত্বই হল কোনও স্বাতন্ত্র্য থাকবে না। সব কিছুতে সব এক। এতে ভাষা হারাতে হারাতে আমরা আত্মপরিচয়ও হারিয়ে বসছি।” এ যে বিশ্ববাণিজ্যেরই অঙ্গ, নানা বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে বশীকরণ চলছে, সে ব্যাপারে সতর্ক করে দেন বাণী বসু। চিনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, “সব কিছুতে এক তত্ত্বের কথা যে কাজে আসতে পারে না, তা প্রমাণিত। চিনে সকলের নীল পোশক, এক রান্নাঘর, জন্মের পরই রাষ্ট্রীয় সন্তানের পরিচিতি---কত কী না করা হয়েছিল। শেষে দেখা গেল, মানুষ স্বাতন্ত্র্য চায়। সবাই চান স্বতন্ত্র ব্যক্তিত্ব হতে।” তাঁর আরও আশঙ্কার জায়গা হল, বৈচিত্র্য না-থাকলে সাহিত্য-সংস্কৃতি হতে পারে না। কারণ বৈচিত্র্যহীনতা বিধ্বংসী ব্যাপার। তিনি বরাকের বাংলা ভাষার জন্য একাদশ তরুণ-তরুণীর প্রাণদান এবং বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরি ভাষার এক তরুণীর শহিদ হওয়ার কথা টেনে আনেন। স্মরণ করেন বহু প্রাণের বিনিময়ে বাংলাদেশ সৃষ্টির কথা।

Advertisement

মন্ত্রী অজিত সিংহ বলেন, “দেশভাগ বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতিতে আঁচড় ফেলতে পারেনি। তাই বাংলার মত সমৃদ্ধ ভাষা নিয়ে এত চিন্তা নেই।” বরাক উপত্যকাকে বাংলা মায়ের ‘তৃতীয় নয়ন’ বলে উল্লেখ করেন ভগীরথ মিশ্র। তিনি এই অঞ্চলের যে কোনও আন্দোলনে শরিক হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেন।

তিন দিনের অধিবেশনে কাল রয়েছে শিশুমেলা, বিশ্ববিদ্যালয়ের যৌথ উদ্যোগে আন্তর্জাতিক আলোচনা চক্র, দু’টি বিশেষ বক্তৃতা ইত্যাদি।

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement