প্রকাশ কারাট। ফাইল চিত্র।
বাধা এসেছে বার বার তিন বার! বাস্তবকে অস্বীকার করে এবং অতীতের তত্ত্ব আঁকড়ে এ ভাবে কত দিন চলবে? প্রকাশ কারাটদের মুখোমুখি হয়ে রাজ্যসভার নির্বাচন প্রসঙ্গে এই প্রশ্ন তুলে দিলেন সিপিএমের বাঙালি নেতারা।
বাংলা থেকে রাজ্যসভার পঞ্চম আসনে সীতারাম ইয়েচুরিকে এ বার প্রার্থী করতে চেয়েছিল আলিমুদ্দিন স্ট্রিট। কিন্তু পলিটব্যুরোয় দলের প্রাক্তন সাধারণ সম্পাদক কারাট তাঁর সহযোগীদের নিয়ে সে প্রস্তাবে জল ঢেলে দিয়েছেন। কংগ্রেসের সঙ্গে জোট-রক্ষার্থে শেষ পর্যন্ত কলকাতার প্রাক্তন মেয়র ও আইনজীবী বিকাশরঞ্জন ভট্টাচার্যকে প্রার্থী করেছে সিপিএম। ইয়েচুরি দলের সাধারণ সম্পাদক, তাই তাঁর সংসদীয় ভূমিকায় যাওয়া উচিত নয়— এই যুক্তিই দেখিয়েছেন কারাটেরা। এর আগে ২০১৭ ও ২০১৮ সালে দু’বার কংগ্রেসের খোলা প্রস্তাব সত্ত্বেও ইয়েচুরিকে প্রার্থী করা হয়নি। কখনও বলা হয়েছে, সিপিএমের কেউ দু’বারের বেশি রাজ্যসভায় যান না। কখনও আপত্তি তোলা হয়েছে কংগ্রেসের সমর্থন নিতে। বঙ্গ ব্রিগেডের এ বার পাল্টা তোপ, অতীতের পুনারবৃত্তি বারবার করে চললে ‘তত্ত্ব-সর্বস্ব পার্টি’ হয়েই থেকে যেতে হবে!
রাজ্যসভার মনোনয়ন-পর্ব মিটে যাওয়ার পরে রাজধানী শহরে বসেছিল সিপিএমের পলিটব্যুরোর বৈঠক। করোনো মোকাবিলায় ব্যস্ত থাকায় কেরলের মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন অবশ্য বৈঠকে যাননি। ইয়েচুরিকে প্রার্থী করার প্রস্তাব খারিজ হয়েছিল পলিটব্যুরোর উপস্থিত সদস্যদের নিয়ে ডাকা বৈঠকে। পূর্ণাঙ্গ বৈঠকে আনুষ্ঠানিক ভাবে রাজ্যসভার দলীয় প্রার্থীর প্রসঙ্গ তাই উঠেছিল। দলীয় সূত্রের খবর, পলিটব্যুরোর অন্তত চার জন বাঙালি নেতা মুখ খোলেন ইয়েচুরির হয়ে। তাঁদের যুক্তি, নরেন্দ্র মোদী-অমিত শাহদের জমানার প্রথম দিকে রাজ্যসভায় কার্যত বিরোধী নেতার ভূমিকা পালন করছিলেন ইয়েচুরিই। এই কঠিন সময়ে বামেদের কণ্ঠস্বর হিসেবে তাঁকে প্রয়োজন ছিল। রাজ্যসভায় গেলে তিনি সাধারণ সম্পাদকের কাজ করতে পারবেন না, এমন ধারণার এখন আর কোনও বাস্তব ভিত্তি নেই বলে সওয়াল করেন তাঁরা।
কারাট শিবিরের তরফে বলা হয়, ইএমএস নাম্বুদ্রিপাদের মতো নেতা সংসদীয় রাজনীতি থেকে সরে এসেই দলের শীর্ষ পদে বসেছিলেন। কমিউনিস্ট পার্টিতে এটাই রীতি। বঙ্গ শিবির আবার পাল্টা উদাহরণ দেয়, জ্যোতি বসু অতীতে বাংলায় অবিভক্ত কমিউনিস্ট পার্টির রাজ্য সম্পাদক আর বিরোধী দলনেতার দায়িত্ব একসঙ্গে সামলেছিলেন। সাম্প্রতিক কালে সূর্যকান্ত মিশ্রকেও একই ভূমিকায় দেখা গিয়েছে।
এই বিতর্কে ইতি টানতে পলিটব্যুরোর একাংশের প্রস্তাব, সম্পাদকেরা ভোটে লড়তে পারবেন না— এটা তা হলে লিখিত নিয়ম করে দেওয়া হোক। নইলে আবার প্রস্তাব আসবে, আবার নানা বিতর্ক হবে! তবে গোটা পর্ব দেখে ইয়েচুরি-ঘনিষ্ঠ এক নেতার আক্ষেপ, ‘‘বাংলার নেতারা এই লড়াইটা করতে আরও একটু আগে তৎপর হলে হয়তো পরিস্থিতি বদলাতো!’’