Manipur Violence

‘আমরা স্তম্ভিত ভিডিয়ো দেখে’! বললেন দু’দশক আগে ‘বিবস্ত্র প্রতিবাদে’ শামিল মণিপুরের জননীরা

২০০৪ সালের ১৫ জুলাই ১২ মহিলার ওই অভিনব প্রতিবাদ শিরোনাম হয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। তাঁরা পরিচিতি হয়েছিলেন ‘মণিপুরের জননী’ নামে।

Advertisement

আনন্দবাজার অনলাইন ডেস্ক

ইম্ফল শেষ আপডেট: ২৭ জুলাই ২০২৩ ১৭:১৩
Share:

সে দিনের প্রতিবাদী ‘মণিপুরের জননী’রা আবার প্রকাশ্যে এলেন। — ফাইল চিত্র।

দু’দশক আগে মণিপুরের মাটিতে বিবস্ত্র হয়েছিলেন তাঁরাও। তবে স্বেচ্ছায়। থাংজম মনোরমা গণধর্ষণ এবং হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সমবেত হয়েছিলেন অসম রাইফেলসের সদর দফতর কাংলা ফোর্টের সামনে। সে দিন মণিপুরের ওই ১২ জন মহিলার গায়ে লজ্জা নিবারণের জন্য জড়ানো ছিল বিশাল একটি সাদা কাপড়। তাতে ইংরেজিতে লেখা ছিল, ‘ভারতীয় সেনা এসো, আমাদের ধর্ষণ করো’।

Advertisement

মণিপুরের সাম্প্রতিক ধারাবাহিক গোষ্ঠীহিংসা এবং নারী নির্যাতনের ঘটনার আবহে আবার প্রকাশ্যে এলেন সেই ১২ জন নারী। জানালেন, থৌবল জেলার সীমানায় দুই জনজাতি মহিলাকে বিবস্ত্র করে হাঁটানোর ওই ২৬ সেকেন্ডের ভিডিয়ো (যার সত্যতা আন্দবাজার অনলাইন যাচাই করেনি) দেখে তাঁরা স্তম্ভিত। সে দিনের প্রতিবাদ আন্দোলনের অন্যতম মুখ জ্ঞানেশ্বরীর বয়স এখন ৭০ পেরিয়ে গিয়েছে। বৃহস্পতিবার তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে মণিপুরে এখন যুদ্ধ পরিস্থিতি চলছে!’’

২০০৪ সালের ১৫ জুলাই ১২ মহিলার ওই অভিনব প্রতিবাদের ঘটনা শিরোনাম হয়েছিল আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমে। সশস্ত্র বাহিনীর বিশেষ ক্ষমতা আইন (আর্মড ফোর্সেস স্পেশাল পাওয়ারস অ্যাক্ট বা আফস্পা) এবং উপদ্রুত এলাকা আইন (ডিস্টার্বড এরিয়া অ্যাক্ট) প্রত্যাহারের দাবিতে উত্তাল হয়ে উঠেছিল মণিপুর-সহ উত্তর-পূর্বাঞ্চলের নানা রাজ্য। আর সেই বিবস্ত্র প্রতিবাদে শামিল ১২ জন আমজনতার কাছে পরিচিত হয়েছিলেন ‘মণিপুরের জননী’ নামে।

Advertisement

কেন তাঁরা এমন বিবস্ত্র প্রতিবাদে যোগ দিয়েছিলেন?

২০০৪-এর ১১ জুলাই অসম রাইফেলসের এক দল জওয়ান জঙ্গি সন্দেহে ৩২ বছরের মহিলা মনোরমাকে তাঁর বাড়ি থেকে গ্রেফতার করেছিল। পরের দিন বাড়ি থেকে তিন কিলোমিটার দূরে তাঁর বুলেটবিদ্ধ, ক্ষতবিক্ষত দেহ পড়ে থাকতে দেখা যায়। অভিযোগ ওঠে, তাঁকে প্রবল অত্যাচার এবং ধর্ষণের পর গুলিতে ঝাঁঝরা করে দেওয়া হয়েছে। ওই ঘটনার প্রতিবাদে সে বছরের ১৫ জুলাই মণিপুরের কাংলা দুর্গে অসম রাইফেলসের সদর দফতরের সামনে সম্পূর্ণ নগ্ন হয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ১২ জন মহিলা। গোটা দেশে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছিল সে দিন। তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহকে প্রতিশ্রুতি দিতে হয়েছিল, সংশোধন করে আফস্পাকে আরও মানবিক রূপ দেওয়া হবে।

কিন্তু এখনও দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চল থেকে আফস্পা পরোপুরি প্রত্যাহৃত না হওয়ায় হতাশা প্রকাশ করেছেন মণিপুরের আর এক ‘জননী’ রমাণি। সেই সঙ্গে গত তিন মাসের গোষ্ঠীহিংসায় নারীদের উপর বার বার অত্যাচারের ঘটনা নাড়িয়ে দিয়েছে ৯০-এর কোঠায় পা রাখা এই মহিলাকে। তিনি বলেন, ‘‘দু’পক্ষই মহিলাদের উপর নির্মম অত্যাচার চালাচ্ছে। ১৯ বছর আগে আমরা নারী অধিকারের পক্ষে দাঁড়িয়েছিলাম। আমরা হতবাক। আমরা সরকারকে অনুরোধ করব নারীদের বিরুদ্ধে অপরাধ সম্পর্কিত সব অভিযোগ খতিয়ে দেখতে।’’ সেই সঙ্গে তাঁর আক্ষেপ, ‘‘মনে ইচ্ছা থাকলেও বয়সের কারণে আর আজ আমাদের পক্ষে রাস্তায় নেমে প্রতিবাদে শামিল হওয়া সম্ভব নয়।’’

আনন্দবাজার অনলাইন এখন

হোয়াট্‌সঅ্যাপেও

ফলো করুন
অন্য মাধ্যমগুলি:
আরও পড়ুন
Advertisement