বুধবার, দীপোৎসব। প্রাক-দীপাবলির আলোয় উজ্জ্বল অযোধ্যা। ছবি: প্রেমাংশু চৌধুরী।
তেল পুড়বে ৬১ হাজার লিটার।
প্রদীপ জ্বলবে ২৫ লক্ষ।
সরযূ নদীর ঘাটে একসঙ্গে ১১০০ জন আরতি করবেন।
তৈরি হবে নতুন নতুন গিনেস রেকর্ড।
রামমন্দির উদ্বোধনের পরে বুধবারই প্রথম অযোধ্যায় দীপোৎসব। দু’সপ্তাহ পরে উত্তরপ্রদেশের ন’টি বিধানসভা উপনির্বাচনে যোগী আদিত্যনাথের ‘অগ্নিপরীক্ষা’। সেই অগ্নিপরীক্ষার আগে বুধবারের দীপোৎসবকে কেন্দ্র করে ফের রামমন্দির ঘিরে আবেগ তৈরির চেষ্টা করছেন উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রী। উত্তরপ্রদেশে নিজের শাসনকে ‘মঙ্গলকারী রাজত্ব’ বলে প্রচার শুরু করেছেন তিনি।
লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী তড়িঘড়ি অসম্পূর্ণ অবস্থাতেই রামমন্দির উদ্বোধন করেছিলেন। তবে তার সুফল বিজেপি উত্তরপ্রদেশে পায়নি। লোকসভা ভোটে বিজেপির আসন সংখ্যা বৃদ্ধির বদলে তা এক ধাক্কায় ৬২ থেকে ৩৩ আসনে নেমে পড়েছিল। এমনকি, অযোধ্যা যে লোকসভা কেন্দ্রের আওতায়, সেই ফৈজাবাদেও বিজেপি হেরে গিয়েছে। অখিলেশ যাদবের সমাজবাদী পার্টির আসন সংখ্যা ৫টি থেকে বেড়ে ৩৩টি হয়েছিল। তার দায় বিজেপির কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব উত্তরপ্রদেশের মুখ্যমন্ত্রীর ঘাড়েই চাপিয়ে দিয়েছে। আগামী ১৩ নভেম্বর উত্তরপ্রদেশের ন’টি বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন তাই যোগীর কাছে ‘অগ্নিপরীক্ষা’। কারণ, এই উপনির্বাচনেও বিজেপির খারাপ ফল অব্যাহত থাকলে ২০২৭-এর উত্তরপ্রদেশের বিধানসভা নির্বাচনের আগে যোগীকে লখনউয়ের তখত থেকে সরানোর দাবি উঠতে পারে।
যোগী আদিত্যনাথ তাই অযোধ্যার দীপোৎসব ঘিরে নতুন চ্যালেঞ্জ নিয়েছেন। রামায়ণের কাহিনী অনুযায়ী, রাম বনবাসের পরে দীপাবলির সময়ে অযোধ্যায় ফিরে এসেছিলেন। ২০১৫ থেকে সেই দীপাবলির আগের দিন অযোধ্যায় দীপোৎসব শুরু হয়েছে। গত বছর ২১ লক্ষ প্রদীপ একসঙ্গে জ্বালানো হয়েছিল। এ বার যোগী গিনেস বুকে নতুন রেকর্ড স্থাপন করতে চান। বুধবারের দীপোৎসব ঘিরে অযোধ্যায় এখন যুদ্ধকালীন পরিস্থিতি। গোটা অযোধ্যা নরেন্দ্র মোদী এবংও যোগী আদিত্যনাথের ছবিতে মুড়ে দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে যোগী সরকারের সাফল্যের প্রচার চলছে। মোদীর ‘লোকাল ফর ভোকাল’ নীতি মেনে অযোধ্যা মন্দিরে সব রকম চিনা পণ্য নিষিদ্ধ করেছে শ্রীরামজন্মভূমি তীর্থক্ষেত্র ট্রাস্ট। জ্বলবে শুধু মাটির প্রদীপ।
অযোধ্যার ডিভিশনাল কমিশনার গৌরব দয়াল বলেন, ‘‘বুধবারের দীপোৎসবে ২৫ লক্ষ প্রদীপ একসঙ্গে জ্বালানো হবে। সরযূর ঘাটে সিঁড়ির ধাপে ধাপে সব প্রদীপ সাজানো হয়ে গিয়েছে। গিনেস কর্তারা আগেই কত প্রদীপ বসানো হয়েছে, তা গুণে নেবেন। তারপরে অবধ বিশ্ববিদ্যালয়ের ২৫ হাজার ছাত্রছাত্রী একসঙ্গে সব প্রদীপ জ্বালাবেন। ড্রোন থেকে সেই ছবি তোলা হবে। এ বার অষ্টম দীপোৎসব। একসঙ্গে ১১০০ জন এই প্রথম আরতি করবেন। মালয়েশিয়া, কাম্বোডিয়া, নেপাল, ইন্দোনেশিয়া, মায়ানমার, তাইল্যান্ডের শিল্পীরা রামলীলা করবেন।”
তবে প্রদীপের তলায় অন্ধকারের মতো দীপোৎসবের আয়োজনের পিছনে অযোধ্যার মানুষের ক্ষোভ, অসন্তোষ জমে রয়েছে। ২২ জানুয়ারি রামমন্দিরের প্রাণপ্রতিষ্ঠা হয়েছিল। কিন্তু এখনও মন্দিরের সামনের অংশ ছাড়া প্রায় সব কাজই বাকি। মন্দিরের দু’পাশে, পিছনে ক্রেন, পাথর, কংক্রিটের কর্মযজ্ঞ চলছে। কবে সব কাজ শেষ হবে, এখনও হিসেব নেই। তিন তলা মন্দিরের তৃতীয় তলের কাজ এখনও শুরুই হয়নি। অযোধ্যার ব্যবসায়ীরা কটাক্ষ করে বলছেন, ২০২৯-এর লোকসভা নির্বাচনের আগে নরেন্দ্র মোদী আরও এক বার সম্পূর্ণ মন্দিরের উদ্বোধন করতে পারেন। প্রাথমিক উন্মাদনা কেটে যাওয়ার পরে অযোধ্যায় তীর্থযাত্রীদের ভিড়ও কমতে শুরু করেছে। তার ফলে হোটেল মালিক থেকে ছোটখাটো দোকানদারদের হতাশা বেড়েছে। দীপোৎসব করে কি ফের অযোধ্যায় তীর্থযাত্রী, পর্যটকদের ভিড় বাড়াতে পারবেন যোগী আদিত্যনাথ?
সরকারি সূত্রের বক্তব্য, অযোধ্যায় আগের তুলনায় ভিড় কমলেও গোটা উত্তরপ্রদেশে পর্যটক টানায় এখনও অযোধ্যাই পয়লা নম্বরে। চলতি বছরের প্রথম ছয় মাসে উত্তরপ্রদেশে ৩৩ কোটি পর্যটক ও তীর্থযাত্রী এসেছিলেন। তাঁদের মধ্যে ১১ কোটি এসেছিলেন অযোধ্যায়। ভিড় টানায় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর লোকসভা কেন্দ্র বারাণসীকেও পিছনে ফেলে দিয়েছে অযোধ্যা। বারাণসীতে এই সময়কালে ৪.৬১ কোটি পর্যটক-তীর্থযাত্রী গিয়েছিলেন। আগরার তাজমহল দেখতে গিয়েছেন মাত্র ৬৯.৮ লক্ষ জন।
তবু উপনির্বাচন নিয়ে নিশ্চিত থাকতে পারছেন না বিজেপি নেতৃত্ব। ১৩ অক্টোবর ভোটগ্রহণ। অযোধ্যার মধ্যে মিল্কিপুর বিধানসভা কেন্দ্রের উপনির্বাচন এখনই হচ্ছে না ঠিকই। কিন্তু বাকি নয় আসনের মধ্যে ২০২২-এর বিধানসভায় সমাজবাদী পার্টি ৪টি আসন জিতেছিল। সে সময়ে অখিলেশ যাদবের শরিক আরএলডি ১টি আসন জিতেছিল। বিজেপি মাত্র তিনটি আসন জিততে পেরেছিল। পরীক্ষা যে কঠিন, তা যোগী আদিত্যনাথ বুঝতে পারছেন। আর তাই গোটা উত্তরপ্রদেশের পুলিশ, প্রশাসনকে অযোধ্যায় নামিয়ে দিয়ে যোগী চার দিনের দীপোৎসবকেবাজি ধরছেন।