এটিএমে মিলছে ২ হাজার টাকার নতুন নোট। শুক্রবার করিমগঞ্জে উত্তম মুহুরীর তোলা ছবি।
দু’দিন ধরে ছবিটা বদলাতে শুরু করেছে বরাক উপত্যকায়। ব্যাঙ্কের কাউন্টার, এটিএমে আগের মতো ভিড় হচ্ছে না। এটিএমে টাকা ঢোকাতে দেখেও কেউ আর উঁকিঝুঁকি করছেন না।
তবে ছোট নোটের চাহিদা মিটে গিয়েছে, এমনটা মোটেও নয়। বরং ছোট নোটের তীব্র চাহিদার জন্যই মানুষ ব্যাঙ্ক-ডাকঘরের কাউন্টারে লাইনে দাঁড়াচ্ছেন না। যাচ্ছেন না এটিএমের দিকেও। কারণ ছোট নোট কোথাও নেই। বাতিল ৫০০, ১ হাজার বদলানো বা টাকা তোলা, সব ক্ষেত্রে মিলছে কেবল ২ হাজার টাকার নোট। তাতে সাধারণ মানুষের সমস্যা মিটছে না। বরং সময় যত বাড়ছে, সঙ্কট তীব্রতর হচ্ছে।
স্টেট ব্যাঙ্ক, ইউনাইটেড ব্যাঙ্ক— দুই চেস্ট ব্যাঙ্কেরই বক্তব্য, ৫০০ টাকার নোট না আসা পর্যন্ত অবস্থার পরিবর্তন আশা করা যায় না। কিন্তু ওই নোট কবে আসবে, কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
উপত্যকাবাসীদের একাংশের বক্তব্য, নোট নিয়ে মুশকিল বাড়তে থাকায় প্রধানমন্ত্রীর কালোটাকা উদ্ধার অভিযানের প্রতি মানুষের সমর্থনে চিড় ধরছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি নানা কথা বললেও সাধারণ মানুষ এত দিন সে সবে গুরুত্ব দেননি। আশা করেছিলেন, কিছু দিনের মধ্যে নতুন টাকা হাতে হাতে ঘুরবে। কিন্তু অপেক্ষার পরও যাঁরা সঙ্কট থেকে বেরোতে না পারছেন না, নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসে টান পড়ছে, তাঁরা সমালোচনা করতে ছাড়ছেন না।
এ ভাবে জনগণকে দুর্ভোগে ঠেলে দেওয়া হল কেন, জানতে চেয়ে শিলচরে আজ বিক্ষোভ দেখায় এসইউসিআই। মিছিল করে তাঁরা জেলাশাসকের অফিসের সামনে স্লোগান দেন, বক্তব্য রাখেন। সংগঠনের জেলা সম্পাদক শ্যামদেও কুর্মি বলেন, কালোটাকা উদ্ধার বা নোট বাতিলের সিদ্ধান্তের বিরোধী তাঁরা নন। কিন্তু উপযুক্ত বিকল্প ব্যবস্থা না করে নোট বাতিল করাকে তিনি তুঘলকি সিদ্ধান্ত, সস্তা চমক বলে মন্তব্য করেন। তাঁর কথায়, ‘‘ছোট নোটের অভাবে ব্যবসা বন্ধ হয়ে পড়েছে, দিনমজুররা মজুরি পাচ্ছেন না। কৃষকরা ফসল বিক্রি করতে পারছেন না। অথচ বিদেশি ব্যাঙ্কে জমা টাকা নিয়ে সরকার নীরব।’’ তিনি সঙ্কট নিরসনে দ্রুত ব্যবস্থা গ্রহণের অনুরোধ জানান। বিক্ষোভে নেতৃত্ব দেন মন্মথ নাথ, আশু চৌধুরী, প্রশান্ত ভট্টাচার্য, হিল্লোল ভট্টাচার্য ও স্বাগতা ভট্টাচার্য। ছোট নোট নিয়ে যে সাধারণ মানুষ যে সমস্যায় পড়েছে তা স্বীকার করছেন ডাক বিভাগ কর্তৃপক্ষও। তাঁদের অভিযোগ, প্রতি দিন ব্যাঙ্কে গিয়ে তাঁদের হত্যে দিয়ে পড়ে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু ছোট নোট মিলছে না। ফলে ২ হাজার টাকার নোটই দিতে হচ্ছে। এ নিয়ে প্রতি দিন মানুষের অসন্তোষের মুখে পড়তে হচ্ছে তাঁদের। ডাক বিভাগের আরেক সমস্যা, এনরেগার কাজের টাকা তাঁরা বিলি করতে পারছেন না। জবকার্ডধারীদের টাকা ডাকঘরের মাধ্যমে মিটিয়ে দেওয়ার কথা। কিন্তু তাঁদের কারও মজুরি ২ হাজার টাকার উপরে নয়। ফলে তাঁদের টাকা আটকে রাখা ছাড়া কোনও উপায় নেই।
স্টেট ব্যাঙ্কের রিজিওনাল ম্যানেজার প্রদীপকুমার পালের দাবি, প্রচুর ছোট নোট এই কয়েক দিনে ব্যাঙ্ক ও ডাকঘরের মাধ্যমে বিতরণ করা হয়েছে। শুধু ১০০ টাকার নোট নয়, ২০ ও ৫০ টাকার নোটও কম দেওয়া হয়নি। ফলে ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ টাকা সংগ্রহ করেছেন। সে জন্যই ভিড় কমেছে। তিনি জানান, ৫০০ টাকার নোট শিলচরে আসতে আরও কিছুদিন সময় লাগবে। কারণ এখনও তা রিজার্ভ ব্যাঙ্কের গুয়াহাটি শাখাতেই আসেনি। তাঁর কথায়, ‘‘টাকা নিয়ে ঘরে রেখে দিলে সমস্যা মিটবে না। বাজারে টাকা ঘুরলে সঙ্কট অনেকটাই কেটে যাবে।’’
এ দিকে, নোট বাতিলের পর সাম্প্রতিক ঘটনা পরম্পরার দিকে তাকিয়ে অসমের সব চা বাগানে এটিএম বসানোর নির্দেশ দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল।