বেঙ্কাইয়া নাইডু।ফাইল চিত্র।
চ্যানেল বন্ধের নির্দেশ দিয়ে গায়ে লেগে যাওয়া জরুরি অবস্থার তকমা ঝেড়ে ফেলতে এ বারে আসরে নামল মোদী সরকার।
জানুয়ারি মাসে পঠানকোটে জঙ্গি হামলার সময় স্পর্শকাতর তথ্য ফাঁস করার অভিযোগে ‘এনডিটিভি ইন্ডিয়া’ চ্যানেলটির সম্প্রচার এক দিনের জন্য বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছে মোদী সরকারের তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রক। তার পর থেকেই সাংবাদিককুল থেকে বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলি একজোটে ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। নরেন্দ্র মোদীকে বিঁধে দেশে জরুরি অবস্থা জারি হচ্ছে বলে আসরে নেমে পড়েছে তারা। এই চাপের মুখেই আজ সাফাই দিতে নেমে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু বোঝানোর চেষ্টা করলেন, জরুরি অবস্থার সঙ্গে এর কোনও মিলই নেই। সরকারের বিরোধিতা নিছক রাজনীতি ছাড়া আর কিছুই নয়।
কাল থেকেই রাজনীতিক দলগুলি চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ নিয়ে মোদী সরকারের সমালোচনায় মুখর হয়েছে। আজ প্রাক্তন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ও কংগ্রেস নেতা মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘সম্প্রচার বন্ধ করে সরকার শুধু মাত্র এনডিটিভি-কে বার্তা দিতে চাইছে না। এই বার্তা সব সংবাদমাধ্যমকেই- হয় সরকারের অনুসারে চলো নয়তো চলতেই দেওয়া হবে না।’’ বিচারপতি মার্কণ্ডেয় কাটজুর মতে, যে ভাবে এনডিটিভি-র সম্প্রচার বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেটি পুরোপুরি বেআইনি। কারণ, কেবল টিভি নেটওয়ার্ক আইনে বলা রয়েছে, কোনও জঙ্গি মোকাবিলা চলার সময় সরাসরি সম্প্রচার করা যাবে না। সেনা যখন জঙ্গিদের মোকাবিলা করছিল, তার কোনও সরাসরি সম্প্রচার এনডিটিভি করেনি।
আজ লখনউতে মুলায়ম সিংহ যাদবের জনতা পরিবারের মহাজোট মঞ্চেই লালু প্রসাদ চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধের প্রসঙ্গ তুলে অভিযোগ করেন, নরেন্দ্র মোদী ফের জরুরি অবস্থা ফিরিয়ে আনছেন। পরে সাংবাদিক সম্মেলন করে মায়াবতীও বলেন, সংবাদমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করে মোদী সরকার নিজের ব্যর্থতা ঢাকতে চাইছে। গণতন্ত্র খতম করে তানাশাহি প্রতিষ্ঠা করতে চাইছেন প্রধানমন্ত্রী। চার দিক থেকে চাপের মুখে পড়েই আজ চেন্নাইয়ে এই নিয়ে মুখ খুলতে বাধ্য হন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বেঙ্কাইয়া নাইডু। তাঁর মতে, যে ভাবে সিদ্ধান্ত ঘোষণার এক দিন পর থেকে সমালোচনার ঝড় বইতে শুরু করেছে, সেটি রাজনৈতিক উদ্দশ্যে প্রণোদিত পদক্ষেপ ছাড়া আর কিছুই নয়।
চ্যানেলের সম্প্রচার বন্ধ করে মুখে দেশের নিরাপত্তার বিষয়টি জুড়ে আবেগ কাড়তে চেয়েছিল বিজেপি। কিন্তু এখন সরকারের গায়ে যে ভাবে জরুরি অবস্থার তকমা সেঁটে যাচ্ছে, সেটি ঝেড়ে ফেলাই সরকারের অগ্রাধিকার। সে কারণে কংগ্রেসের ঘাড়েই দায় চাপিয়ে বেঙ্কাইয়া আজ বলেন, জরুরি অবস্থার সময় দেশের নিরাপত্তার স্বার্থ দেখা হয়নি। একজন ব্যক্তির স্বার্থ জড়িয়ে ছিল। ইস্তফা না দিয়ে সেই ব্যক্তি গোটা সংবাদমাধ্যমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। বিরোধী নেতাদের জেলে পাঠান। সংবিধান সংশোধন করেন। বিচারকদের অবজ্ঞা করেন।
সম্প্রচার বন্ধের নজির যে এই প্রথম নয়, সেটি বোঝাতে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী বলেন, ইউপিএ আমলে ২১ বার চ্যানেল বন্ধ হয়েছিল। কোনও চ্যানেল এক মাসও বন্ধ রাখা হয়েছিল। এ বারে যে চ্যানেলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সেটিও ২৬/১১-এর ঘটনার পর ইউপিএ আমলে তৈরি নির্দেশিকার ভিত্তিতে। এর জবাবে কংগ্রেসের মণীশ তিওয়ারি বলেন, ‘‘ইউপিএ আমলে মূলত মনোরঞ্জনের চ্যানেল বন্ধ করা হয়েছিল। খবরের চ্যানেলে সে ভাবে হাত দেওয়া হয়নি। আমাদের কাছেও খবরের চ্যানেলে নিষেধাজ্ঞা জারির সুপারিশ এসেছিল। কিন্তু খবর পরিবেশনের স্বাতন্ত্র বজায় রাখা হয়েছিল।’’ বেঙ্কাইয়া অবশ্য বলেন, ‘‘মনোরঞ্জন চ্যানেলে মাঝরাতে অশ্লীলতা প্রচারের দায়ে সম্প্রচার বন্ধ আর দেশের নাগরিক-সেনার নিরাপত্তা নিয়ে ছিনিমিনি খেলা- কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ সেটি দেশবাসীই স্থির করবে।’’
আরও খবর...