জ্বলছে তিনসুকিয়ার বাঘজানের সেই কূপ। —ছবি পিটিআই।
গত ২৭ মে-র বিস্ফোরণের পর থেকে আজও জ্বলছে বাঘজানের গ্যাস কূপ। আগুন নেভানোর প্রথম চেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। সেই সঙ্গে জাতীয় গ্রিন ট্রাইবুনাল গোটা ঘটনায় অয়েল ইন্ডিয়ার বিরুদ্ধে গাফলতির অভিযোগ তুলেছে। ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার সমীক্ষাতেও বলা হয়েছে এত দিন ধরে টানা গ্যাস ও রাসায়নিক জলে মেশায় সুদূরপ্রসারী ও ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে আশপাশের জলজ প্রাণী ও পরিবেশের।
এরই মধ্যে আবাঙজানের ওই কূপ থেকে ২০০ মিটার দূরে নতুন করে আগুন জ্বলে ওঠে৷ এতে আতঙ্ক ছড়ায়৷ এলাকাবাসী জানান, প্রখর রোদে মাটিতে জমে থাকা তেলে আগুন ধরে যায়। অয়েল ইন্ডিয়া জমে থাকা তেল পড়ে থাকার কথা অস্বীকার করেছে। তাদের দাবি, দু’মাস আগেই পড়ে থাকা তেল তুলে নেওয়া হয়েছে৷ গ্রামবাসীরাই জঙ্গল সাফ করতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে৷
বাঘজানের জ্বলন্ত কূপ থেকে এখনও নাগাড়ে গ্যাস বেরোচ্ছে। গ্রিন ট্রাইবুনালের কমিটি জানিয়েছে, এই রকম বিপজ্জনক কাজে যে ধরনের পরিকাঠামো, সাবধানতা ও রূপায়ণ দরকার, অয়েল ইন্ডিয়া তার ব্যবস্থা করেনি। এমনি ড্রিলিং চালানোর জন্য প্রয়োজনীয় আগাম অনুমতিও নেয়নি তারা।
অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি বি পি কটক, কেন্দ্রীয় দূষণ নিয়ন্ত্রণ বোর্ডের সদস্য, সিএসআইআরের প্রতিনিধি, জীব বৈচিত্র্য বোর্ড, ওএনসিজির প্রাক্তন কর্তাদের নিয়ে তৈরি কমিটি ৪০৬ পাতার রিপোর্ট জমা দিয়েছে। বলা হয়েছে, কূপগুলিতে কোনও দ্বিতীয় স্তরের নিরাপত্তা বিকল্প নেই। পরিকল্পনা ও রূপায়ণে অনেক খামতি রয়েছে।
এ দিকে ওয়াইল্ডলাইফ ইনস্টিটিউট অব ইন্ডিয়ার ১৭৮ পাতার রিপোর্ট বলছে, বিস্ফোরণে অনেক গাঙ্গেয় শুশুক মারা গিয়েছে। শুশুক বসতির সুদূরপ্রসারী ক্ষতি হয়েছে। মাগুরি মতাপুং বিলে মাছেদের শরীরে মিলেছে স্বাভাবিক অপেক্ষা প্রায় ১০০ গুণ পর্যন্ত বেশি পলিঅ্যারোম্যাটিক হাইড্রোকার্বন।
দূষিত জল ও রাসায়নিক মাটি দিয়ে ঢুকে ভূগর্ভস্থ জলকেও দূষিত করবে। আগুনে সরাসরি পুড়ে গিয়েছে প্রায় ৭০ হেক্টর জমি, তৃণভূমি ও ঝোপ-জলা। কূপ থেকে তেলের ধারা জলে মিশতে দেখা গিয়েছে। এলাকায় ডলফিনের সংখ্যা একেবারে কমে গিয়েছে। তেল ও গ্যাস নির্গমণ, আগুনের শিখা ও তীব্র শব্দের জেরে গোটা অঞ্চল পাখিহীন হয়ে গিয়েছে। জলে অক্সিজেন কমায় আশপাশের সব জলাভূমি ও হ্রদে মাছ মারা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, দেশে ডিব্রু-শইখোয়া এলাকার মতো জীববৈচিত্র্য বেশি নেই। তার অপূরণীয় ক্ষতি হয়েছে।
ওয়াইল্ডলাইফ ইন্টটিটিউট অব ইন্ডিয়া কেন্দ্রীয় বন ও পরিবেশ মন্ত্রকেরও সমালোচনা করে বলেছে, ডিব্রু শইখোয়া জাতীয় উদ্যান তো বটেই আশপাশে থাকা ভেরজান, পদুমণি ও বরাজান অভয়ারণ্য, পোবা সংরক্ষিত অরণ্য, কোবো চাপড়ি, অমরপুর চাপড়ি, মাগুরি-মতাপুং বিল, ডিহিং পাটকাই অভয়ারণ্যের লাগোয়া অঞ্চলে এই ধরনের কর্মকাণ্ড চলতে দেওয়াই ঠিক হয়নি।
আশপাশের মানুষের পক্ষেও বিষাক্ত হয়ে উঠেছে পরিবেশ। কারণ সাত সপ্তাহ ধরে গ্যাস বেরোতে থাকায় বাতাসে নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইড, সালফার ডাই-অক্সাইড, কার্বন মনোক্সাইড, ফরমালডিহাইডের মাত্রা অত্যন্ত বেড়ে গিয়েছে।