গম্বুজের মাথায় করসেবকরা। ভাঙচুর চলছে বাবরি মসজিদে। —ফাইল চিত্র।
বাবরি মসজিদ ধ্বংস ইসলাম-বিরোধিতা নয়। ১৯৯২-এর ৬ ডিসেম্বরের সিকি শতাব্দী পরে এমনই ব্যাখ্যা দিলেন আরএসএসের সাধারণ সম্পাদক সুরেশ ভাইয়াজি জোশী। তাঁর মতে, ‘‘বাবরি ধাঁচা পরাধীনতা ও গোলামির প্রতীক। তাকে ভাঙার অর্থ মুসলিম বিরোধিতা নয়।’’ একই যুক্তিতে তিনি মনে করেন দিল্লির ইন্ডিয়া গেটের মতো ব্রিটিশ-স্মারকগুলিরও কোনও প্রাসঙ্গিকতা নেই।
অযোধ্যায় করসেবা করতে গিয়ে ১৯৯০-এ প্রাণ হারিয়েছিলেন কলকাতার দুই যুবক রাম ও শরদ কোঠারি। শুক্রবার তাঁদের নামে ‘প্রতিভা সম্মান’ দেওয়ার এক অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন আরএসএস নেতা। তিনি বলেন, ‘‘বাবরি ধাঁচা ইসলামের প্রতীক ছিল না। বাবরের মতো অত্যাচারী হামলাকারীর স্মারক ছিল সেটি। বাবরি ধ্বংস আসলে পরাধীনতার বিরুদ্ধে আন্দোলন।’’ তাঁর যুক্তি, সেই আন্দোলনে সামিল হতে গোটা দেশ থেকে লক্ষ লক্ষ করসেবক এসেছিলেন। কিন্তু অন্য কোনও ধর্মস্থানে হামলা হয়নি। এতেই স্পষ্ট যে ওই আন্দোলন ছিল নির্দিষ্ট লক্ষ্যে।
আরএসএসের শীর্ষ নেতার মুখে এই ব্যাখ্যা শুনে স্বাভাবিক কারণেই জল্পনা শুরু হয়েছে। ২০১৯-এর লোকসভা ভোটের আগে আরএসএস নেতা মুসলিম সমাজের কাছে কোনও বার্তা দিলেন কি না, উঠছে সে প্রশ্নও।
ইতিহাসবিদ ও তৃণমূল সাংসদ সুগত বসু মনে করেন, ‘‘এটা আসলে আরএসএস-বিজেপির হিসেবি কৌশল।’’ তিনি বলেন, ‘‘দেশের জাতীয়তাবাদী সব নেতাই মনে করতেন ব্রিটিশ রাজশক্তি হল প্রভুত্বের প্রতীক। ব্রিটিশরাই আমাদের গোলাম করে রেখেছিলেন। অন্য কারও ক্ষেত্রে এই ধরনের গোলামির প্রশ্ন ওঠেনি।’’
সুগতবাবুর বক্তব্য, রবীন্দ্রনাথ বলেছেন ‘শক-হুন-দল পাঠান-মোগল এক দেহে হল লীন’। এটাই ভারত। তাই বাবরি মসজিদ ধ্বংসের পিছনে জাতীয়তাবাদী আবেগ তৈরি আসলে অপচেষ্টা। কারণ দেশজুড়ে এখন বিজেপির উগ্র হিন্দুত্ববাদের বিরুদ্ধে জনমত দানা বাঁধছে। তাই বাবরি মজসিদ ধ্বংসের কলঙ্কিত ইতিহাস যে মুসলিম বিরোধিতা নয়, আরএসএস-বিজেপিকে এটা বলতে হচ্ছে।
ভাইয়াজি জোশীর বক্তব্যের সমর্থনে বিজেপির সাধারণ সম্পাদক কৈলাস বিজয়বর্গীয় বলেন, ‘‘বাবরি ধাঁচাকে মসজিদ বলে আমরা ভাবি না। ওখানে দীর্ঘদিন কোনও উপাসনা হতো না। বাবরের অত্যাচারের স্মারক সে দিন ভাঙা হয়েছিল। এই ঘটনা মুসলিম বিরোধিতা নয়।’’ কিন্তু এত দিন পর এই ব্যাখ্যা কি দেশজুড়ে বিজেপি-বিরোধী শক্তির উত্থানের চাপে? কৈলাস বলেন, ‘‘হিন্দু সমাজ এক হলেই ষড়যন্ত্র হয়। বাবরির পরও মণ্ডল-কমণ্ডল রাজনীতি হয়েছে। এখন আবার দলিত, পিছড়ে, ওবিসি নানা ভাগে হিন্দু সমাজকে ভাগ করা হচ্ছে।’’