যোগগুরু রামদেব। —ফাইল চিত্র ।
পতঞ্জলি সংস্থার ‘অসত্য বিজ্ঞাপন’ মামলায় আদালতের নির্দেশ অমান্য করা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টের নিন্দার মুখে পড়লেন যোগগুরু রামদেব। যোগগুরুকে ‘ফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকার’ কথাও জানিয়েছে শীর্ষ আদালত। গত মাসে সংস্থার ‘অসত্য বিজ্ঞাপন’ নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে ‘নিঃশর্ত ক্ষমা’ চেয়েছিলেন পতঞ্জলির ম্যানেজিং ডিরেক্টর (এমডি) তথা যোগগুরু রামদেবের সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণ। তবে সেই ক্ষমা চাওয়া নিয়ে আদালত খুশি নয় বলেও জানিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট।
মঙ্গলবার পতঞ্জলির ‘অসত্য বিজ্ঞাপন’ মামলায় সশরীরে সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দেন রামদেব। সেখানেই শীর্ষ আদালতের ভৎসর্নার মুখে পড়তে হয় রামদেবকে। যদিও আদালতের নির্দেশ অমান্য নিয়ে আদালতে ক্ষমাও চান রামদেব। যোগগুরুর আইনজীবী হাত জোড় করে আদালতকে বলেন, ‘‘আমরা ক্ষমা চাইতে চাই এবং আদালত যা বলবে তা মানতে প্রস্তুত।’’ এর পরেই সুপ্রিম কোর্ট মন্তব্য করে, ‘‘ফল ভোগ করার জন্য তৈরি থাকুন।’’
গত মঙ্গলবারই পতঞ্জলির এই বিজ্ঞাপন সংক্রান্ত মামলায় রামদেব এবং তাঁর সহযোগী আচার্য বালকৃষ্ণকে তলব করেছিল শীর্ষ আদালত। আদালত অবমাননা সংক্রান্ত একটি অভিযোগের প্রেক্ষিতে রামদেবের সংস্থা পতঞ্জলিকে নোটিস দিয়ে কৈফিয়ত তলব করেছিল সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু সেই নোটিসের কোনও জবাব না মেলায় ক্ষুব্ধ হয় আদালত। মঙ্গলবার বিচারপতি হিমা কোহলি এবং বিচারপতি আহসানউদ্দিন আমান্নুলার বেঞ্চ রামদেব এবং বালকৃষ্ণকে আদালতে হাজিরা দেওয়ার নির্দেশ দেয়। জানায়, ২ এপ্রিল আদালতে হাজিরা দিতে হবে রামদেব এবং বালকৃষ্ণকে। এর পরেই সেই নির্দেশ মেনে মঙ্গলবার সুপ্রিম কোর্টে সশরীরে হাজিরা দিলেন যোগগুরু রামদেব।
গত বছরের নভেম্বরে পতঞ্জলিকে বিভিন্ন রোগের প্রতিকার হিসাবে নিজেদের ওষুধ সম্পর্কে ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ প্রচার করার বিষয়ে সতর্ক করেছিল শীর্ষ আদালত। জরিমানা হতে পারে বলেও মৌখিক ভাবে জানানো হয়েছিল। ফেব্রুয়ারি মাসে সেই মামলাতেই কেন্দ্রের সমালোচনা করে সুপ্রিম কোর্ট। মামলার শুনানি চলাকালীন সুপ্রিম কোর্টের পর্যবেক্ষণ ছিল, এই ধরনের বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে গোটা দেশকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে।
রামদেবের সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা করেছিল ইন্ডিয়ান মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন (আইএমএ)। আইএমএ-র অভিযোগ ছিল, পতঞ্জলির বেশ কয়েকটি বিজ্ঞাপনে অ্যালোপ্যাথি চিকিৎসা এবং চিকিৎসককে অসম্মান করা হয়েছে। বিজ্ঞাপনের মাধ্যমে সাধারণ জনগণকে বিভ্রান্ত করার অভিযোগও আনা হয়েছিল। অভিযোগ ছিল, কোভিড প্রতিরোধী না-হওয়া সত্ত্বেও শুধু করোনিল কিট বিক্রি করেই আড়াইশো কোটি টাকার বেশি মুনাফা করেছিল রামদেবের পতঞ্জলি। আর তার জন্য ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ বিজ্ঞাপনী প্রচার চালানো হয়েছিল বলে অভিযোগ ছিল আইএমএ-র। গত বছরের নভেম্বরে মামলাটির শুনানির সময় সুপ্রিম কোর্ট তার পর্যবেক্ষণে জানিয়েছিল, ‘বিভ্রান্তিকর এবং মিথ্যা’ বিজ্ঞাপনী প্রচার বন্ধ না করলে পতঞ্জলি আয়ুর্বেদ সংস্থাকে জরিমানার মুখে পড়তে হবে। ফেব্রুয়ারি মাসে শীর্ষ আদালত ‘পতঞ্জলি’কে সমস্ত বৈদ্যুতিন মাধ্যমে এবং সংবাদপত্রে সব ‘মিথ্যা’ বিজ্ঞাপন বন্ধ করার নির্দেশ দিয়েছিল। একই সঙ্গে ‘পতঞ্জলি’র বিজ্ঞাপন নিয়ে শীর্ষ আদালতের সমালোচনার মুখে পড়েছিল কেন্দ্রীয় সরকারও। গত ২৭ ফেব্রুয়ারির শুনানিতে শীর্ষ আদালতের মন্তব্য ছিল, ‘‘সরকার চোখ বন্ধ করে বসে আছে। এটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। সরকারকে অবিলম্বে ব্যবস্থা নিতে হবে।’’